পারুল বলল," দাদা মনি দা নেই।"
কোথায় গেছে ঢাকা, কোলকাতা, প্যারিস?
সে কথা নয় দাদা মনিদা আর নেই,
চোখ তুলে তাকালাম।
মনিদা আমাদের মনিদা
যার মুখে গল্প না শুনলে ঘুম আসতো না
গান না শুনলে চাঁদমাখা রাত ফ্যাকাশে মনে হতো
জামরুল ডালের শাসন নাহলে হয়তো
আমাদের পড়াশুনো শিকেয় তোলা থাকতো
মনিদা আমাদের সেই মনিদা।
পাশের বাড়িতে আম কাঠ চেরাই এর শব্দ ভাসছে বাতাসে
বাঁশ চেরার একটা ব্যাস্ততা টের পাচ্ছি।
একবার পারুল তিলক নিয়ে গেল
কে যেন জোরে চিৎকার করে বলল
,"তুলশী পাতা তুলো।"
শ্মশান এখান থেকে মাইল খানেকের দূরত্ব।
পারুল বলল," দাদা যাবিনে?"
আমি ভাবলাম যাব ভিডিও কন্ফারেন্সটা শেষ হলে,
মনিদা ঘন্টা দুয়েক দাড়িও আমার জন্য,
এতটা সময় তো সইলে।
আজই বিজনেজ কন্ট্রাকটা পাবার কথা।
মৃতেরা কথা শোনে না, তাদের কেবল চলে যাবার তাড়া।
মনিদা কি রাগ করছো?
ব্যাংক থেকে দুলাখ টাকা
আজকের মধ্যে না তুললেই নয়।
এ টাকাটা না হলে শ্রাবনীর সখের কার্পেট আর ল্যাপটপটা
হয়তো আর কেনাই হবেনা।
কত দিনের বায়না বলতো ওর।
মনিদা শ্রাবনীকে তো চেন
তোমার ভাতৃবধু বড় বেশী অভিমানী।
আজ আবার জাগ্রতর আসার কথা
ওর এক পছন্দের পাত্রীর সাথে পরিচয় পর্ব,
মেয়েটাও বেশ, মানবে মানিকজোড় ।
মনিদা ব্যাস্ত সময়ে হুটহাট করে মরে যেতে হয়না।
আচ্ছা মরলে কেমন লাগে হালকা না ভারী,
যেহেতু মরলে আত্মা বেড়িয়ে যায়
সেহেতু হালকা লাগারই কথা
তুমি যে ভারী বাব্বা,
একটু রসিকতা করলাম মনিদা,
কিছু মনে করোনা।
আজ আমাকে
জয়ের জন্মদিনের কেকের অর্ডারটা দিতেই হবে
পার্টিতে কত গন্যমান্যের সমাবেশ হবে!
আগামী শনিবার, মাত্র দুটো দিন আছে হাতে।
প্রেজটিস এন্ড বিজনেস ইস্যু আফটার অল।
ভুলেই গিয়েছিলাম শ্রাবনীর বসের পারফিউমটা,
কেনা হয়নি, অফিস মেটার বলে কথা।
জীবনের এই ব্যাস্ত সময়ে বড় অসময়ে মরলে তুমি।
এবারে মায়ের বাৎসরিক উৎসব জমকালো করে করবো,
লোকে জানুক সে কার মা ছিল।
মা একসময় তোমাকে আর আমাকে
একসাথে ভাত মেখে খাওয়াতো।
হ্যাঁ তখন তোমার জন্য অবশ্যই একটা স্মরণসভা করবো
তোমায় বড্ড ভালবাসি মনিদা।
মনিদা তুমি যেন কখন মরলে, কালবেলা ছিল কি?
হ্যাঁ কাল দিবাগত রাত নয়টা পারুল বলেছিল বটে,
এখন পরদিন রাত বারোটা চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে।
আজকাল অফিসের কাজ বাসায়ও করতে হয়।
মনিদা কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম না হলে আর চলছে না।
পারুল বলল,
" দাদা সকাল ছটার দিকে মনিদার দাহ হয়ে গেছে।"
শুনলাম।
মনিদা স্নেহের প্রতিদান আমি দেবোই দেবো,
মনুষ্যত্ব এখনও মরেনি,
দেখো বড় স্মরণ সভায়
তোমায় স্মরন করে ঠিকই লম্বা ভাষন দেবো।