নীলাদ্রি সময়ের কথন
নীলকণ্ঠ বিষাদের অশ্রুর ভেতর
আকাশ জোড়া ঘোর কৃষ্ণবর্ণ মেঘ। কিছু কিছু স্বপ্নের দিন থাকে , সত্যি সত্যি ঝালমুড়ির জন্য , সত্যি সত্যি কাঁথামুড়ি নিদ্রার জন্য অথবা সত্যি জম্পেশ একটা কাল্পনিক গল্পের খসড়ার জন্য। সেদিন স্বপ্নের মেঘ বুড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় , হতাশা ছাড়িয়ে আরো অনেকদূর। কালির দোয়াতের মতো তরল সব ইচ্ছেপূরণের ঝাঁপি খোলে , কোনো একটা ঝর্ণা কলমের কোনকালে শেষ করে ফেলা লেখার পুনরাবৃত্তির জন্য ।
"এখানে কিছু পুরোনো লেখা আছে তাঁর | জীবনে কোনদিন দ্বিতীয় না হওয়া কোনো এক বিদ্বানের গল্প।| ধর্ম সম্পর্কে তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাঁর গোছানো মতামত। তোমার গবেষণার জন্য লাগলে তুমি নিয়ে যেতে পারো।" কথাগুলো তাঁর সহধর্মিনীর।
আমি আপন মনে হাসছিলাম। গতকালের কলামে নীলাদ্রির সাম্প্রতিক লেখা বেরিয়েছে। ধর্ম তো ধর্ম , ধর্মের সংজ্ঞাকেও ধুয়ে দিয়েছে। ওর জন্য আমার মাঝে মাঝেই দুশ্চিন্তা হয়, তীব্রভাবে। আর সেইসাথে মনে হয় ,কোনো দিন লেখা এই মনীষীর জীবন সত্যের সাথে নীলাদ্রির দেখা সত্য কতোখানি বিপরীত , কতখানি আত্মঘাতী একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ! আমার মতো চুনোপুঁটি সেখানে টিকতে পারবে তো !
তবে স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই । আছে কি ?
প্রান্তিক স্বপ্নের তীর্থযাত্রায়
(নীলাদ্রি র কথা)
যে জীবন গহীনের স্বপ্ন দেখায়,
সে জীবন ছন্নছাড়া, যাযাবর জীবন নয়,
তারও উদ্দেশ্য থাকে, প্রয়াস থাকে গন্তব্যে
পৌঁছবার,
পতনউন্মুখ জলপ্রপাতে র উৎস-মুখ
খুলে গেলে ,
তাকে যেমন ধরে রাখা যায়না,
তেমনি
ধরে রাখা যায়না এই তীব্র তাড়নাকে,\
তখন একটা
কিছু ঘটনার কারণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়
এই অঘটনঘনপটীয়সী জীবনে
বিষন্ন বিকেলের সোনালী আভা তোমার চুলে
এসে পড়লে আমার এখনো বাঁচতে ইচ্ছে করে,
তোমার অজান্তে তোমার চুলের ভেতর প্রাণ ভরে
শ্বাস নিতে
ইচ্ছে করে, এই ক্ষুদ্র ইচ্ছে গুলো নিয়ে
বাকি জীবনটা
কাটিয়ে দিতে চাই আমি,
ভাবতে চাই,
বাঁচতে চাই সেখানে, মৃত্যু যেখানে হানা দেয়নি
জীবনের দুয়ারে, জীবন যেখানে এখনো প্রগলভ
গতি শীল নদীর মতন।
ব্যক্তিগত কান্নায়
নীলাদ্রি আজ খুব ভোরে খুন হয়ে গেছে ।
খবরটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম গুলোতে তোলপাড়
চলছে সকাল থেকে , হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা ,
মুক্ত চিন্তার অবাধ স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ
ইত্যাদি নিয়ে পর্যবেক্ষণ -পাল্টা পর্যবেক্ষণ
চলছে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ....
নীলাদ্রি র সাথে আমার সখ্যতা বহুদিনের ,
নীলাদ্রি, যে এক ঝাঁক শব্দের পায়রা উড়িয়ে
তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতো সব ব্যাকরণ!
