আমাদের শহর আজ ভিখিরিতে ভরে গিয়েছে
গলির পুরোনো রাস্তায় তারা আড্ডা জমায়
অনেকদিন আমি একথা বিশ্বাস করিনি
তুমুল ঝগড়া করে কাটিয়েছি দিন।

নগরীতে নতুন রং করা জেলে
আমি পুরোনো কয়েদির গন্ধ খুঁজি,
কোনো এক বিপ্লবীকে রাখা হয়েছিল এখানে
অনেক কঠিন তার বাক্য
খুব সহজে বুঝতে পারেনি কেউ
অথবা চেষ্টা করেনি কেউ।
বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে তার চলার পথ
আমি অনেক খুঁজে খুঁজে দেখেছি,
তার থালা-বাসন, তার আমলের কয়েদি
চন্দ্রমল্লিকার ঝোপটা পর্যন্ত।
আমি খুব সকালে পৌছে গিয়েছিলাম
প্রকান্ড দেয়াল ঘেরা জেলের দরজায়
পাহারাদার সেন্ট্রি আমায় দেখে অনেক দুঃখ নিয়ে বলেছে
তার সন্তানদের নাকি খাবার জোটে না,
আমি জানতে চাইনি ক্যানো
শুধু হাতে সময় দেখে জেনেছিলাম
তার আসার সময় হয়েছে।

বিপ্লবীর লোভে আমি চড়ুইয়ের মতো
দেয়ালের কোনায় ঘর বেঁধেছিলাম
বানোয়াট স্বাধীনতার পরোয়া করিনি কখনো।
বিপ্লবী যে কবির মতো ছলনা জানে
বুঝতে পারিনি।

কয়েদিরা কবির গল্প বলতো
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি তা শুনেছি
তারা বলতো,
কবি সত্য বলতেন
এমন সত্য নাকি আর কাউকে বলতে শোনেনি তারা,
কবি অনেক কিছু লিখে গিয়েছেন
এই দেয়ালে, বারান্দায়,  গোলাপের মুখে,
তারা সবকিছু মনে রেখেছে
কিন্তুু,
তারা কেউ বিপ্লবের খবর জানতো না।
আমিও আর কথা বাড়াইনি
তার আসার সময় হয়েছে
আমি গতকালের পোশাক বদলে
গায়ে অল্পদামি আতর মেখে
জেলগেটের দিকে পা বাড়ালাম।

জেলগেটের দরজা বন্ধ
নিস্তব্ধতার ধুলো আছরে পরে বুকে
পাহারাদার আমায় জানিয়ে দিল কেউ আসেনি
বহুকাল এমনই বন্ধ জেলগেটের দরজা,
সহসা আমার হুস হল
আমি উদ্ভ্রান্তের মতো রেজিস্টারের পাতা উলটে চলেছি
বছরের পর বছর পেরিয়ে
কবির সেই মাহিন্দ্র ক্ষণে
এন্ট্রি খাতায় লিখা আছে
সেদিনও কেউ আসেনি।