ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৮, ভাগ-৭৯> – কবিতার নানান ধারা
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – গাথাকাব্য, কাব্যনাট্য, গদ্য কবিতা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি ইয়ামিন বসুনিয়া মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
গাথাকাব্য
গীতিকবিতা যখন একটি কাহিনিকেন্দ্রিক রূপ লাভ করে সাধারণভাবে তখনই তা হয়ে ওঠে গাথাকাব্য। গাথাকাব্যে ঘটনা বা চরিত্র চিত্রণ পরিলক্ষিত হলেও তা পরিবেশিত হয় কবিতার আদলে। গাথাকাব্যে সহজ সরল কাব্যরস সমৃদ্ধ সাধারণ মানবজীবনের গল্পকথা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে প্রকাশিত হয়।। কবিরা এখানে কাহিনি বর্ণনার দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকেন। গাথাকাব্য গীত হবার উদ্দেশ্যে রচিত হয়।

কাব্যনাট্য
কাব্যপ্রধান নাটককেই কাব্যনাট্য বলা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত নাটকের লেখার ভঙ্গি কবিতার আদলে তাকেই কাব্যনাট্য বলা সমীচীন।

গদ্য কবিতা
গদ্য কবিতা বলতে সেই সব কবিতাকে বোঝায় যেগুলি গদ্যে লিখিত হয়। গদ্য কবিতা প্রাচীন যুগে স্কলারদের দ্বারা প্রথম লিখিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে নাম-না-জানা কয়েকজন লেখক ইংরেজিতে গ্রিক ও হিব্রু বাইবেল অনুবাদ করেছিলেন। এই অনুবাদের ভাষায় আশ্চর্য শক্তি এদের মধ্যে কাব্যের রস ও রূপকে নিঃসংশয়ে পরিস্ফুট করেছিল। তবে এগুলিকে কবিতা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারও মতে গদ্য কবিতা একটি বিশেষ ধারার কবিতা; কেন না এটা রূপক ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। অপর কারও মতে গদ্য কবিতা গদ্য। আধুনিকবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী টি.এস.এলিয়ট গদ্য কবিতার বিপক্ষে জোড়ালো বক্তব্য তুলে ধরেন, যদিও তিনি নিজে দু-একটি চেষ্টাও করেছেন এই ধারায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রসঙ্গে বলেছেন -- "গদ্যকাব্য নিয়ে সন্দিগ্ধ পাঠকের মনে তর্ক চলছে, এতে আশ্চর্যের বিষয় নেই। ছন্দের মধ্যে যে বেগ আছে সেই বেগের অভিঘাত রসগর্ভ বাক্য সহজে হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করে, মনকে দুলিয়ে তোলে, এ কথা স্বীকার করতে হবে। তবে ছন্দটাই যে ঐকান্তিকভাবে কাব্য তা নয়। কাব্যের মূল কথাটা আছে রসে, ছন্দটা এই রসের পরিচয় দেয় তার অনুষঙ্গ হয়ে। সহায়তা করে দুই দিক থেকে। এক হচ্ছে স্বভাবতই তার দোলা দেবার শক্তি আছে, আর-এক হচ্ছে পাঠকের চিরাভ্যস্ত সংস্কার।" নিরূপিত ছন্দের কবিতায় যেমন সমমাত্রিক পর্বের পুনরাবর্তন দেখা যায়, তা এই গদ্য কবিতায় থাকবে না। বর্তমানে এই ছন্দে কবিতা লিখতেই বেশিরভাগ কবি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ– কুন্তল চট্টোপাধ্যায়
                    ২) সাহিত্য প্রকরণ – হীরেন চট্টোপাধ্যায়।
                    ৩) ঊইকিপিডিয়া।
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।