। কার দিকে।

‘কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!’

সুনীল গাঙ্গুলীর এই লাইনটারই কোনো ভাষ্য মুখে নিয়ে বন্দুকবাজের সামনে যে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালো,
তার মাতৃভাষা বাংলা নয়,
হলেও সে সুনীলের কবিতা পড়েনি।

সে হয়তো মায়ানমারে
সামরিক প্রভুদের সামনে দাঁড়ানো
ফসলে অসফল সাতদিন খিদেপেট বার্মিজ চাষী,

অথবা সীমান্তে সন্তান হারানো
ইউক্রেনীয় দোকানদার,
উদ্দেশ্য সামনের সদ্য কুড়ি পেরনো রাশিয়ান যোদ্ধাটি,

অথবা অসংখ্যবার ধর্ষণের পরে কন্যা ফেরত পাওয়া নাইজেরিয়ান প্রৌঢ়া,
বোকো হারামের ‘ আল্লা হু আকবর’ হুংকারিত যুবকের রাইফেল তার দিকে তাক করা,

অথবা নিতান্ত কাছের মণিপুরে মেইতেই বা কুকি কলেজপড়ুয়া,
ঠিক বিপরীত উপজাতিটির ওরই বয়েসী যুবকটি উল্টোদিকে,
হাতে পুলিশের থেকে চুরি যাওয়া বন্দুক,

অথবা হামাস জঙ্গীর সামনে দাঁড়িয়ে তরুণ ইজরায়েলি বেহালাবাদক ,
অথবা ইজরায়েলি সেনার সামনে দাঁড়ানো প্যালেস্তিনি অধুনা বেকার রুটিনির্মাতা
অথবা আমেরিকান কিন্ডারগার্টেনে ঢোকা খুনে বন্দুকবাজের প্রতি এ উক্তি কোনো প্রাইমারি শিক্ষিকার..

অথবা
অথবা
অথবা..

আরো হাজার একটা পরিস্থিতি দুশো চারখানা দেশ জুড়ে,
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হচ্ছে,
একদিকে বন্দুকধারী , অন্যদিকে নিরস্ত্র নাগরিক,
সবাক বা নির্বাক প্রশ্ন ছুটে আসছে
‘ কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!’

আর সব ক্ষেত্রেই
বন্দুকধারীটি মাথা বা বুক তাক করে হেসে বলছে
‘ ঠিক তাই। সেই জন্যই তো’

তারপর ‘গুড়ুম!’ লাশের দিকে না তাকিয়ে সে হেঁটে চলে যাচ্ছে আগামী শবের সন্ধানে।

এই বন্দুকধারীটি কি মানুষ?

উত্তর ‘ না’ হলে , এই নামানুষ প্রজাতিটির সংজ্ঞা কী?

আর যদি ‘ হ্যাঁ’ হয়, দরজার দিকে দেখতে থাকো।
আজ হোক কাল হোক, একদিন সে তোমার দোরে আসবেই।

মনে রেখো, সুনীল গাঙ্গুলি কেন, সে কারোরই কবিতা পড়েনি।

আর্যতীর্থ