ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৯, ভাগ-৮৩> – কবিতার বিষয়শ্রেণি
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – প্রকৃতির কবিতা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি সুদীপকুমার সিনহা মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
প্রকৃতির কবিতা
প্রকৃতিমূলক কবিতা আধুনিক বাংলা সাহিত্যেরই অবদান। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যেও প্রকৃতিচর্চা কবিতার মাধ্যমে এসেছে। নানান কবির হাতে প্রকৃতির নানা উপাদান স্মহিমায় ধরা দিয়েছে তাদের লেখনীতে। নদী নালা, পুকুর দিঘি, ফুল বাগান বাগিচা, মেঠো পথ পল্লি বাংলার নানান দৃশ্য সেখানে এসেছে। এ বিষয়ে পরে আলোচনা আরো সম্প্রসারিত করব। নীচে কয়েকটি এজাতীয় কবিতা তুলে দেওয়া হল।

১) আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-(গীতাঞ্জলি)
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
            তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
               কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
                      আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
                      আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
                      এই সংগীত-মুখরিত গগনে
                            তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
                      এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
                      দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।

       অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
       আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে--
       দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
       আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
                           মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
                           কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
                           এই সৌরভবিহ্বল রজনী
                           কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
                           ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
                           তব গম্ভীর আহ্বান কারে।

২) ঘাস- জীবনানন্দ দাশ-(বনলতা সেন)
কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
                পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;
কাঁচা বাতাবির মতো সবুজ ঘাস- তেমনি সুঘ্রাণ –
                       হরিনেরা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে !
আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
                       গেলাসে গেলাসে পান করি,
এই ঘাসের শরীর ছানি- চোখে ঘসি,
                       ঘাসের পাখনায় আমার পালক,
ঘাসের ভিতর ঘাস হয়ে জন্মাই কোনো এক নিবিড় ঘাস-মাতার
                      শরীরের সুস্বাদু অন্ধকার থেকে নেমে ।

৩) কপোতাক্ষ নদ- মাইকেল মধুসূদন দত্ত-(সংকলিত)
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।

৪) হেমন্ত- সুফিয়া কামাল---সংকলিত
সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?

আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।

সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।

আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।

হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।

**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা কবিতার আসর
                    ২) ইন্টারনেট।
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।