তার কবিতার শব্দের ফুল ফুলকি দিয়ে
জ্বলত -নিভত , ফিনিক দুধ সাদা জ্যোৎস্নায়।
সেই নীলাদ্রি এখন সাদা কাফনে আবৃত অসহায় ,
একটি লাশ হয়ে সমাহিত হবার অপেক্ষায়।
আমি অন্ধকারে একদিন নীলাদ্রি র কণ্ঠস্বর
শুনতে চেয়েছিলাম , গাঢ় , ঘনিষ্ঠ অন্ধকারে।
অন্ধকারের সেই গানগুলো এখন খুব ব্যক্তিগত কান্নায় পরিণত
বর্তমান এবং আগামীকালের দিন রাত্রির আবাহন সত্যতায়।
নীলাদ্রি আর কখনো কবিতা লেখেনি
বছর ঘুরে গেছে সে অনেকদিন
শোকসভার সংখ্যা এখন
হাতেগোনা কয়টি মাত্র
কালে ভদ্রে তবুও সে উঠে আসে
পত্রিকার পাতায়
শুধু নীলাদ্রি আর কখনো কবিতা লেখেনি, কোনোখানে।
যে নীলাদ্রি আকাশের তারাদের সাথে
পাল্লা দিয়ে ঝিকমিক করতো
শব্দের অসাধারণ কিছু মুহূর্তে,
খোলা আকাশময় মশারীর ঠাসবুনোটের ভেতর
সেও কোথাও ফুরিয়ে যেতে চললো,
তোমার আমার জীবন থেকে,
এমনকি রাত্রির জীবন থেকেও।
দিনান্তের সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে
দিন বদলের সংগীতকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে,
ওই বোহেমিয়ান ঝোড়ো প্রবল হাওয়া ,
কোনোদিন কুড়িয়ে পাবে নীলাদ্রির
পুরোনো শত লেখা , যা কোত্থাও
খোদাই করা নেই বিস্ময়কর ভাস্কর্যে
অমিত প্রাবল্যে কেউ বলেনা তার কথা।
শুধু খুচরো পয়সার খেরো খাতায়,
মুদীর দোকানের ধবল দুধের আতিশয্যে
গলতে থাকা চায়ের ভেতর কিছু দীর্ঘশ্বাস যেন
কোথাও কাটা ঘুড়ির মতো গোঁত্তা খেতেই থাকে
আর খেতেই থাকে, অব্যক্ত কোনো তাড়নায়।
নীলাদ্রি, কোনো কোনো দিন, ঘরে ফিরতে খুব ইচ্ছে করে, মৃত্যুর মত!
মুঠোর ভেতর ধবল জ্যোছনা,
হৃদপিণ্ডের সুর,
উড়ে যায় ওই বিশাল আকাশে
কবুতরের ডানায়,
মানুষ এক জীবনে কতখানি চায়?
তোমার এলো চুলে কখনো
আলতো হাত রাখতে ইচ্ছে করলে,
ঘুমের বড়ির মোড়ক খুঁজি আজও,
একমনে ,
খন্ড পুস্তকের সমগ্রে চোখ রাখি,
একাগ্রে, প্রানপনে।
কাল রাস্তার মোড় ধরে হাঁটছিলাম,
নিঃসঙ্গ ছায়াটিকে সঙ্গী করে,
সাবানের বুদ্বুদের মতো উড়তে থাকা
খাপছাড়া স্বপ্ন গুলোকে কুড়িয়ে।
বেঞ্চের ওপরে দুইটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধার
সোনালী মূর্তির ওপরে আলো এসে পড়ছিলো ,
আলো এসে পড়ছিলো কাঁচের জানালার ওপরে
বিলম্বিত, অপসৃয়মান আমার ছায়ায়, চেনা বা অচেনা।
নীলাদ্রি, কোনো কোনো দিন, ঘরে ফিরতে খুব ইচ্ছে করে, মৃত্যুর মত!
