ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১১ঃ ছন্দের উপাদান - ধ্বনি (বর্ণ,শব্দ)
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি দীপঙ্কর বেরা  মহাশয়কে।        
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
৮) ছন্দ কেন প্রয়োজন
৯) ছন্দ না জেনেও আমরা কীভাবে কবিতা লিখি
১০) ছন্দের গুরুত্ব ও উপাদান  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  ১১) ছন্দের উপাদান - ধ্বনি (বর্ণ,শব্দ)
------------------------------------------------------------------------------
ছন্দ শেখার ক্ষেত্রে প্রধান উপাদান হল ধ্বনি (বর্ণ ও শব্দ)। ছন্দ কানে শোনার বিষয়। তাকে চিনতে গিয়ে শুনতে হয় শব্দের মধ্যবর্তী ধ্বনিদের, বুঝতে হয় তাদের গুণগত রূপ, এবং সেই বিচারে আশ্রিত ধ্বনির উচ্চারণকে জানা আবশ্যক। অনেক ক্ষুদ্র শব্দের উচ্চারণেও শোনা হয় ধ্বনিগুচ্ছ। তাদের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় উচ্চারণ কার্যকর হচ্ছে এক ধ্বনির সাথে অন্য ধ্বনি জোড়া দিয়ে। আশ্রিত ধ্বনি বলা হয় প্রধান ধ্বনির সহযোগী ধ্বনিকে।

ধ্বনিঃ মানুষের ইচ্ছায়,তার গলা থেকে নিঃসৃত স্বর, বায়ুস্তরে শোনার মতো যে স্পন্দন তোলে, তাকে বলে 'ধ্বনি'।
যেমন- অ আ ই ঈ এ ঔ ক গ শ (ইত্যাদি) -এদের শুধুমাত্র উচ্চারণ টুকুই হল 'ধ্বনি'।
'ধ্বনি' আমরা কানে শুনি, চোখে দেখি না।
একমাত্র মানুষের কণ্ঠজাত ধ্বনিই হল 'ধ্বনি'।
'ধ্বনি'র রূপ নেই প্রতীক নেই।

বর্ণঃ 'ধ্বনি'র প্রতীক হল বর্ণ। অর্থাৎ 'বর্ণ' হল শ্রুতিগ্রাহ্য, রূপহীন ধ্বনির দৃষ্টিগ্রাহ্য চিত্র বা প্রতীক।
যেমন- অ আ ক গ শ এই বর্ণগুলি হল ধ্বনির লিখিত রূপ।
কানে শুনলে যা হয় ধ্বনি, চোখে দেখলে তা হয় 'বর্ণ'।

শব্দঃ 'শব্দ' হল অর্থযুক্ত 'ধ্বনিগুচ্ছ' বা 'ধ্বনি'
যেমন- 'ব' , 'ই' দুটি 'ধ্বনি'। এরা মিলিত হলে দাঁড়ায় 'বই'।
'বই' শব্দের অর্থ আছে।
'বই' একটি শব্দ যা 'ধ্বনি'র সাহায্যে গঠিত।
তাই, কানে শুনলে যা হয় 'ধ্বনি', চোখে দেখলে তাই 'বর্ণ'। আর তার অর্থ হলেই তা হবে 'শব্দ'।

**ধ্বনির শ্রেণিবিভাগঃ
'ধ্বনি' মূলত দুই প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।

ক) স্বরধ্বনি : ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একএক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাঁধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলি মানুষের গলা থেকে স্বাভাবিক ভাবে সম্পূর্ণ ও সুস্পষ্ট উচ্চারিত হয়। বাংলা ভাষায় মোট ১১ টি স্বরধ্বনি আছে।
স্বরধ্বনি আবার দু' প্রকারের।
অ) মৌলিক স্বরধ্বনি- যে স্বরধ্বনি একক ও অবিভাজ্য। যেমন- অ আ ইত্যাদি।
আ) যৌগিক স্বরধ্বনি- একাধিক স্বরধ্বনির মিলিত রূপ। যেমন- ঐ (অ+ই) এবং ঔ (ও+উ)

খ) ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাঁধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক, খ, গ, ঘ, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহ্বামূল বা কণ্ঠে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি। বাংলায় মোট ৪০ টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে।

***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে। পরবর্তী অংশ আগামী পর্বে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা ছন্দঃ রূপ ও রীতি- ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা , কলকাতা।
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন/তথ্য থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।