। পুরুষ।
পুরুষটি অবাক হয়ে ভাবছিলো ।
এই অভ্যেসটা ওর নতুন হয়েছে, সারাদিন ধরে নানান জিনিস
নিয়ে ভেবে যাওয়া।
ও জানে, এটা ওর দল ছাড়া আর কেউ পারে না।
ভয়ানক শ্বদন্ত বাঘেরা পারে না, পাহাড়ের মতো উঁচু ম্যামথেরা পারে না,
এমকি প্রায় ওরই মতো দেখতে ওই নিয়ান্ডারথালগুলো,
যারা ওর মতো কথাও বলতে পারে, পাথুরে অস্ত্রও বানাতে পারে,
তারাও পারে না ।
ভাবতে পারে বলে ওদের দলের সবার একটা ভীষণ গর্ব আছে।
ওরা রোজ নানা জিনিস ভাবা অভ্যাস করে,
তারপর পরস্পরকে সেই সব ভাবনাকে কথা করে বলে।
ওরা এর নাম দিয়েছে, গল্প।
কয়েকটা চাঁদ আগে, ওর পছন্দের নারীটি এমনই একটা গল্প বলেছে ওদের।
সে নারী বলেছে , শিশুর জন্মদানে পুরুষের অবদান স্রেফ ক’ফোঁটা বীর্য,
শিশুর সৃষ্টি থেকে বড় হওয়া আর জন্মের পরও স্তন্যতে নারী ছাড়া গতি নেই আর।
ওরা খেয়াল করেছে, আলো ছাড়া গাছ হয় না,
নারীটি বলেছিলো আকাশের জ্বলা গোলকটার সেই আলো শুধু বীর্যের মতো,
গাছের জন্ম দেয় আসলে তো মাটি,
তাই মাটি নিশ্চিত নারী।
খিলখিল করে হেসে সে নারী জানিয়েছিলো,
ওই নদী বন আর রাতের আকাশের টিম টিম করে জ্বলা অসংখ্য আলো,
কেউ যদি সৃষ্টি করে থাকে অনেক অনেক চাঁদ আগে,
তবে সে নারী ছাড়া আর কিছু নয়।
ওর দলের সকলে সেই দিন ভীষণ আগ্রহ নিয়ে শুনেছিলো এই গল্পটা,
তারপর, সবচেয়ে বড় যেই বুড়ি, সে হেঁকে বলেছিলো,
তাহলে সৃষ্টিকারকে আমরা এখন থেকে মা বলে ডাকবো।
পুরুষটা ভাবছিলো, তার মা’কে কবেই তো খেয়ে গেছে বুনো জন্তুতে
বাপ একা একা বড় করেছিলো তাকে,
শিখিয়েছে বুনো খরগোশ আর সজারু শিকার,
চিনিয়েছে কোন ফল খাওয়া যায়, কোন পাতা বিষ,
পাথর ঘষে সে যে এখন বানাতে পারে তীক্ষ্ণ বল্লম,
সেও তো বাবার থেকে শেখা।
তবে তো নারী না হয়েও তার বাপ তার সৃষ্টিকারীই হলো!
তবে কেন আসল সৃষ্টিকার কেবল নারী হতে যাবে? কোনোভাবে পুরুষ কি হতে পারে না?
তার তো ইচ্ছে করে সৃষ্টিকারকে মা নয়, বাবা ডাক দিতে।
ইচ্ছা! পুরুষটি লাফিয়ে ওঠে!
পাওয়া গেছে! ওই নারীটির থেকে ভালো গল্প বলবে সে এবারে,
দলের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে।
পুরুষটি ভাবে, আরো ভাবে।
তারপর একা একা হো হো হাসিতে ফেটে পড়ে।
সেদিন সন্ধ্যায় সে এক অদ্ভুত পুরুষের গল্প বলে।
যে ইচ্ছে করলেই সব সম্ভব করতে পারে।
ওর পছন্দের নারীটি একবার জিজ্ঞেস করেছিলো বটে,
গর্ভ কোথায় পেলো সেই অলৌকিক ইচ্ছাধারী,
সে হেসে বলেছিলো, কেন, নারী তার ইচ্ছেতে সৃষ্টি হলো, তারপর সেই নারীর গর্ভে হলো
অরণ্য নদী আর যাবতীয় আকাশের আলো!
সবচেয়ে বড় যেই বুড়ি, সেও থমকে গেছিলো।
সত্যি তো, ইচ্ছেতে যে সব কিছু পারে,
সে তো নারীও সৃষ্টি করতে পারে।
ওর পছন্দের নারীটি বলার চেষ্টা করেছিলো, এমন তো কোথাও ঘটেনি,
এমন ইচ্ছায় জন্ম দেওয়া পুরুষ কোথাও কেউ দেখেনি,
কিন্তু বুড়ি বলে দিলো, ইচ্ছে আর ভাবনা, দুটো থাকলে হয়তো বা হতেও পারে,
ওই দূরের পাহাড়ের ওদিকে কত কী যে আছে,
তা তারা কি কেউ জানে?
বুড়ি হেঁকে বললো . এই গল্পটা আগেরটার থেকে ভালো।
তাই এখন থেকে সৃষ্টিকারকে আমরা বাবা বলে ডাকবো।
গর্ভ থেকে নয়, ইচ্ছের থেকে সব সৃষ্টি।
গল্প চলতে থাকলো মুখে মুখে।
হাজার হাজার বছর ধরে সেই পুরুষ নারীর সন্ততিরা
গল্প নিয়ে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে গেলো
এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া।
তারা লিখতে শুরু করলো…
আর পুরুষ ভগবানটি কোথাও ‘ রা’ হলেন, কোথাও ‘ জিউস’, কোথাও বা ব্রহ্মা।
আরো পথ পেরিয়ে তিনি জিহোবা গড আল্লাহ হলেন।
কিন্তু সৃষ্টিকার আর কোনোদিন নারী হলেন না।
আর্যতীর্থ