। না-পোশাক।
কাজের থেকে ফেরার পথ আটকে একটা মিছিল যাচ্ছিলো ।
‘ ভোট দিন , ভোট দিন, আমাদের চিহ্নে ভোট দিন!’
উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো,
এ আবার কি! স্বনামধন্য প্রার্থীটি যে একেবারে বস্ত্রহীন!
প্রথমে ভাবলাম ভুল দেখছি। চোখ কচলে আবার দেখলাম,
নাহ! একেবারে ঠিক। জন্মদিনের পোশাকে একেবারে উদোম উনি,
আমার কাছে এসে গদগদস্বরে বললেন মনে রাখবেন আমি অত নম্বর বোতাম,
টিপে দিলেই ব্যাস! পাঁচটা বছর নির্বাচন থেকে মুক্তি তক্ষুনি!
আমি সেলাম করে বললাম সে নয় বুঝলাম, কিন্তু এইভাবে কেন?
নেতা হাঁ করে ঝাড়া পাঁচমিনিট তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে,
তারপর জিভ হাল্কা বের করে বললেন, ন্যাকা! জানেননা যেন,
এটা না-পোশাক। রাজাদের ইস্টাইল, এখন মিলছে প্রিন্ট গণতান্ত্রিকে।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ি ফিরছি, হঠাৎ দেখি হুটোপাটি হচ্ছে ভীষণ ,
একদল ছোকরা এসে কমজোরি পার্টিদের পতাকা নিচ্ছে খুলে,
হরণের নিপুণতা দেখে রীতিমতো সন্দেহ হয় ওদের কোচ নির্ঘাত দুঃশাসন,
মানে এভাবে নির্বলকে বেআব্রু করার তিনিই তো আদতে মূলে,
তাই আর কি ।মজার ব্যাপার হলো, যদিও ওয়ান শটার, লাঠি ছুরি ইত্যাদি আছে ,
কিন্তু ওসব ছাড়া ছেলেগুলো ন্যাংটো। ওদের মধ্যে একজন আধাচেনা বেরোলো,
তার দিকে দাঁত কেলিয়ে বললাম ‘ভালো?’ দেখছি না-পোশাক পরেছো নেতার ধাঁচে,
আজকাল ইস্টাইল বুঝি এটাই?’ ‘শুধু জেতা পার্টির দাদা’’, ছেলেটা বোঝালো,
‘হেরে গেলেই গায়ে পোশাক চড়াতে হবে।’ আমি বললাম, কিন্তু ভোট তো এখনো..
একটা উলঙ্গ ছেলে অমনি ধমক দিয়ে বললো, ফুটুন তো মশাই! ভোটের দিন দাঁড়াবেন লাইনে ,
তার বেশি আর চিন্তা করেন কেন! আমরা চাইলে এখন থেকে বলে দিতে পারি মার্জিনও,
কিন্তু গণতন্ত্র বলে একটা ব্যাপার আছে না! আমাদের ভীষণ আস্থা সং-বিধান আর আইনে।
অতগুলো পোশাক না পরা মানুষ দেখে মাথা ঘুরছিলো বোঁ বোঁ করে।
একটা গলি ধরে বাড়ির দিকে শর্টকাট করতে যেতেই, আরেকটা মিছিল, একেবারে সামনেই।
এখানে প্রার্থীর পোশাক পরা দেখে বুঝলাম, এরা শুধু ‘ভাটকতে হুয়ে আতমা’ হয়ে ঘোরে,
জয়ের মুখ দেখেনি এখনো , সম্ভাবনাও কম । গণতন্ত্রতে এমন দলের কোনো দাম নেই,
কারণ শূন্যকে তো কেনা বা বেচা যায়না। বলতে বলতে প্রার্থী আমার কাছে এলেন চলে,
তারপর হাতজোড় করে বললেন, আমাদের জিতিয়ে দেখুন দাদা এবারে,
কথা দিচ্ছি না-পোশাক বিশ্বময় ফ্যশন করে দেবো । ফালতু ভাববেন না এখন পোশাক পরি বলে,
ক্ষমতায় এলে আমাদের দল ওদের থেকে অনেক বেশি উলঙ্গ হতে পারে।
মিছিল সামলে কোনোরকমে বাড়ি ফিরে দেখি, দরজার তালা ভেঙে হয়ে গেছে চুরি,
চারদিকে দেশ বাঁচাবার এত মিছিলের ফাঁকে, ছাপোষার ঘরে হলো বিপদের হানা,
সব ফাঁকা হয়ে গেছে। ব্যাঙের আধুলি সব কাঁচিয়ে নিয়েছে, গিয়েছে বিয়েতে পাওয়া আংটি ও ঘড়ি,
আর গেছে আলমারি থেকে সব কাপড় ও জামা। এবারে করবো কি যে সেটা অজানা।
অভাগার না-পোশাক তবুও হবে না। বাথরুমে ঝুলে আছে গামছা দুখানা।
আর্যতীর্থ