ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৯, ভাগ-৮২> – কবিতার বিষয়শ্রেণি
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – প্রেমের কবিতা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি বিশ্বজিৎ শাসমল মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
প্রেমের কবিতা
প্রেমের কবিতা কী? প্রেমের কবিতা সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে, প্রেম কী? প্রেম কে অভিধানে খুঁজতে গেলে পাওয়া যায়: প্রীতি স্নেহ অনুরাগ ভালবাসা ও ভক্তি মিশ্রিত ভাববিশেষ। কিন্তু 'প্রেম' অর্থ কি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ? চল্লিশ শতাব্দী ধরে অবক্ষয়ী কবি-দল খুঁজে যাচ্ছেন প্রেম কী? অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান? প্রেম কে সংজ্ঞায়িত করা হয় - ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও রহস্যময় অনুভূতি। প্রেম নিয়ে কয়েক শতাব্দী থেকে রচনা হচ্ছে কবিতা। প্রেম নিয়ে তৈরি হয়েছে সাহিত্যের এক বিশেষ ধারা। নানা স্থানে কবিতার বিশাল সম্ভারে রয়েছে দুই বাংলা সহ সারা বিশ্বের নবীন প্রবীণ লেখকদের লেখা নানা স্বাদের প্রেমের কবিতা - যা, পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়। আমাদের আসরে এ জাতীয় কবিতার সংখ্যা প্রচুর। প্রায় সব কবিই এই পর্যায়ে কবিতা লিখেছেন। এখানে কয়েকটি তুলে দেওয়া হল।
১) তোমার জন্য - তসলিমা নাসরিন (কিছুক্ষণ থাকো)
আমি ঘুম থেকে জেগে উঠছি, তোমার জন্য উঠছি,
শুয়ে আছি অনেকক্ষণ বিছানায়, তোমার জন্য,
মনে মনে আমি তুমি হয়ে আমাকে দেখছি,
তুমি আমাকে এরকম শুয়ে থাকতে দেখতে পছন্দ করছো হয়ত,
শুয়ে থেকে তোমাকে ভাবছি, তোমাকে কাছে চাইছি,
হয়ত তুমি পছন্দ করছো আমি যে ভাবছি, আমি যে চাইছি।
উঠে চা করে আনছি,
তোমার দেখতে ভালো লাগবে যে আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি, তাই দিচ্ছি।
স্নান করছি, তোমার জন্য করছি।
তুমি হয়ে আমার নগ্ন শরীরে আমি তাকিয়ে আছি,
যে পোশাকে আমাকে মানায় মনে করো, সে পোশাক পরছি,
গান গাইছি, যে রকম গাইলে তুমি বিহ্বল হও,
হাসছি, যে ভাবে হাসলে তুমি হাসো,
দিনের কাজগুলো প্রতিদিন আধখেঁচড়া থেকে যাচ্ছে, মন নেই কোথাও,
দিনকে ঠেলে পাঠাতে থাকি দ্রুত রাতের দিকে, রাত পার করছি যেন রাত নয়,
ভয়ঙ্কর একটি সাঁকো দৌড়ে পেরোচ্ছি।
আমি দিন পার করছি কোনওরকম কাটিয়ে না কাটিয়ে
সব এড়িয়ে পেরিয়ে সেই সময়ের কাছে পৌঁছতে চাইছি, যে সময়টিতে তুমি আসবে।

আমি বেঁচে আছি তোমার জন্য, তোমার সঙ্গে দেখা হবে বলে একদিন।

২) যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বলাকা)
যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা
          আপনাকে তো হয় নি তোমার দেখা।
     সেদিন কোথাও কারো লাগি ছিল না পথ-চাওয়া;
          এপার হতে ওপার বেয়ে
              বয় নি ধেয়ে
     কাঁদন-ভরা বাঁধন-ছেঁড়া হাওয়া।

          আমি এলেম, ভাঙল তোমার ঘুম,
     শূন্যে শূন্যে ফুটল আলোর আনন্দ-কুসুম।
          আমায় তুমি ফুলে ফুলে
              ফুটিয়ে তুলে
     দুলিয়ে দিলে নানা রূপের দোলে।
আমায় তুমি তারায় তারায় ছড়িয়ে দিয়ে কুড়িয়ে নিলে কোলে।
     আমায় তুমি মরণমাঝে লুকিয়ে ফেলে
          ফিরে ফিরে নূতন করে পেলে।

৩) নীরা তোমার কাছে- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
সিঁড়ির মুখে কারা অমন শান্তভাবে কথা বললো?
বেরিয়ে গেল দরজা ভেজিয়ে, তবু তুমি দাঁড়িয়ে রইলে সিঁড়িতে
রেলিং-এ দুই হাত ও থুত্‌নি, তোমায় দেখে বলবে না কেউ থির বিজুরি
তোমার রঙ একটু ময়লা, পদ্মপাতার থেকে যেন একটু চুরি,
দাঁড়িয়ে রইলে
নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো।

৪) তোমাকে বলেছিলাম- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (অন্ধকার বারান্দা)
তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে রেখে,
ঝালোডাঙার বিল পেরিয়ে,
হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।

আমি তোমাকে বলেছিলাম, এই যাওয়াটা কিছু নয়,
আবার আমি ফিরে আসব।
ডগডগে লালের নেশায় আকাশটাকে মাতিয়ে দিয়ে
সূর্য যখন ডুবে যাবে,
নৌকার গলুইয়ে মাথা রেখে
নদীর ছল্‌ছল্‌ জলের শব্দ শুনতে-শুনতে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।

আজও আমার ফেরা হয়নি।
রক্তের সেই আবেগ এখন স্তিমিত হয়ে এসেছে।
তবু যেন আবছা-আবছা মনে পড়ে,
আমি তোমাকে বলেছিলাম।

**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা কবিতার আসর
                    ২) ইন্টারনেট।
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।