। লাশ হওয়া নিরস্ত্র মানুষটা।

লাশ হওয়া নিরস্ত্র মানুষটা
দুঃস্বপ্নে সৈনিককে এসে বলে
‘ আমাকে মারলে কেন? ‘
সৈনিক গোঁ গোঁ করে
অসহায় গোঁয়ারের মতো বলে ওঠে
‘ হুকুম’
উঠে বসে ধড়মড় করে, জল খায়,
বাথরুম যেতে গিয়ে ডরায় খানিক,
আঁধারের মাঝে আরো গাঢ় অন্ধকার হয়ে
কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন,
চির-ঘুম দিলো যাকে,
কাচিয়েকুচিয়ে কেড়ে নিয়েছে সে ঘুম,
কেন যে মারলো সেটা এখনো
নিজেকেও বোঝাতে পারেনি সে ঠিক।

লাশ হওয়া নিরস্ত্র মানুষটা
বিচারকের স্বপ্নে এসে সওয়াল করে,
‘ আমার খুনীদের বিচার হবে কবে?’
বিচারক আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করেন
‘ইয়ে, কত নম্বর কেস? আমার এজলাসে তো..’
মানুষটা বলে , ‘এরই মধ্যে ভুলে গেলেন?
কবরের মাটি তো নরম এখনো!’
বলেই সেই ফোনে ফোনে ঘোরা ভিডিওর মতো সে
দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,
বিচারক প্রাণপণে চেঁচিয়ে বলতে যান,
‘ শুনানিটা হতে দাও অন্তত..’
বোবা ধরা শূন্যতা নিয়ে জেগে ওঠেন তিনি।
এখনো কানে বাজছে বিদেহীর স্বর,
‘ শাস্তি পাবে না ওরা একজন-ও।’

লাশ হওয়া নিরস্ত্র মানুষটা
শাসকের স্বপ্নে এসে বলে,
‘ এটাও তো স্বাধীনতার লড়াই।
আমার পরিবার কোটা পাবে না?
পাবো না আমরা কোটা?’
শাসক স্বপ্নেই চেঁচিয়ে উঠেন,
‘তুমি রাষ্ট্রবিরোধী! লজ্জা করে না এভাবে কালি দিতে দেশের নামে ?’
লাশ নিজের বুকের বুলেটের ক্ষত’য়
আঙুল চালিয়ে দিয়ে বলে,
‘এ রক্ত তো আমার দেশের মাটিই ভেজাচ্ছে!
শিক্ষার অধিকার,
শিক্ষার পরে কাজের অধিকার,
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার অধিকার পেতে
নতুন সূর্যের দিকে শুরু হলো ছোটা,
ওই শুনুন ,
কারা শ্লোগান দিচ্ছে, ‘ পা চালিয়ে ভাইইই,
মিছিলের কদম যেন না থামেএএ..’

শাসকের ঘুম ভেঙে যায় ।
সত্যিই কি ভাঙে? তিনি টের পাচ্ছেন,
তাঁকে বাদ দিয়ে দেশ আগামীর পথে হাঁটছে!

তাঁর চোখের সামনে ‘শহীদ’ বানানটা ভেঙেচুরে ‘ সঈদ’ হয়ে যাচ্ছে..

আর্যতীর্থ