। পরিচয়।

‘কে তুমি? ‘

‘আমি মানুষ ।এই পৃথিবী আমার জন্মভূমি।’

‘সৃষ্টি কবে ?’

‘এক ল্যাজহীন বানরের জন্ম  দু লক্ষ বছর আগে, আফ্রিকার কোথাও হবে।’

‘মোটে দুই লাখ? তার আগে? ‘

‘পৃথিবী ভর্তি ছিলো  ম্যামথ , ম্যাস্টোডন, খড়গদাঁত বাঘে।’

‘শুরু সেখান থেকে?’

‘ধ্যুৎ! তারও আগে ডাইনোসর, টিরানোসরাস রেক্স, ডিপ্লোডোকাস আর টেরোডাক্টিলরা গেছে ছাপ রেখে। ‘

‘আরো আগে কিছু আছে?’

আছে তো !তাদের ফসিল কত ছড়িয়ে রয়েছে আজও আনাচে কানাচে,
এই ভাবে ছোটো হতে হতে একদম এককোষী প্রাণী।

‘বেশ। ওখানেই শুরু এ কাহিনী?’

‘উঁহু তারও বহু বহু আগে সাড়ে চারশো কোটি বছর পেছোলে পৃথিবী জন্ম নিলো,
আর সাড়ে তেরোশো কোটি বছর আগে নাকি বিগ ব্যাঙ হয়েছিলো।’

‘এই দাঁড়াও দাঁড়াও, এভাবে ব্যাখ্যা দিলে গোটা নাটকের মধ্যে একদম ছোটখাটো, এক মিনিটের রোল।
আবার প্রশ্ন করো। এত ছোটো হয়ে গেলে  ভারী গণ্ডগোল ।’

‘আচ্ছা। বলো তুমি কে?’

‘আমি আধুনিক মানুষ। পায়ের নিচে রাখি গোটা পৃথিবীকে।’

‘এত ক্ষমতা তোমার?’

‘ভাণ্ডার দেশে দেশে লক্ষ প্রলয় ডাকা আণবিক বোমার,
আমার ক্ষমতায়  অরণ্য বিলীন হয়ে নগরের ওঠে
সমু্দ্র সরিয়ে দিয়ে বহুতল চুমু খায় আকাশের ঠোঁটে,
যে কোনো প্রজাতির কমাবাড়া আমার সখ ও প্রয়োজনে ।’

‘বাহ! ঝড় আর বন্যাও বুঝি কথা শোনে?
প্রলয় আনতে পারো, সৃষ্টি করাও কি  বাঁ হাতের খেলা?’

‘ওই দেখো পুনরায় বাঁধালে ঝামেলা।
আমি শুধু নিই, মাটি থেকে, জল থেকে, পাহাড় আর বন থেকে।
সীমানাতে সব বাঁধি আমার আমার হেঁকে,
সৃষ্টি যা করি সব আমারই দরকারে, তার বেশি করিনি কখনো।’

‘তার মানে পৃথিবীর কাজেই আসো না কোনো?
বলিউডি সিনেমার মতো তুমি অবিমিশ্র এক স্রেফ খলনায়ক?’

‘ওহ! ফাঁদে ফেলে দিয়েছো আমাকে , আবার প্রথম থেকে হোক।’

‘আচ্ছা, আরেক বার। দাও পরিচয় ।’

‘আমি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ধর্ম ভাষা ও দেশ যতগুলো হয়,
আমারই কীর্তি সে।
আমার বানানো গীতা বাইবেল  কুরান , আমি বানিয়েছি ভেবে সব ভগবান,
আমারই রচনা সব গান ও কবিতা, সুর তাল ছন্দ সোনাটা রাগিনী,
সামনে এগিয়ে যাই বিনা দৃকপাত, রোজ অতীতের থেকে আরো বেশি জানি।’

‘বাবাহ! লম্বা ফিরিস্তি দিলে বেশ। মানছি ধর্ম ভাষা দেশ ,
আর যা যা বললে সব তোমারই আবিষ্কার।
তাহলে কি দায় নেবে আজ অবধি ঘটা সব গণহত্যার?
অথবা পরিকল্পনা করে  ধর্ম দেশের নামে গণধর্ষণের?’

‘অ্যাই শোনো! সহ্য করছি ঢের,
অনেক চলেছো করে প্রশ্ন করার এই অসহ্য ন্যাকামি।
কি দরকার বলো , জেনে কী করবে শুনি কে আমি?
আর তুমি কোন হনু হও শুনি?’

‘ চতুর্থ মাত্রা হয়ে মুহূর্ত গুনি, তোমরা দিয়েছো নাম শুনেছি ‘সময়’।
আসলে এ জানাটা আমার জন্য নয়।’

‘তবে কার? আমি কে সেটা জানা কার দরকার?’

‘এখনো বোঝোনি সেটা? শুধুই তোমার।

তাছাড়া পরিচয়ে  যায় আসে কার?’

আর্যতীর্থ