। শিক্ষক।

( হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও দেখে এত আপ্লুত হলাম যে লিখে ফেললাম। কৃতিত্ব সেই ভিডিওটির স্রষ্টার)

নিরালা ছোট্ট ফ্ল্যাট, বই ঠাসা আলমারি
খবরের জন্য জন্য শুধু খোলা হয় টিভি।
যদিও বাসিন্দাটি বাইরের ঘটমানে নিস্পৃহ ভারী,
জ্ঞানের যাপনে তাঁর  আলাদা পৃথিবী।

বই নিয়ে কেটে যায় দিন।রোজ আরো পড়া,
ঠিকে লোক খাবার বানিয়ে যায়, আর ঘর সাফ।
নি-অতিথ দিনলিপি জুড়ে স্থায়ী শুধু পাঠের মহড়া,
ধুলোটে কলিংবেলে ক্বচিৎ পড়ে কোনো আঙুলের ছাপ।

টিং টং! ঘড়িকে চমকে দিয়ে বেল বেজে ওঠে ।
কে এলো? বৃদ্ধ খোলেন দোর, চেনা নয় মুখ,
সেলসম্যান? না তো.. পরিচয় আটকিয়ে স্মৃতির হোঁচটে,
আবারও চমক দিয়ে প্রণিপাতে নত হয় সে আগন্তুক।

‘ স্যার?’ এতদিনে সন্ধান পাওয়া গেলো আপনার তবে।
আমাকে মনে নেই নিশ্চই। শেষ দেখা সেই ক্লাস থ্রীতে
আপনি ক্লাসটিচার। বড় হয়ে আপনার মতো হতে হবে,
সে চেষ্টা করে গেছি। আইডল মেনে পুজো করেছি নিভৃতে।’

‘ আসুন.. মানে এসো।ক্লাস থ্রীতে দেখে করেছো আইডল,
ভীষণ অদ্ভুত ঘটনা। মানছি, পড়াতাম গোটা মন ঢেলে,
কিন্তু তা বোঝার বয়েস হয়নি তোমার। কত ছাত্রের দল
এসেছে ও গেছে। আমার মধ্যে তুমি কি খুঁজে পেলে?’

‘মনে করাই তবে। ঘটনাটি ভোলবার নয়, এত জোরদার!
অতীশ মুখুজ্যে এলো হাতে ঘড়ি পরে,  বাবা তার ধনী ।
গরীবের ব্যাটা আমি, তবু মনে হলো ওটা চাই যে আমার,
টিফিনে দিলাম ঝেড়ে। সে ও চুরি টের পেলো প্রায় তখনই।’

‘নালিশ পৌঁছালো আপনার কাছে । ক্লাসে বললেন এসে,
‘ যে নিয়েছো দিয়ে দাও, কিছু বলবোনা। এসো নিজে থেকে।’
কিভাবে স্বীকার করি? মান ইজ্জত যাবে লহমায় ভেসে,
বাড়িতে খবর যাবে। নিশ্চুপ রইলাম হাতে মুখ ঢেকে।’

‘কঠিন মুখে আপনি বললেন ‘অগত্যা, নিরুপায়।
করতে হবে সকলকে তল্লাশি’ ।ঘরে আঁটা খিল,
পালাবার পথ নেই । চুরি যদি ধরা পড়ে যায়,
সেই দাগ আজীবন তোলা হবে বড় মুশকিল।’

‘তারপরে ঘটলো সেই আশ্চর্য ঘটনা।আপনার নির্দেশে,
সব কটি ছেলে সারি দিয়ে দাঁড়ালো দেওয়ালের দিক ফিরে,
চোখ বন্ধ । সার্চ করলেন যখন কারো কাছাকাছি এসে,
সেই জানলো শুধু। বাকিদের কাছে ঢাকা সে নাম তিমিরে।’

‘আপনি পেলেন ঘড়িটা। তবু অদ্ভুতভাবে, সার্চ ছিলো চালু,
যতক্ষণ সব্বার না হলো শেষ। অতীশ ঘড়িটা পেলো ঠিক,
কিন্তু জানলোনা কে নিয়েছিলো। ধরা পড়ে আমি আলুথালু,
তবু একবারও বলেননি কিছু ।দেখেনও নি আমি কোনদিক।’

আগন্তুক থামে। বৃদ্ধের মুখ জুড়ে খেলে যায় হাসি অমলিন
‘ এবারে বুঝেছি’। ‘সেই দিন আমি ঠিক করি আপনাকে দেখে,
শিক্ষক হবো। এখন হয়েছি তা, এ জীবন আপনারই ঋণ,
চেষ্টা চালাই রোজ, সেই রোশনাই পায় যেন প্রত্যেকে।’

‘ বুঝেছি, কিন্তু আমি তখনও জানতামনা তুমি কোন ছেলে,
চিনিনি তখনও। সম্ভবই ছিলো না তুমি কে তা বোঝা।’
‘তা কি করে হয়! আপনি তো জানবেনই ঘড়ি খুঁজে পেলে,
বামাল ধরেছেন। তাহলে তো অপরাধী চিনে নেওয়া সোজা।’

‘ বুঝিনি, কারণ সেই খানাতল্লাশে, আমারও দুচোখ ছিলো বোজা’

আর্যতীর্থ