নিরন্তর এক ক্লান্তির বৃত্তে আমি বন্দী,
মাথার ভেতর বিস্ফোরণ ঘটে দিনের পর দিন,
বুকের ভাঁজে জমা হয়ে থাকা নির্জীব তৃষ্ণা—
যেন একা আমি, আর আমার সাথে কেউ নেই।
ধোঁয়ায় মলিন হয়ে যাওয়া ফুসফুস,
জ্বলন্ত শিরার ভেতর দিয়ে ছুটে চলা অদৃশ্য বিষ।
চেতনার সবকিছু খেয়ে ফেলে মস্তিষ্কের অবুঝ পোকা,
এমন এক সময় আসে যখন নিজেকেই আর চিনতে পারি না।
জাগতিক সবকিছু কেমন ঝাপসা মনে হয়,
আমার নামটাও যেন ভুলে গেছে কাছের সবাই।
পথে পথেই পড়ে থাকি— বেওয়ারিশ, অস্পৃশ্য,
শব্দগুলোও আর জুড়তে পারি না একে অপরের সাথে।
ঘুম ভাঙে না, অথবা হয়তো ঘুমাই না একদমই,
চোখের মাঝেই ভেঙে পড়ে স্বপ্নের নীড়,
কী যেন খুঁজতে বের হয়েছি;
কিন্তু সেটা কী, তাও জানি না— হয়তো অস্তিত্ব নাহয় অভিশাপ।
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ক্লান্ত আত্মার সব বন্ধন,
ভেতরে জমেছে এক নিঃশেষিত নীরবতা।
কেউ নেই, আর হয়তো কেউ থাকবেও না—
এই বোধটা তীক্ষ্ণ, যেন ফলক তীর-বর্শার।
কাঁধে বাস্তবতার বোঝা বইতে বইতে
সবকিছু যেন কেমন ঢলে পড়ছে অন্ধকারের নিচে,
দেহ থেকে মন, মন থেকে অস্তিত্ব,
একটুও স্বস্তি মেলে না ছায়া মানবের কাছ থেকে।
নিজের ভেতর সযত্নে পুষে রাখা ক্ষুধা,
অপ্রয়োজনীয় সময়ের সাথে বোঝাপড়া।
ক্ষতগুলো জমে জমে হয়েছে পাথর,
কিছুতেই ভাঙছে না আর—
বুকের মাঝে যে শূন্যতা ছিল, তাও আজ উধাও।
শুধু থেকে গেছে ছাইভস্মের বিশাল স্তূপ,
তাতে কোনো জীবন নেই, কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই।
তবুও, হাতটা বাড়িয়ে দিই—
কিছুতেই থামাতে পারি না চেনা সেই অচেনা আকর্ষণ।
কিছুতে, কিছুতেই পারি না!
দিন ফুরোয়, রাতও ফুরিয়ে যায়,
একঘেয়েমির ধারাপাত যেন কখনো থামে না,
কিছুতেই হালকা হয় না দুঃখ, বেদনা—
আর আমিও, যেন সেই যন্ত্রণা খুব যত্নে বয়ে বেড়ায়।
হয়তো একদিন আমিও ফুরিয়ে যাব,
অনন্তের অসীমে হারিয়ে যাব,
নিজস্ব ছায়াটাও পিছু নেবে না আর—
যেখানে আলো নেই, অন্ধকারও না,
শুধু ফাঁকা, শূন্যস্থান!