। ঠাকুরের ফটো।

হঠাৎ করে ফটোয় সেজে এলেন ঠাকুর আমার বাড়ি,
রাখবো তাঁকে ঠিক যে কোথায় , বিবেচনায় বিপদ ভারি।
তোমরা ভাবো হায় রে আপদ, রাখবি ঠাকুরঘরের তাকে
দুগ্গা কালী লক্ষ্মী গণেশ কৃষ্ণ শিবের ছবির ঝাঁকে,
এমন ভাবেই আসেন তাঁরা, নানান লোকের হাত ধরে যে,
তার পরে তো মন্ত্রে পূজায় সব ভগবান ওঠেন সেজে,
ঠাকুর এলো তোর বাড়ি আজ, সময় এখন পুণ্যতোয়া,
পুজোর ঘরে রাখ আদরে, দিস প্রতিদিন ফুলের ছোঁয়া।

কিন্তু আমার ঠাকুর আবার চান না অমন ভক্তিপূজন,
সবার সাথে থাকেন মিশে, তেঁতুলপাতায় যেমন সুজন।
সিংহাসনে রাখলে তাঁকে পাপ হবে খুব সবাই জানে,
ধুলোমাটির সঙ্গ ছেড়ে বদলে দিলে ভগবানে,
তাঁর বাণীরা ঠোকর খেয়ে হারিয়ে যাবে চার দেওয়ালে
ঠাকুরঘরে রাখলে তাঁকে তাল দেবো ঠিক সেই বেচালে।

পড়শি বলেন, কি মনোহর, সাজাও ফটো বসার ঘরে
এমন ভাবে রাখতে হবে, সবার যেন নজর পড়ে।
অতিথি যে আসবে তারা জানবে সবাই ভক্তি তোমার,
ঢুকলে পরেই স্পর্শ পাবে সাংস্কৃতিক সেই সুষমার,
তেমন হলে বাণী বুনে পর্দা করে জানলা ঢাকো,
দুচারখানা বই সাজিয়ে রাখতে পারো কাঠের তাকও,
মোটের ওপর পাওয়া ফটো ইউজ করো এমন ভাবে,
ড্রয়িং রুমের চেহারাটাই পালটে যাবে সেই হিসাবে।

কিন্তু আমার ঠাকুর যদি ফটোতে হন সজ্জা গৃহে,
গাইবে  কে আর বাউলসাজে হৃদয়পুরের রাস্তা দিয়ে?
যেই বাড়ি তাঁর বইয়ের পাতার রোজ মুড়ে যায় ওপর-কোণা,
দখিন হাওয়ার মতো যে তাঁর সেসব ঘরেই আনাগোনা,
একটা দুটো ছিঁড়লে পাতা দস্যি খুদে পড়তে গিয়ে,
তিনি তখন রোদের মতন মারেন উঁকি জানলা দিয়ে,
কোনো পাতার মাঝে যদি আলতো দেখো হলুদ ছিটে,
তার মানে তাঁর পুজো ছিলো রান্নাঘরের সাধনপীঠে।
পড়শি আমায় যতই বলুন  তাঁর ফটোতে ঘর সাজাতে,
তিনি যে রোজ খেলতে আসেন আমার তোমার, সবার সাথে।

অনেক ভেবে শোয়ার ঘরেই লাগিয়ে দিলাম ফটোটাকে,
ঘুম ভেঙে আর ঘুমে যেতে ভোর আর রাতে দেখি তাঁকে।
মাঝের সময় ঝড়ঝাপটের আভাস পেলেই বাড়াই দুহাত,
অমনি হেসে সামনে দাঁড়ান, আঁধার চিরে আলো হঠাৎ।

একলা চলার পথ বেছেছি, যায় বিপরীত জন-প্রপাত,
প্রথম আলোয় ভরসা জোগান শোয়ার ঘরের রবীন্দ্রনাথ।

আর্যতীর্থ