ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৯, ভাগ-৮১> – কবিতার বিষয়শ্রেণি
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – ভক্তিমূলক কবিতা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি সনেট সেন্টু মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
ভক্তিমূলক কবিতা
কবিতার নানা বিষয়ের মধ্যে ভক্তিমূলক কবিতা অন্যতম। যে কবিতায় ধর্মই প্রধান উপজীব্য, বা ভক্তিমূলক ধারা অক্ষত, তা এই শ্রেণির কবিতা। তবে লালন ফকিরের গান ধর্মের পিঞ্জর ভেঙে উদার মানবলোকে প্রবেশ করেছে। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুভূতির আলোয় এমন অসামান্য কবিতা হয়ে উঠেছে যে ধর্ম তার উপজীব্য কি না তা ভাবার অবকাশ থাকে না আমাদের।
তবু বিভিন্ন কবিতার সাইটে ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় কবিতার বিষয়শ্রেণির উল্লেখ আছে। সে ক্ষেত্রে কবিবৃন্দ নিজ নিজ ধর্মের নানা দিক নিয়ে এই পর্যায়ে লিখে থাকেন।
এখানে এ জাতীয় কতিপয় কবিতা তুলে দেওয়া হল।
১) মুক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,(সোনার তরী)
চক্ষু কর্ণ বুদ্ধি মন সব রুদ্ধ করি,
বিমুখ হইয়া সর্ব জগতের পানে,
শুদ্ধ আপনার ক্ষুদ্র আত্মাটিরে ধরি
মুক্তি-আশে সন্তরিব কোথায় কে জানে!
পার্শ্ব দিয়ে ভেসে যাবে বিশ্বমহাতরী
অম্বর আকুল করি যাত্রীদের গানে,
শুভ্র কিরণের পালে দশ দিক ভরি',
বিচিত্র সৌন্দর্যে পূর্ণ অসংখ্য পরানে।
ধীরে ধীরে চলে যাবে দূর হতে দূরে
অখিল ক্রন্দন-হাসি আঁধার-আলোক,
বহে যাবে শূন্যপথে সকরুণ সুরে
অনন্ত-জগৎ-ভরা যত দুঃখশোক।
বিশ্ব যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে
আমি একা বসে রব মুক্তি-সমাধিতে?

২) সাম্যবাদী- কাজী নজরুল ইসলাম (মরুভাস্কর)
আদি উপসনালয়-
উঠিল আবার নতুন করিয়া- ভুত প্রেত সমুদয়
তিন শত ষাট বিগ্রহ আর আমুর্তি নতুন করি'
বসিল সোনার বেদীতে রে হায় আল্লার ঘর ভরি'।

সহিতে না পারি' এ দৃশ্য, এই স্রষ্টার অপমান,
ধেয়ানে মুক্তি-পথ খোঁজে নবী, কাঁদিয়া ওঠে পরান।
"খদিজারে কন- আল্লাতালার কসম, কা'বার ঐ
"লাৎ""ওজ্জার" করিবনা পূজা, জানিনা আল্লা বই।
নিজ হাতে যারে করিল সৃষ্টি খড় আর মাটি দিয়া
কোন নির্বোধে পূজিবে তাহারে হায় স্রষ্টা বলিয়া।"
সাধবী পতিব্রতা খদিজাও কহেন স্বামীর সনে--
"দূর কর ঐ লাত-মানাতেরে, পূজে যাজা সব -জনে।
তব শুভ-বরে একেশ্বর সে জ্যোতির্ময়ের দিশা।
পাইয়াছি প্রভু, কাটিয়া গিয়াছে আমার আঁধার নিশা।"

ক্রমে ক্রমে সব কোরেশ জানিল; মোহাম্মদ আমীন
করে নাকো পূজা কা'বার ভূতেরে ভাবিয়া তাদেরে হীন।

৩) জবা - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
আমারে লইয়া সুখী হও তুমি ওগো দেবী শবাসনা,
আর খুঁজিও না মানব-শোনিত, আর তুমি খুঁজিও না।
আর মানুষের হৃত্ পিণ্ডটা নিওনা খড়গে ছিঁড়ে,
হাহকার তুমি তুলো না গো আর সুখের নিভৃত নীড়ে।
এই দেখ আমি উঠেছি ফুটিয়া উজলি পুষ্পসভা,
ব্যথিত ধরার হৃত্ পিণ্ডটি আমি যে রক্তজবা।
তোমার চরণে নিবেদিত আমি, আমি যে তোমার বলি,
দৃষ্টি-ভোগের রাঙ্গা খর্পরে রক্ত কলিজা-কলি।
আমারে লইয়া খুশি হও ওগো, নম দেবি নম নম,
ধরার অর্ঘ্য করিয়া গ্রহণ, ধরার শিশুরে ক্ষম।

৪) প্রার্থনা- সুফিয়া কামাল
তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,

গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ঠে গান
সকলি তোমার দান৷

মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷

তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি
সরল সহজ সত্‍ পথে চলি
কত ভাল তমি, কত ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান৷
        ------

**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) সাহিত্য প্রকরণ – হীরেন চট্টোপাধ্যায়
                    ২) ইন্টারনেট
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।