অমিত আর কুণ্ঠাহীন
প্রত্যাশার মতো জীবনের স্বপ্নগুলো
সবসময় সফল হয়না বটে ,
তবে ইচ্ছেপূরণের চাবিকাঠিও কিন্তু মানুষের হাতেই |
তবে সেটা অনেকটা দাতব্য সংস্থাগুলোর মতো
জীবনের সাথে এককালীন সম্পর্কে অনেকখানি বিশ্বাসী ,
ঘটে যাওয়া একেকটা ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দেয়
একেবারে স্থায়ীভাবে , উঠে দাঁড়াবার শক্তি পর্যন্ত আর অবশিষ্ট থাকে না |
ঘোলাটে , বিদঘুটে , বিস্বাদ সেসব পর্বে জীবনে নিখাদ ভালোবাসার প্রয়োজন ,
অমিত আর কুণ্ঠাহীন |
ভুলে যাচ্ছি অনেককিছু | ভুলে যাচ্ছি প্রতিনয়ত |
ভুলে যাচ্ছি শপথ, ভুলে যাচ্ছি কৃতজ্ঞতা ,
ভুলে যাচ্ছি ভালোবাসার সংজ্ঞা, ভালো থাকবার সংজ্ঞা |
বৃষ্টির মধ্যে একা হাঁটতে হাঁটতে ভুলে যাচ্ছি ছাতার কথাও |
সকলের জীবনেই গন্তব্য প্রয়োজন,
উচ্চতায় স্থায়ী এবং সবল এবং প্রত্যাশায় প্রবল ,
আরাধ্য প্রাপ্তি যেখানে যোগসূত্র ঘটায় বৃহত্তর অর্থেই জীবনের সাথে |
ভুলে যাচ্ছি সেসব কথাও অনেকের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে |
সবকিছু শেষ হয়ে গেলে গাঢ় অন্ধকারে যে যবনিকাপাত হয়,
সেখানেও সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা থাকে , সেটা সত্যি বলেই বোধহয় |
কখনো কখনো ভুলে যাওয়া বড় বেশি প্রয়োজন বেঁচে থাকবার জন্যেই |
পালাবো।
পালাতে কতযুগ কাটে, পালানোর সম্ভাবনায়?
জানবো।
পালানোর সম্ভাবনায় জানবো নিশ্চয়!
অস্তিত্বের ঘনায়মান প্রশ্ন শেকড় জুড়ে
রবীন্দ্রনাথই আজকাল পটলের দোলমায় চড়ছেন,
পূর্বাকাশের সোনালী আলো মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে
চড়া তেজের দাবদাহকে আত্মস্থ করে ভাবতে ভালো লাগে
শেষ কবে যেন রূহ আফজা ছিল? লালচে রঙের ভেতর বরফ আর বরফ!
বরফ হতে থাকা আমার মস্তিষ্ক জুড়েও আরো .... আরো কত বাঁচবার সূত্র , কলিকাল !
আঙ্গুল ছুঁয়ে একটা খেলা ছিল, শৈশব জুড়ে
রস-কষ-সিঙ্গারা-বুলবুলি-মোস্তাক!
হারিয়ে গেলো, হারিয়ে যাওয়া, জোড়া চোখের ঘোর তমসায়
রবীন্দ্রনাথ কেন বৃষ্টি হয়ে ধুয়ে যেতে পারেননি আকাশটাকে, সে প্রশ্ন নিয়ে!
আমার কল্পনায়, সে বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া উচিত ছিল পাঞ্জাবীটার কাঁচা রংটাও, নিরাপদে!
