। সাজানো ঘটনা।

রবীন্দ্রনাথ একটি সাজানো ঘটনা।
ওই দেখুন , একটা লাইন পড়েই অর্ধেক লোক দাঁড়ি টেনে হুঃ বলে উঠে চলে গেলেন,
বাকি অর্ধেক কথার ইঁটপাটকেল খুঁজছেন।
আরে মশাই ও দিদিমনিরা , এ বেচারাকে ভুল বুঝছেন ,
তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে,
পঁচিশে বৈশাখে আর বাইশে শ্রাবণে গান কবিতার সামনে সাজানো ফটো না,
আসলে রবীন্দ্রনাথ আদ্যোপান্ত একটি সাজানো ঘটনা।

সাজানো মানে কী? এই যে একটা ভিডিও দেখে একদল ফুঁসে উঠে বলেন ‘ জানতাম ঘাপলা হয়েছে’
আর অন্যদল পাল্টা ফোঁস করেন, ‘ কোনো যান্ত্রিক কারসাজি রয়েছে’
দুটোতেই কিন্তু একটা মিল আছে। ঘটনাটা সাজানোই দুজনের কাছে,
একজন ভাবছেন চিত্রনাট্য মেনে অভিনয়,
অন্যজন স্বর ও অবয়বের পরিকল্পিত বিকৃতি,
কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে সেটা যে আসল ঘটনা নয়,
সে ব্যাপারে একমত দুই বিপরীত স্থিতি।
আর ভাবতে গেলে , ওই ভিডিওটির আগে ও পরেও কিছু ঘটনাবলি আছে নিশ্চিত,
যেটা দুদলের কেউ দেখতে পারছেন না,
নিজেদের ধারণার সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি করেছেন পক্ষপাতিত্বের ভিত।

এবার বলুন তো মশাই ও দিদিমনিরা,
যে পুঁচকেটা  ‘কুমোলপালাল গরুল গালি’ গড়গড়িয়ে মঞ্চে বলে ছুট্টে মায়ের কোলে লুকালো,
আর যে বয়স্ক কণ্ঠের
‘ যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’
শুনে জড়ো হওয়া অন্তিম দশকের পথিকদের দুচোখ ছাপিয়ে
নদী হয়ে গেলো,
এই দুজনের কাছে রবীন্দ্রনাথ কি এক?

‘ ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে’ ..ইউটিউবে সুমনের গলায় শুনে যে দম্পতির চকিত চাউনিতে একটা গোটা কলেজকালীম প্রেমের কাহিনী বুকে তুলে গেলো ঢেউ.
আর নির্মম বিচ্ছেদের পরে ‘ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ হেডফোনে পর পর পঁচিশবার শুনছে যে,
দুজনের রবীন্দ্রনাথ হতে পারে এক কি আদৌ?

আসলে আমরা সাজাই তাঁকে, নিজের মতো করে,
কেউ ঈশ্বর বলে বেদী সাজিয়ে নিই অন্তরে,
কেউ বিষণ্ণতায় নোঙর করি তাঁর কাছে এসে,
কেউ তাঁকে নির্জনতার বন্ধু করি,
কেউ বা সমাবেশে কোরাসে তাঁকে গলায় ধরি।
পণ্ডিত তাঁকে যেমন দেখেন,
দার্শনিক তেমনভাবে দেখেন না মোটেই,
ধার্মিকের কাছে পূজা পর্যায়ের যে নিবেদন উপাসনার অঙ্গ,
নাস্তিকের কাছে তারা ধরা দেয় আলাদা অর্থেই,
যেখানে ঈশ্বরের চিহ্নমাত্র নেই।

সুতরাং ভদ্রমহোদয় ও মহিলাগণ,
রবীন্দ্রনাথ এক নন,
অসংখ্য,
আপনার রবীন্দ্রনাথ, আমার রবীন্দ্রনাথ, ওনার রবীন্দ্রনাথ এঁরা সবাই ওই ভিডিওর মতো,
একেবারে আলাদা আলাদা সব সাজানো ঘটনা।

তবে হ্যাঁ, ফায়দা তুলতে যদি কেউ মঞ্চের থেকে ছুঁড়ে দেন বাণী আর গানের প্রণামী,
তাঁদের জানা দরকার,
কোনো নির্দিষ্ট কাঁটাতারে তাঁকে বাঁধতে যাওয়াটা বোকামি.
কারণ ওই ‘ সাজানো ঘটনা ‘ নিয়ে বাঁচা মানুষেরা জানে..

রবীন্দ্রনাথ কারো সাজানো ঘট না।

আর্যতীর্থ