। বিপ্লবীদের প্রতি।
কাঁটাতারে ছিঁড়ে যদি একজনও হিন্দুকে এদেশে পালিয়ে আসতে হয়,
আপনারা হেরে গেছেন।
একটি মন্দির বা গির্জায় আঁচড় পড়লে বিশ্ব বুঝে যাবে,
বিপ্লবীর মুখোশ পরে এসেছে মৌলবাদ শুধু,
যারা নজর রাখছিলেন কোনো পরিবর্তনের আশায়,
‘ধুত্তোর’ বলে তাঁরা অন্য খবরের দিকে যাবেন।
প্রথম পরীক্ষায় আপনারা কিন্তু ফেল করেছেন।
দড়ি ধরে মারো টান-এ শাসককে ফেলতে গিয়ে
যাঁর কারণে আজ আপনারা আজ স্বাধীন সত্তার অধিকারী,
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সমভাবনার অংশীদার,
তাঁরই মূর্তি ভেঙেছেন আপনারা।
উনি না হলে মাতৃভূমিকে এভাবে পেতেন না,
কী মনে হয়, যদি অভ্যুত্থানের অছিলায় তাঁকে মেরে না ফেলা হতো,
তবে এই আন্দোলনের দরকার হতো আপনাদের?
উনি যে আপনাদেরই পক্ষে,
নিজের রক্তের বিরুদ্ধে,
সে কথা না বুঝতে পেরে প্রথম পরীক্ষায় ডাহা ফেল করলেন আপনারা।
ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারীকে সিংহাসন থেকে নড়ানো খুব কঠিন,
আরো কঠিন সেখানে আরেক স্বৈরাচারীর বসা আটকানো।
এতদিন আপনাদের লক্ষ্যটি সোজা ছিলো,
‘ শাসক এর পতন’
কিন্তু সেই কাজটি হয়ে গেলে তারপরে কী,
সেটা নির্দিষ্টভাবে ছকা ছিলো না।
এর আগে, আপনারা ছিলেন এক, ‘স্বৈরাচার-বিরোধী’।
এখন আপনারা অনেক ও আলাদা।
সেনাবাহিনী চাইবেন ক্ষমতায় আসুক তাঁদের পছন্দের লোক,
মৌলবাদীরা চাইবেন আসুন অন্য একজন,
গণতন্ত্রবাদীরা চাইবেন ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাচিত সরকার,
হিন্দুরা চাইবেন এক,
ইসলামীরা চাইবেন আরেক,
ছাত্ররা চাইবেন এক,
গৃহস্থেরা চাইবেন আরেক,
ধনীরা চাইবেন এক,
খেটে খাওয়া মানুষেরা আরেক,
আর এই অজস্র চাওয়াগুলোর ফাঁক আর ফোকর দিয়ে
টুক করে বসে পড়বেন এমন একজন,
যার নাম আর দল আলাদা হলেও শাসন অবিকল অতীতের কপি।
দেশ গঠনে ধ্বংসের অংশটি হয়ে গিয়েছে।
এবার গড়ার পালা।
স্রেফ স্বৈরাচারীর পরাজয়েই মেলে না বিজয়মালা,
সেটা ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত,
বরং সে ঢেউয়ে উঠে এসেছে আরো এক স্বৈরাচারী,
যার দাঁত নখ আগের চেয়ে বহুগুণ শাণিত।
ভেবে দেখবেন, আপনাদের বিপ্লব তেমনই সম্ভাবনার জন্ম
দেয়নি তো?
কাঁটাতারের এপাশ থেকে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আমরা নজর রাখছি।
উত্তর তাড়াতাড়ি পেলে ভালো হতো।
আর্যতীর্থ