ভাবিতে ভাবিতে
ভোর হইয়া গেলো,
সব কেমন যেন এলোমেলো ,
মনের অতৃপ্তি , সুপ্ত অপরাধবোধ
ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হইলো।
প্রভাতে হঠাৎ বরিছে বর্ষা
অন্তরে মোর কেবলই হতাশা ,
প্রাণতৃষ্ণা হরিবার নাহি কেউ ,
যদি থাকিতো ;তবুও তাহার চিত্তে বহিত
শত অভিমানের ঢেউ ।
আমার কোন নিকট আত্মীয় নেই
যে কিনা হইবে অভিমানী,
কেবল বিধাতা আছেন,
তিনিও আমায় ডাকেনা একটিবারো
শুধায়না মোরে আছি নাকি বেশ ভালো?
আমি তাহার তরে ; অবসরকালে
যাই নি একটিবারো ,
তাই বুঝি বসিয়া রহিছে সে
মুখটি করিয়া কালো ?
তাঁহার মনের গূঢ়তত্ত্ব বুঝিতে না পারি ,
বিরক্ত হইয়া বাহির হইনু ;
সঙ্গে পুস্তক পথের পাঁচালি ।
অপু দুগ্গার গপ্প পড়ি,
আত্মচিন্তনে আপন ভ্রাতাকে খুঁজি ,
স্মৃতিচারণে আনন্দ পাই ,
বসুধার বক্ষে সে যে আর নাই ।
তাই বোধ হয় অপুর বেদনা
মোর অনুভবে গান গায় ।
জীবনসংগ্রামে একলা বাঁচি,
সঙ্গী পাইয়াও পাইনি বইকি ।
ছোট্ট শিশু মম ক্রোড়ে,
কাঁদিত হাসিত আপন সুরে ,
বুঝিতাম না তাহার বাক্য
তবুও দিনের শেষে পার্শ্বঘেষে
পাইতাম শান্তি ,কিন্তু আজ ,
আমি কেবলই অনুতপ্ত ।
মাতার ডাক শুনিয়া
ভাবনার বিরতি হইল ,
আহার গ্রহণ করিবার হেতু
ডাকিতেছিলেন তিনি উচ্চস্বর তুলি ,
অন্তরের বেদন ব্যথা
কেমনে আমি ভুলি ।
গৃহে গেলুম ; সম্মুখে হরেক ব্যঞ্জনআদি,
রুচি নাহি ; বিষাদের বোঝা বড্ড ভারী ।
অবেলায় যবে নিদ্রা যাই ,
মাতা চঞ্চলা হইয়া ক্ষত সারাইতে চায়
বোঝাই কেমনে এ ক্ষত অন্তরীক্ষে
নিহারিকা হইয়া রোজ খেলিয়া বেড়ায়।
আঁখিযুগল নির্ঘুম
ভাবনায় পূর্বের হাজার ভুল ।
এ প্রাণে কোন উল্লাস নাই
নাই প্রাপ্তির আনন্দ,
আমি নই কারোর প্রিয়জন ,
নই বিশ্বকোষে গুণীজন ।
অন্যের উপর ভরসা করা
যেন আমার নেশা ,
দিন দুনিয়ায় কি আছে
অবাধ্য কোন পেশা ?
এ জীবনে সুখ যেন কাল্পনিক ,
জানি , মোর জীবনে
আকস্মিক শান্তি চিরঅধরা,
তবুও কোন সাহসে ; কিসের দম্ভে
আমার ঠোঁটে অট্টহাসি তোলে স্পর্ধা ?
চলিয়া যাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে
বিধাতা না জানি কি লিখেছেন কপালে?
লোকে জানিলে প্রশ্ন করিবে
মরিতে কেন চাই আজ প্রতিটি ক্ষণে!
সেদিন ছিল দীপাবলীর আলোকিত রাত্রি
অন্তরপূর্ণ ছিল অপ্রাপ্তি ,
তমসাবৃত গগণ
অমাবস্যায় ঢাকা জোচ্ছনা কিরণ ।
ঐ নিশীথকালে; বটবৃক্ষ তলে
দেবী অর্চনায় মগ্ন ছিলেন গৃহস্থগণ ,
মনে পরিলে ঐ শুভক্ষণ;
আজও আমার বক্ষমাঝে
অবসাদেরা আলতা পায়ে
ছুটিয়া চলে সর্বক্ষণ।
মাতৃ অপমান ; পিতৃ সম্মান ,
নিজ অধিকারে অন্যের বাকদান ,
আপন ভাবিয়া ছাড়িয়া দিলেন
পিতা তাঁহার মৃত মাতার শেষ ইচ্ছের দাম ।
হত্যার চেষ্টা ; সফলতার আনন্দে মদ্যপান
যেন ছিল প্রলয়ের পূর্ব মহাস্নান ।
বালিকা ছিলাম ; বুঝিনায় কিছু
কেবল প্রশ্ন তুলিয়াছিলাম ,
“ ভ্রাতা মোর ঘুমিয়ে কেনো ? ক্লান্ত বুঝি খুব?”