তোমার আকাশ ছুঁতে গেলে বড় হয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলোর বড় বেশি কাঁদন হররোজ
আকাশলীনা তোমার সাম্রাজ্যে অস্তিত্বের ঘনায়মান প্রশ্ন শেকড় জুড়ে,ভার-পূর্বাভাসে।
জলের গান , দ্বিতীয়বার
প্রয়াস
সুনীল আকাশে গোঁত্তা খাওয়া ঘুড়িকে দেখেছো কখনো? ভোকাট্টা হবার ঠিক আগ মুহূর্তে জীবনের জ্বলে ওঠবার গল্প। আপাত নিরীহ সরলরেখা পুরোপুরি নিষ্কম্প, নির্লিপ্ত রেখায় পরিণত হবার আগ মুহূর্তের ধুকপুকুনির গল্প, বাঁচবার প্রত্যাশায় অনন্যসাধারণ।
বিস্মরণের আবাহন
আলো আঁধারির আব্ছায়া
এই মুহূর্তে আলো আঁধারির ভেতর আব্ছায়াতে তোমার মুখ অস্পষ্টভাবে মনে পড়ছে। তোমার সিগ্রেটের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে উড়ে যেত,আদিমকালের রহস্য নিয়ে। আমার তখন কেবল সুকুমার রায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অকারণেই নিজের অজান্তেই মনে হতো,
আদিম কালের চাঁদিম হিম,
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম,
ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর।
বিচ্ছিন্ন একাকী দ্বীপের মত একেকটি আখ্যান নিয়ে পথে হাঁটবার সময় ভীড়ের মধ্যে ভীষণ একলা লাগে কখনো কখনো। একলা হাঁটতে হাঁটতে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে, আর সেই বৃষ্টির ভেতর অজান্তে গালের অশ্রুধারা ধুয়ে গেছে আপন গতিতে, এমনি কত দিন চলে গেছে, বিস্মরণের পথে!
মনে মনে ভাবি, নীলাদ্রিকে ভুলে গিয়েছি পুরোপুরি। ক্ষয়িষ্ণু জীবনের ঘাসে জমে থাকা শিশিরের আয়ুষ্কালে ক্ষণজন্মা মুহূর্তের কথকতা। দিগন্তরেখায় প্রতিদিনের সূর্যাস্তের আলোর মতোই তাকে রোজ বিসর্জন দেই। বিদায় দেই ,কারণ ধরে রাখতে চাইনা আর, চাই নি কখনোই।
আর চাই নি বলেই হয়তো, অকারণেই পেয়ে যাই, ভুতুড়ে,খাপছাড়া কোনো আবাহনের মুহূর্তে!
খুব ক্লান্ত, অবসন্ন আমি। আমার কোনো এক শ্রান্ত মুহূর্তে, দিনান্তের ক্লান্তি সোনার আলোর মতন ছায়া ফেলে নীলাদ্রির চুলে, তার মুখে। আর ক্লান্ত আমি, অবসন্ন আমি, অনবধানে সেই আলোর খেলা দেখতে থাকি, চেতন আর অবচেতনের মাঝামাঝি কোন ঘোরের ভেতর থেকে। কোনো এক স্বপ্নদৃশ্যে, হাত বাড়িয়ে সেই চুলের উপরে এসে পড়া গুঁড়ো পাপড়ির রেনু সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। আর ঠিক যখনি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেবো নীলাদ্রিকে, তখন মহাকাল যেন স্থবির হয়ে রয় তার মধ্যকার যোজন দূরত্ব পেরোতে।
তোমার ভেতর থেকে নীলাদ্রির সাজানো স্বপ্ন কথা বলে ওঠে।
বলে ,"কেন, চাওনি আমায়?"
