। তিনখানা চশমা।
তিনখানা চশমা হারিয়ে গিয়েছে আমাদের । এখনই খুঁজে না পেলে ভীষণ বিপদ,
ঝাপসা অন্ধত্বে পাশের নিরীহ ছেলেটাকে মনে হয় আগামীর হিংস্র শ্বাপদ,
অতীতের অর্ধেক দেখা যায় না, বানানো ইতিহাস সত্যি বলে মনে হয়,
তিনখানা চশমা হারিয়ে গিয়েছে, হয়তো বা তাই, ঠেলেঠুলে ভুল দিকে নিচ্ছে সময়।
একটা চশমা ছিলো, পুরোপুরি গোল গোল ফ্রেম, তার সাথে সরু দুটো ডাঁটি,
চশমার পিছে দুটো ব্যথাতুর চোখ.. নোয়াখালি, বিহার, কলকাতা হেঁটে যায় অসহায় লাঠি,
হিংসারা জিতে গেছে, লাশের স্তুপের মাঝে কখনো আসছে ভেসে
ধর্ষিত রমণীর শেষ গোঙানি,
তবুও অহিংস তিনি স্বপ্ন দেখেন, ভারত নামক দেশে এক হয়ে থেকে যাবে জল আর পানি,
একটা চশমা ছিলো, শেষবার দেশ দেখে যার মালিকের স্বরে বন্দিত হয়েছেন রঘুপতি রাম,
গোল গোল ফ্রেম আর সরু ডাঁটিওলা, তোমরা দেখেছো কেউ, সময়ের গোলমালে কই হারালাম?
আর একটা চশমার কাঁচটা অমনই গোল, ডাঁটিটা একটু মোটা, একটু বাহারী,
ভাসা ভাসা দুই চোখে স্বপ্নের পাকা বাসা , একদিন স্বাধীনতা আনবেনই বাড়ি,
হিন্দু মুসলমান খ্রীস্টান শিখ এক , আজাদ সে ফৌজটাতে যখন কণ্ঠে শুধু হিন্দ যায় শোনা,
সেসময় লিগ আর মহাসভা পরস্পরের প্রতি বিষ উগড়িয়ে বলে ইংরেজ প্রভুদের কিছু বলবো না,
তাদের উহ্যে রেখে চশমাধারীর ধ্যানে আর ধারণায় ধরা দেয় ধর্মের কাঁটাহীন আগামীর ছবি,
কোথায় রেখেছো দেশ সেই চশমাটা, ওটা চোখ থেকে খুলে সেই একই বিভাজনে দেখো কেন সবই?
তিন নম্বর ছিলো বেশ মোটা ফ্রেমওলা, কাঁচ পুরো গোল নয়, ওপরে কিছুটা চ্যাপ্টানো,
যাঁদেরকে ছুঁতে মানা ছিলো সে সময়ে, ছায়াকে মাড়িয়ে গেলে ব্রাহ্মণ করে নিতো স্নানও,
তাঁদেরই প্রতিভূ সেই চশমা-মালিক। কতিপয় চিতপাবন ব্রাহ্মণ ভেবেছিলো রাখবে দলিতদের দুপায়ের নিচে,
যেমন থেকেছে তারা সহস্র বছর ধরে । চশমার অধিকারী আগলে না দাঁড়ালে জানিনা আজ দেশে হতো ঠিক কী যে,
অন্তত খাতায় কলমে আজ জাতপাত নেই। তবু গোঁফ রেখে খুন হয়
আজকের ভারতেও দলিত তরুণ,
অনার কিলিং ঘটা অতি বাস্তব। সংবিধানও নাকি খুঁজছেন সে চশমা, সন্ধানে নাগরিকও একটু নড়ুন।
অন্ধের কালো ওই চশমাটা সানগ্লাস নয়, ওটা শুধু দেখবার ব্যর্থতা ঢেকে রাখে,
ওটাকে ফ্যাশন ভেবে পরতে যেও না, ওতে সব কালোই দেখাবে। চেনা দেশ হারাবে সে বিলাসের ফাঁকে।
তিনখানা চশমা দেশ থেকে হয়েছে উধাও । চুরি করে কারা তুলে রেখেছে তালা মারা কোনো এক আলমারি তাকে।
পাল্লাটা ভেঙে ফেলে তোলপাড় করে খোঁজো। দরকার ফেরা ওরা সকলের নাকে।
আর্যতীর্থ