উত্তরে সকলে নিশ্চুপ ।
মাতার ক্রন্দন শ্বাস;পিতার বৈরাগ্য ভাব
শিখাইলো মোরে -
“অতি সরলতা জীবনের মহা অভিশাপ।”
আজ উপেক্ষিত দশদিক
দুয়ার ভিরিয়া একাকি থাকাই ঠিক,
তবুও মনমাঝি মোর অপেক্ষাতে প্রহর গুণে ,
অবেলায় যদি কোন অতিথি আসে!
আসে না ; কেহই মুখপানে দৃষ্টি স্থির করে না ,
যদি করিত; আপন মনের ভাবনার
মর্ম খানি বুঝিত ।
তাই জীবনের প্রতি পাতার স্বরলিপিগুলো
কর্ণকুহরে একাকিই ছন্দিত হয় ,
তবুও প্রকাশ্যে কেবলই বাঁধে ভয় ;
ভাবে যদি সব সুখ ;
মরিচিকার ষড়যন্ত্র হয় !
শীঘ্র জমিদারি বন্টন হইবে ;
আত্মীয়তা বিসর্জন হইবে,
আজ স্নেহেরা সব ধূলিসাৎ ;
স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙিতেছে বারবার ।
সেই ঘর সেই ডাকনাম ,
কনিষ্ঠ অধিকারে ক্ষুদ্র সব আবদারের খাম;
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্কন্ধ বাহন
হুল্লোড়ে ফেটে পরা ছোট্টকালের কিছু সম্বল ,
সবই আজ স্মৃতি ,
জানান দেয় সবই নাটক ছিল নাকি !
হারালো স্বজন ; হলো মুক্তির আলোরণ ,
তবুও মন ফিরে ফিরে চায় সন্ধ্যে উঠোনে ঘুনপাড়ানি সব গল্পঝুলির ক্ষণ।
সবকিছু থমকে যায়
দমকা হাওয়ায় স্রোতস্বীনিরা গান গায় ,
প্রতিটি সৃষ্টি শুধায় ,
“মনুষ্যের ভবিতব্য কোন কুঞ্জে খেলিয়া বেরায় ?”
প্রকৃতি মনুষ্যত্ব বিনা সর্বক্ষেত্রে রিক্ত ,
এর সুবাদেই বোধ করি পাতালবাসী হয় ঋদ্ধ।
শুনিয়াছি ; বৃষ্টি নামিবার পূর্বে
শান্ত থাকে প্রকৃতি ,
স্বজন হারানোর পূর্বে
তবে কি ছলনা করাই নীতি ?
হয়ত থাকিবে সুখ ; থাকিবে সমৃদ্ধি
পাইব না কেবল চিরচেনা গুরুজন প্রীতি ।
থাকিবে না সুখ উপভোগের আনন্দ ,
থাকিবে ছলনায় ঘেরা
স্নেহের পরশের বিষাক্ত গন্ধ ।
হৃদপদ্মে বিরাজমান হে বিশ্ববিধাতাধী ,
সুখ বৃষ্টির পূর্বে;
রক্তবাঁধন ছিন্ন করিও না কোন
শত্রু-মিত্র কিংবা ক্ষমতা লোভী পিশাচীর ।
বিঃদ্র- আমরা জীবনে সুখ চাই । কিন্তু সেই সুখ অর্জন করার জন্য অনেক সময় রক্তের বাঁধন ছিন্ন করতে হয় । আপনজনের বিরুদ্ধে গিয়ে জমির ভাগ নিতে হয় । এই ভাগ নেয়া আপাতদৃষ্টিতে খারাপ হতে পারে । তবে কখনও কখনও এমনও তো হয় যখন পিতার সেই সম্পত্তি হয়ত অন্যের হাতে গেলে তার অপব্যবহার হতো , সেই কারণেই এমনটা করা হয় । একসময় সুখের বৃষ্টি হয় ঠিকই ; কিন্তু থাকেনা রক্তের সেই মানুষগুলো । তাই বিধাতার কাছে অনুরোধ সুখের বৃষ্টি বর্ষণের আগে যেনো আপনজনকে হারাতে না হয় ।