তাকে প্রথম দেখি পার্কের রং ওঠা বেঞ্চটায়
সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হতে চলেছে তখন।
ল্যাম্পপোস্টের আলো আঁধারির মাঝে
কম দামি গাড় লিপিস্টিক আর মেকআপের সাজে
এক নজরেই চেনা যায়,
নিশিকন্যাদের একজন সে।
চোখে দুর্দমনীয় আকর্ষণ মেখে
দেহের পসরা সাজিয়ে
বসে ছিলো নতুন কারো অপেক্ষায়,
ক্লান্ত সন্ধ্যের আলো ছায়ায়।
ঝাঁঝালো কিন্তু অসম্ভব মায়াময়
সে সৌন্দর্যের ছটা থেকে চোখ ফেরানোই দায়।
কিছুদিন পর-
সেদিন অফিস থেকে ফিরছিলাম বাড়িতে
কিছুটা যেতেই পার্কের পাশে
লোকজনের জটলা দেখে
থেমেছিলাম কিছুক্ষনের জন্য।
ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতেই, ওমা, একি!
রক্তাক্ত, দোমড়ানো এক নারীদেহ
এতো সেই নিশিকন্যা, যাকে সেদিন রাত্রে দেখি।
পাশের এক মুরুব্বি চাচাকে ডেকে
প্রশ্ন করলাম, "চাচা, কাহিনীটা কি?"
"আর বইলো না বাজান। বেশ্যা মাগি-
দেহ বেচা বাদ দিয়া ভালা হইতে গেছিলো আরকি।"
শুনে কৌতূহল বাড়লো আরো, প্রশ্ন করলাম,
"চাচা, ব্যাপারটা কি খুলে বলেন দেখি?"
"আরে বাবা, কলিকালে আর আছে কি দেখার বাকি!
বেশ্যা মাগিরও প্রেমিক হয়, শুনেছে কেও?
দেখেছো কোথাও নাকি?"
কথায় কথায় জানলাম তারপরে,
পাশের বস্তিতেই থাকতো সে, বড় রাস্তার ওপারে।
ভদ্র ঘরের মেয়ে, কে জানে-
কিভাবে সে এসেছিলো এখানে। কি কারনে,
কোন অপরাধের বোঝা নিয়ে, কে জানে!
সে যাই হোক, সেই মেয়েটি পড়েছিলো কারো প্রেমে
বিশ্বাস হতে চায়না। তবুও, ভাবি আবার, সেও মানুষ-
মন আছে তার, নষ্ট জীবন হয়তো বাঁধেনি তাকে ফ্রেমে।
তাই চেয়েছিলো সে হয়তো পালিয়ে যেতে
নষ্ট শহরের শত পঙ্কিলতা থেকে, হাত ধরে। কারো সাথে।
কিন্তু নষ্ট শহর প্রাচীর তুলেছে,
বন্ধ করেছে ছিলো তার পথ যত
ওহ! ভুলেই গিয়েছিলাম, এতো সেই শহর, যেখানে-
ফেরার জন্য নেই কোন পথ,
আছে নষ্ট হওয়ার পথ শত শত।
ধুর ছাই! এসব বলে কি হবে!
লোক দেখানো ভদ্র সেজে নোংরামি করে যারা-
এসব দেখেকি তাদের লজ্জা হবে?
এখানে-
রাস্তার পাশে ধর্ষিত হয় নারী
পথে ঘাটে ভীড়ে গায় হাত দেয়,
আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি, হাসি-
তবু, বাধা দেই নাকো কেওই!
নষ্ট আমরা, নষ্ট সমাজ, নষ্টেরা আজ বসেছে উপরে গিয়ে
নষ্টের মাঝে ভালো হওয়া আজ- বিড়ম্বনা, অপরাধ সবচেয়ে।
-০৯/০২/২০১৫