বহুদিন পর এক কাঙ্ক্ষিত বর্ষার দেখা পেলাম... একটি প্রশস্ত হাইওয়ে... পাশে নয়নাভিরাম ধানক্ষেত... অদূরে আজকের মতন বিদায় জানাচ্ছে সূর্যাস্ত, হাটছি রাস্তার পাশ ঘেষে...গন্তব্য ড্রীমল্যান্ড, বাড়ি থেকে পার্ক-স্ট্রিট ধরে হেটে গেলে পাঁচ মিনিটের পথ... খুব ঝিরিঝিরি বৃষ্টি... এই প্রথম বৃষ্টিতে চশমার কাঁচ ঘোলাটে হয়ে পড়ার মতন বিড়ম্বনা ভোগ করলাম.. . গাড়ির উইন্ড সিলের মতোন আমারও একটু পর পর চশমার কাঁচ পরিস্কার করতে হচ্ছে...
হাটতে হাটতে চলে এলাম ড্রীমল্যান্ড... ঢুকতেই চোখে পড়লো মেরি গো রাউন্ড... ডান পাশে সারিবদ্ধ করে অ্যালুমিনিয়ামের দোলনা... এক কাপ চা হাতে নিয়ে দোলনাতে বসে দুলতে দুলতে মাথার ভেতর ঘুরতে লাগলো ভাবনার রোলার কোস্টার... আইন্সটাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি, যেখানে একটি সময়কে খুব দীর্ঘ লাগে আবার ঐ একই সময়ে অন্য একটি কাজকে খুব ছোট মনে হয়... আমার হঠাৎ করেই মেরি গো রাউন্ডটাকে মনে হতে লাগলো নিউইয়র্কের কোনো অ্যামিউজম্যান্ট পার্ক, আর হাতের চায়ের কাপ টাকে মনে হচ্ছে বার্মিংহামের কোনো এক রেস্তোরার এক কাপ ক্যাপাচিনো সন্ধ্যা... ইচ্ছে করছে এই সময় আর শেষ না হোক.. অথচ কিছুদিন আগেও জীবনটাকে কেমন দূর্বিষহ লাগছিলো,মনে হচ্ছিলো শেষ হলেই বাঁচি...
বৃষ্টি তখনও পড়ছে চশমার কাঁচ আরো ঘোলাটে হচ্ছে এবার আর মুছতে ইচ্ছে করলো না.. চশমা খুলে মেঘলা আকাশ দেখতে লাগলাম.. দেখতে লাগলাম বর্ষার পরিপূর্ণ এক রূপ... বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাকে বর্ষার আবেগঘন স্পর্শের মতো লাগছে.. মনে হচ্ছে এর আগে বৃষ্টি এভাবে কখনো আমায় ছোয়নি... এর আগে বর্ষা এসেছিলো যান্ত্রিক কোলাহলের এক ব্যাস্ত ট্রাফিক জ্যামে, হাটুজলে ডোবা রাস্তায়, এসেছিলো পরীক্ষার দিন নাস্তনাবুদ হয়ে সকাল বেলায়, এসেছিলো অ্যাম্বুলেন্সে এক মুমূর্ষু রোগীকে কে হাসপাতালে নেয়ার ব্যস্ত সময়ে.. এসেছিলো প্রিয়তমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিমুলতলায়... এই প্রথম সঠিক সময়ে বর্ষা এলো..আমি বহুদিন পর কিংবা হয়তো এই প্রথম একটি পরিপূর্ণ বর্ষার প্রেমে পরলাম..... কতটাইনা মুগ্ধতা রেখে গেলো এই বর্ষা....কতটা আবেদন ছড়ালো এই বর্ষা... কতগুলো ফিনিক ফোটায় প্রতিটি স্নায়ু জাগিয়ে গেলো এই বর্ষা...
এই প্রথম বর্ষার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ রইলো না...
-কাব্য