পৃথিবীর শোক কাঁধে করে শ্মশানে রেখে এসেছি,
মনে হয় গতকাল!
শ্মশানে ঠিক এইরকম শীতের সকাল!
ফ্যাকাশে সাদা কুয়াশা
তোমার মুখের মতন,
এমন সেজেছো কেন!
ফোঁটা চন্দনে, লেপ্টে দেয়া সিঁদুরের লাল!
তোমার পায়ে আলতা দেখিনি এর আগে,
এত লাল!
অতঃপর শ্মশানে শোক ভুলে,
তোমার আধযাপিত ঘরের
চৌকাঠে শুদ্ধিকরণ,
তোমার পায়ের মতন শীতল
লোহা ছুঁয়ে দিয়ে তুলশির জল!
ও মা!
তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নার
পারদ খসে কালো হয়ে গেছে,
মুখ দেখা যায়না আর!
কত ছোট-বড় টিপ,
কত দিনরাত্রির না বলা কথা!
তোমার সেগুন কাঠের পালঙ্কের
এককোনে নড়বড়ে পদ্মকলি,
নড়বড়ে রয়ে গেছে সকলই!
তোমার সিঁদুর দানি,
আধখানা ক্রিমের কৌটা,
চিরুনিতে প্যাচানো চুল,
মনে হয় এইমাত্র ছুঁয়ে দিয়ে গেলে,
অথচ সাতাশ বছর!
তোমার আলমারি, আলনায়
ন্যাপথলিনের গন্ধমাখা গোছানো কাপড়!
ভাঁজে ভাঁজে দিনপঞ্জি,
জমানো আদর,
পাঁচশোর চকচকে নোট,
আমার ডেনিম কেনার পয়সা রেখে গেছো,
চারিদিকে এতো খেয়াল,
কি বেখেয়ালে জীবন অলক্ষ্য করে গেলে!
দুয়ারে দাঁড়িয়ে যমের মতো নীলবাতি এ্যাম্বুলেন্স!
বলেছিলে ফিরবে ঘরে শিঘ্রই,
এমন অসুখে এলোমেলো তোমার চুল,
এলোমেলো সাজানো সংসার,
মিটসেফে খাঁটি খেজুরের গুড়,
গোয়ালাকে বলে রাখা অতিরিক্ত দুধ!
ফ্রিজে জমানো তোমার রাঁধা সুখ!
অথচ ও মা,
শেষবার তুমি আমার জন্মদিন ভুলে গেলে!
দুধে-গুড়ে-আতপে পায়েস হলোনা আর!
বলেছিলে , "সিক লিভ তুলে নে,
কেবিন বুকিং দে, চল ঘরে ফিরি দুদিন পর।"
অথচ ঘরে ফেরা হলোনা তোমার,
লালপাড় সাদা শাড়ি সিঁদুরে,
সুখ ঘরে ফিরলো না আর।
মাগো, তোমার গন্ধ ছাড়া হতাশ বাতাস,
তোমার ছাড়া স্বার্থপর সাতাশ বছর!
খরচ হয়নি জেনো,
তুমি যেমন বুকের কাছে,
বুকপকেটে বেঁচে আছে
তোমার স্মৃতির মতো চকচকে
এক নোট পাঁচশোর!