ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-১০, ভাগ-৮২> – কবিতায় বানান ও ব্যাকরণ  
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – ছেদ-যতি বা বিরাম চিহ্ন
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি সঞ্জয়কুমার মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
ছেদ-যতি বা বিরাম চিহ্ন
গদ্য- পদ্য উভয় রীতিতেই বিরাম চিহ্নের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, বাংলায় ছেদ চিহ্ন যথাযোগ্য ভাবে রক্ষিত নাহলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। যেমনঃ “তোমার সেখানে যাওয়া উচিত, না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে”। আবার “তোমার সেখানে যাওয়া উচিত না, গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে”। বাক্যটিতে কমা (,) চিহ্নের স্থান পরিবর্তনে অর্থের বিপর্যয় ঘটে যায়। বস্তুত ছন্দশাস্ত্রে ছেদ ও যতি সমার্থক নয়। ছেদের প্রয়োজন অর্থ প্রকাশের জন্য, আর যতির প্রয়োজন জিহ্বার বিশ্রামের জন্য।
বর্তমানে যে সকল বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেগুলি নিম্নরূপঃ
ক) দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)
বাক্যের অর্থ যেখানে সম্পূর্ণতা লাভ করে সেখানে এই চিহ্ন বসে। এই চিহ্নের পর নতুন বাক্য শুরু হয়।
খ) অর্ধচ্ছেদ বা সেমিকোলন (;)
একটি বড়ো বাক্যের মধ্যে একাধিক ছোটো বাক্য থাকলে, সেই ক্ষেত্রে ছোটো বাক্যের শেষে এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। অর্ধচ্ছেদের বিরামকাল পূর্ণচ্ছেদের চেয়ে কম।
গ) পাদচ্ছেদ বা কমা (,)
সংক্ষিপ্ত বিরাম বোঝানোর জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। অপূর্ণ বাক্যাংশের শেষে,একাধিক পদের উল্লেখে, সম্বোধন করতে, সাল- তারিখ- ঠিকানা- উপাধি উল্লেখ করতে,উদ্ধৃতি চিহ্ন প্রয়োগের আগে এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। পাদচ্ছেদের বিরামকাল অর্ধচ্ছেদের চেয়ে কম।
ঘ) জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?)
প্রশ্ন করা বোঝাতে গেলে বাক্যের শেষে প্রশ্ন – চিহ্ন দিতে হয়। এই চিহ্নে ও পূর্ণচ্ছেদের মতো থামতে হয়।
ঙ) বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!)
মনের আনন্দ, ভয়, ক্রোধ, ঘৃণা, বিস্ময়, বিষাদ, বিরক্তি প্রভৃতি অনুভুতি প্রকাশে বাক্যের সমাপ্তিতে এই চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। এই চিহ্নের বিরামকাল পূর্ণচ্ছেদের মতো।
চ) উদ্ধৃতি চিহ্ন (“......”)
কোনো উদ্ধৃতি, কোনো মত, কোনো মন্তব্য, কারও মুখের উচ্চারিত কথা বর্ণনা করতে গেলে উদ্ধৃতি চিহ্নের ব্যবহার প্রয়োজন হয়।
ছ) ড্যাশ বা রেখা চিহ্ন (---)
কোনো বিষয়ে দৃষ্টান্ত দেবার পূর্বে, কোনো বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে এই চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়।
জ) হাইফেন বা পদসংযোগ চিহ্ন (-)
একাধিক পদ যখন সমাসবদ্ধ বা সন্ধিবদ্ধ পদ হিসাবে ব্যবহৃত হয় তখন পদ দুটির মধ্যে হাইফেন ব্যবহার করা হয়।
ঝ) কোলন চিহ্ন (:)
কোনো বিষয়ের তালিকা দিতে গিয়ে এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
ঞ) বন্ধনী চিহ্ন [( )]
বাক্যের মধ্যে ব্যাখ্যামূলক কোনো অংশ যুক্ত করতে, কোনো সূত্র নির্দেশ করতে বন্ধনী চিহ্নের প্রয়োজন হয়।
পুনশ্চঃ অনেক কবিকে দেখি তারা এই চিহ্ন গুলি ছাড়া আরও অনেক চিহ্ন ব্যবহার করেন। যেমন- ~, @,#,৳,*,!!!!!!, ????,+,=,/,\,| ইত্যাদি। কবিতায় কখনও এই সব চিহ্ন ব্যবহার হবে না। এ বিষয়ে  সবাইকে সচেতন থাকা দরকার।

**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা কবিতার আসর
                    ২) ইন্টারনেট।
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।