। দাগ।

মেয়েটার গায়ে সাদা দাগ। পরিভাষা বলে ভিটিলিগো।
পড়শীরা ঠারেঠোরে বলে, কোনোদিনও বিয়ে হবে কি গো?
কেউ কেউ  আবছা না অত, ঠোঁটকাটা কথা বসে কেটে,
এই মেয়ের বিয়ে দিতে হলে, মালকড়ি রেখো হে পকেটে।

মেয়েটা ছোটোর থেকে শোনে, চামড়াটা ওর বড় খুঁত,
আর কিছু দেখবে না কেন, সে  ভাবনা ভারী অদ্ভুত।
তবু সেটা বড় বাস্তব, সেই মেয়েটা পদে পদে বোঝে,
চামড়া ও ফিগার পেরিয়ে, নারীতে মানবী কেউ খোঁজে?

তার ওপরে এই দেশে হলে, বিয়েটাই মোক্ষ যে তার,
যে মহলে হয়ে যাক যত, মেয়ে স্বাধীন  বলে চিৎকার।
শেষ অবধি ওখানেই আসে, সামাজিক তাবত নজর,
ফিসফিসে আলোচনা চলে, ‘বিয়ে কেন হচ্ছে না ওর?’

মেয়েটার কথাতেই ফিরি, সে জানতো সে-ই ভারী খুঁতো,
কোনোখানে যেতে হলে তাই, ঢেকেচেপে চামড়া লুকাতো।
জেনে গেছে সামাজিক স্থিতি,  প্রেম নিয়ে ভাবে না বিশেষ,
এদিকে সে পড়াশোনা শেষে , চাকরি পেয়েছে ভালো বেশ।

একদিন নিভৃত মুকুরে  , প্রতিবিম্বটি বলে তাকে,
খুঁত নয়, স্বাতন্ত্র্য এটা,  মেনে নাও এবারে আমাকে।
লোকে কী বলতে পারে ভেবে , এতদিন যে রূপ লুকালে,
এবারে সে প্রকাশিত হোক,  দেখো না সে কি আগুন জ্বালে।

সেইমতো মেয়েটা বেরোলো, আর নয় দাগ রাখা ঢেকে,
যে যেমন, সেরকমই ঠিক, বহু ঠেকে অবশেষে শেখে।
মোটা রোগা সাদা কালো, দেঁতো বেঁটে আর যাই আছে,
গর্ব বা লজ্জার নয় , জিন বয়ে ঠাঁই নানা ছাঁচে।

মেয়েটা আলোতে এসে দেখে, শেষ যেই লুকোচুরি খেলা,
জীবনের থেকে গেছে মুছে, সামাজিক বিবিধ ঝামেলা ।
এখন সে হাতকাটা পরে, ফ্যাশনের যেমন চাহিদা,
দাগ কেউ দেখলে দেখুক , মিলমিশে নেই কোনো দ্বিধা।

তোমাদের চুপিচুপি বলি, কানাঘুষো কাহিনীরা বাড়ে,
মেয়ের নাকি শীত গেছে কেটে , বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
আয়নাটা রোজ হেসে বলে , কোনকালে তুই জিতে যেতি,
সাদা দাগ খুঁত নয় তোর, শুধু যদি আগে টের পেতি।

দাগগুলো প্রেরণা মেয়েটার । পরিভাষা বলে ওকে শ্বেতী।

আর্যতীর্থ