বাবা মেয়ের কথোপকথন
তরুবিথী

মনে পড়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, মনে পড়ে বৈশাখ।

মনে পড়ে আনন্দ, হাসি,  গান

মনে পড়ে একতানে বাঁধা শৈশব কৌতুক।

কেন বড় হলাম বাবা! বলতে পারেন?

বাবা:

সে কি আর বলতে পারি মা!

প্রকৃতির নিয়ম কি আটকানো যায়?

যদি যেতো! তবে আমিও সেই ফ্রেমে

আটকে রাখতাম নিজেকে।  

নদীর ঢেউয়ের মত পেরিয়ে গেলো সময়।

আকাশের বর্জপাতের মত এক মুহূর্তে।

মেয়ে:

বাবা আপনি বলতেন - মাকে তুমি করে বলো,

মা কাছের।  

আসলেই কি আপনি-তুমি ভাষা দিয়ে কাছের আর

দূরের করা যায়?

আমার আবার ইচ্ছে করে ছোটবেলার মত আপনার কাছে আবৃত্তি শিখি।

আপনি আমাকে এমন ভাবে রিহার্সল করাতেন সমস্ত কবিতা, বক্তৃতা ঠোঁটের আগায় থাকতো।  

এমন সুন্দর করে বক্তৃতা লিখে দিতেন,  

যে অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই লেখা নেওয়ার জন্য ভীড় করত।

কিন্তু এখন আমাদের কারোরই আর সময় নেই।  

দুজন যেন দু'প্রান্তের হয়ে গেছি।  

বাবা:

দু-প্রান্তের কি হয় কখনো!

মনে মনে যে আত্মিকতা,  তা কি ঘোঁচে কখনো?

ঘোঁচে না।  পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো তুমি,

তোমার মাঝেই আমার প্রকাশ। তুমি আমার অংশ।

ছোট বেলার কথা ভেবে দু:খ কেন কর?

তখন তোমাকে কৌশল শিখিয়েছি তাইতো তোমার চেতনায় রয়েছি আমি।  তোমার মনের মধ্য থেকে আমিই তো শেখাচ্ছি। তাহলে আর দূরে কোথায় হলো?

ছোট্ট পাখি যখন ডানা মেলে, বাবা মায়েরা তখন ছোট্ট পাখির আকাশে ওড়া দেখেই আনন্দ পায়।  সেখানেই তাদের শান্তি।  আমিও অনুভব করি সেই শান্তি।

মেয়ে:

ছোট বেলায় আমরা বড় হবার জন্য পাগল হয়ে যাই।  

তখন যদি জানতাম! বড় হওয়া মানে সব ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া! তাহলে হয়তো কখনোই বড় হতে চাইতাম না বাবা।  

এখন শুধু একটাই চাওয়া।  খুব খুব খুব ভালো থাকেন।  আমার জন্য পাওয়া সব দু:খ আপনাকে যেন না ছোঁয়।