(জার্মান বান্ধবী ফেরনিকা রাওয়ের হাসপাতাল যাওয়া উপলক্ষে লেখা)
সাত সমুদ্দর তেরো নদীর অপারের মেয়ে তুমি
এ'মরু বুকে জাগাইলে বান তপ্ত ললাট চুমি।
দুঃখ ব্যথা যে বুকটাতে ছিলো গো সহচর
সেখানে তুমি মধু জমালে ওগো মন মধুকর।
যে বুক দিয়ে গেছে কত ভ্রমরা ওলির দল
নিয়েছে শুধু মধু আর মধু কেড়েছে বুকের বল।
মধুহারা বলহারা চিরবঞ্চনার বুক
কেমনে তোমার মন কাড়িল, কাড়িল তোমার চোখ।
হয়তো তুমি ভুল করেছো, দেখেছো এমন কিছু
যেখানে আমি হারায়ে আমায় ধরেছি নিজের পিছু।
সেই সে ধরার মাঝে-
রয়েছি আমি খোঁজেছো যা তুমি তব অপরূপ সাজে।
হয়তো দেখেছ এমন কিছু হৃদয়ের অনুরাগে
হইয়া বেভূল ফুটায়েছ ফুল এ'মরু গুলবাগে।
জানিনে কেউ অতীত কারো মথিত হয়েছে মন
পতিত ফুলে সাজায়েছি দু'জন চির আকাংখার ধন।
কালো আর ধলো করিনি বিচার করেছি আষ্ফালন
বাহিরকে রেখেছি আড়াল করিয়া দেখেছি রাঙানো মন।
মুখের ভাষায় পাইনি নাগাল বুকের ভাষায় তুমি
কয়েছো কথা সংগোপনে গিয়েছ হৃদয় চুমি।
দু'জনে রয়েছি দু'কুলে বসে অথচ স্রোতস্বিনী
দলীয়া মথিয়া নিয়েছে মোদের ফল্গুধারায় টানি।
তুমি দেখেছ মহান করে মোর হৃদয়ের গান
আমি দেখেছি তোমার হৃদয়ে অনেক ঝড় তুফান।
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজায়েছ তুমি জীবনের সঙীত
কাঁদায়ে কাঁদায়ে রচিয়াছ হৃদে তোমার হৃদয়ের ভীত।
কেমন করে বলি;
একে অপরের ব্যথা বুকে করে সারাদিনমান চলি।
খ্রীষ্টান তুমি গীর্জায় কাঁদ মুসলিম আমি মসজিদে
একই অসীমে পাওয়ার আশায় দু'জনারই মন কাঁদে।
তুমি শুনেছ ঘন্টা ধ্বণী আমি শুনেছি আযান
আমি করেছি সেজদা খোদায় তুমি গেয়েছ গান।
বাঙলা আমার জন্মভূমি বাঙলার জলবায়ূ
পচিশ বছর মিটায়েছে ক্ষুধা দিয়েছে আমায় আয়ূ।
তুমি জার্মানী শ্বেত-বলাকা এই খানেতে বাস
এই আলো বায়ু গায়ে মেখে মেখে কাটায়েছ বারমাস।
বুঝিনি যদিও মুখের ভাষা তবুও কেমন করে
দু'জনে দু'জনায় জেনে নিয়েছি আকার ইংগীত ধরে।
ধর্ম কর্ম জাত বেজাত পরোয়া করিনি কিছু
ধর্মরাজে হারায়ে ধরেছি প্রেমরাজের পিছু।
সমাজ নামায ধর্মশালে হয়েছি অকূতভয়
দেখেছি দু'জনে দু'জনার মাঝে রয়েছেন প্রেমময়।
প্রেম স্বর্গ, প্রেম শান্তি, প্রেমেই জগত আঁকা
জড়, জীব ক্লীব সকল কিছুই প্রেমারঙে রাঙা।
(কবিতাটি ১৯৮৮ সালে জার্মনে বসে লেখা, পাঠকের মন্তব্য চাই)
লন্ডন: atoki@clyd.co.uk