সূত্র: শরশয্যাশায়ী ভীষ্মের কাছে যুধিষ্ঠিরের রাষ্ট্রশিক্ষা।

                        । ইতি গজ।

তাড়াতাড়ি যাও ধর্মের রাজা, জানোই তো উনি মৃত্যুশয্যায়,
আর কয়েকটা দিন মোটে, তারপরে শেষ হবে এক অধ্যায়,
এ সময়ে শিখে নাও রাষ্ট্রের নানাবিধ কৌশলী খেলা,
আহা তুমি রাজা আজ, সামলাতে হবে কত ফালতু ঝামেলা,
গতায়ু বৃদ্ধের থেকে শেষ উপদেশ কিছু নিলেই বা, ক্ষতি কি,
জনগণ  বুঝবে না তোমার এই দেখা করা ঢংটা প্রতীকি,
তারা ভেবে নেবে ঠিক তোমার যা শেখবার, সব নিলে শুষে,
কে আর দেখতে যাবে কখানা পেরেক ঠোকো জনতার রোজ বওয়া ক্রুশে?

ভেবে দেখো হে ধর্মের রাজা, ওই বৃদ্ধের কোলে খেলে হলে বড় ,
তবু তো বিঁধেছো বাণে ,  শিখণ্ডী খাড়া করে কি উপায়ে লড়ো,
সেটা বড় কথা নয়, মোদ্দা কথাটা হলো তুমি গেছো যুদ্ধটা জিতে,
শরবিদ্ধ হয়ে বৃদ্ধ শায়িত আজ, তোমার প্রাসাদ ওঠে ওঁর গড়া ভিতে,
সে কথা ভুলিয়ে দিতে তড়িঘড়ি যাও বোসো বুড়োটার কাছে,
সাক্ষী প্রচুর রেখো, সংবাদ যাক চলে আনাচে কানাচে,
যদ্যপি হত্যাকারী, তবুও তুমিই ওঁর একমেবাদ্বিতীয়ম উত্তরসূরী,
প্রচার তো তোমার হাতেই। সত্য লুকাতে পারে কৌশলে পুরোপুরি,
সেসব তোমার জানা , সেই যে হত হেঁকে ইতি গজ ফিসফিসে বলা,
রাষ্ট্রের প্রথমপাঠ আদতে সেটাই! রাজা তো হতে না বাপু বিনা সেই ছলা!

সময় আসছে কমে, শিগগির  যাও ওই তিরে বেঁধা জ্ঞানীর সকাশে,
উনি শেখাবেন জানি প্রজার বিপদ হলে রাজা যেন থাকে তার পাশে,
দেশে মারী এলে তোমার প্রাসাদ গড়া থামাবে কি চালু রেখে দেবে,
সেই আলোচনাখানা অবশ্য হবে না। তোমাকেও তাঁর মতো ভেবে
উনি বলবেন অনাবশ্যক বোঝা চাপিও না কর বলে প্রজাদের কাঁধে,
তুমি কান দেবে কেন, সকলে শুল্ক দেবে  কতিপয় অমাত্য বাদে,
সেভাবে চালাতে থাকো দেশ । দেবেন  প্রাচীন জ্ঞান ওই মৃতপ্রায়,
যোগ্য ও জ্ঞানী  যেন রাষ্ট্রের কাছে যথাযথ মান আর মর্যাদা পায়,
তুমি শুনো শুধু । যোগ্যতা ও জ্ঞান সংজ্ঞাটা ঠিক করা তোমার ওপরে,
সে চাকায় তেল দিও, তোমার রথের গতি ক্রমাগত দ্রততর হয় যার জোরে।

যাও ধর্মের রাজা,  তাড়াতাড়ি যাও,  শুনে এসো রাষ্ট্রের সুশাসন মন্ত্র,
বৃদ্ধের আয়ু শেষ , তবু তিনি চান যে শেখাতে। শিখবে না সে কথা স্বতন্ত্র,
তবু ভান করো । কটা দিন পরে আর সুযোগ পাবে না ।

দেশরূপী দেহখানা ত্যাগ করবেন ওই তিরে শোওয়া বুড়ো গণতন্ত্র।

আর্যতীর্থ