সেটাই মুলতবী প্রশ্ন। আপাত নিরীহ জীবনে একাকীত্ব পোড়ায়, ক্ষুধার অনলও দাহ্যবস্তু ভেবে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় ব্যক্তিগত সুখস্মৃতিগুলোকে। খন্ড খন্ড দাবদাহ পুড়িয়ে দেয় ক্রমে সমগ্রকে, সমগ্র প্রয়াসকে।
অনন্তকালের পথে শত ধূমকেতু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ,তবু আমার ক্ষুদ্র জীবনে নীলাদ্রি এক নক্ষত্রের আলো হয়ে আজও দেদীপ্যমান, তার প্রতি আমার নিখাদ ভালোবাসার মুহূর্তগুলো বড় বেশি বাঙময় , নীরব নিরুচ্চার, তবু অনর্গল বহমান তার কথকতা।
বড় বেশি করে পাওয়া সেই অনুভব জীবনে, তার আভাস সর্বব্যাপ্ত।
নীলকণ্ঠ বিষাদের অশ্রুর ভেতর
বড় বেশী নিঃশব্দ আর নিঝুম হয়ে থাকে দিবস রাত্রির আবর্তনের সাতকাহন। ঘুমিয়ে থাকা তোমার মুখের আদলে কেবলই অন্য কারো মুখ মনে পড়ে যায়, আর স্মৃতিকে তা দোলা দিয়ে যায় প্রবলভাবে। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে ঠিক যেন অসহায় একটা শিশুর মতো, আর ঘুমের ভেতর তোমার ঠোঁট কাঁপছিলো প্রবলভাবে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে নামছিলো ধীরে ধীরে। সে ঘুমন্ত মুখে চোখ আটকে গেলে সরিয়ে নেয়া কঠিন, তাই প্রথম প্রচেষ্টাতেই দৃষ্টি প্রসারিত করি তোমাতে, তবু তোমার মাঝারে বিলীন না হয়ে।
অকাতরে যে প্রাণের দান , তা বিধাতার নিজের হাতের কোমল অর্ঘ্য। তোমার আর আমার সমান্তরালে যে অগুনতি জীবনের ধাবমান চিহ্ন, তার ওপরে সময়ের পলিমাটির আস্তর ধীরে ধীরে নিশ্চিত করবে গন্তব্যের সম্ভাবনা। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইনি আর বটে, তবে দূরত্বটা তেমন বেশি কিছু নয়। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মধ্যবর্তী অগুনতি খাঁজের সমাবেশ মাত্র , এর চাইতে বেশি খোলাসা করতে চাওয়াটা বাতুলতার নামান্তর মাত্র।
পাশেই আছি বন্ধু, জীবনের বাতুল অংশের মতোই। ঘাসের ওপরে বসা জোড়াবুটি হলদে ডানার প্রজাপতিটির মতোই নিঃশব্দে, শুধু মন ভালো করে দেয়া একটি মুহূর্তের তৃষ্ণায়।
জীবনের এই তৃষ্ণার তীব্রতাও কম নয় !
জাগতিক জীবন
"বড়ো বেশী জোলো আর পানসে ঠেকে, এ জীবনের সবকিছু, একেবারেই!" তুমি বলো, বলতে থাকো।
আর তাকে একেবারে অন্তর্গত হাহাকার বলেই অনুমিত হয়। আয়নার ওপাশ আর এপাশ। না পাওয়ার আর্তনাদে ভারী বিধাতার আকাশ। সব হারানো মানুষের ক্রোধ, যন্ত্রনা , হতাশা কি বিধাতাকে স্পর্শ করে?
জাগতিক জীবন জুড়ে আজন্মকাল ধরে চলে চাহিদা আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিকেশ, সেখানে স্রষ্টাকে খোঁজবার মন তোমারও বা কই, আমারও বা কই? সময়ের অগ্রভাগে সুচাগ্র তরবারির খোঁচায় শুধু পুনরায় রক্তাক্ত হয়ে ওঠে ইতিমধ্যেই বিষিয়ে যাওয়া ক্ষত।
কথা বলবার প্রয়োজন ইদানিং আসলেই ফুরিয়ে গেছে। ব্যক্ত, অব্যক্ত যন্ত্রণাগুলো অনুভুতির আচ্ছন্নতা দিয়ে যতটা ঢাকা থাকে, ততটা প্রকাশযোগ্য হয়ে ওঠেনা তা ভাষার সৌন্দর্যে আর মুন্সীয়ানায়। কিছু কথায় উপশমের বদলে রক্তপাতের পুনরাবৃত্তি অবধারিত , তাকে নিয়ে অযথা টানাটানি করে লাভ নেই। তাই কথার আজ ছুটি মঞ্জুর, বাড়ী গেছে তার সকল সরঞ্জাম তাই নিশ্চিন্ত হয়ে, নিশ্চিত হয়ে।
সব পার্থিব যন্ত্রনাগুলো যদি স্বপ্ন দিয়ে ভুলিয়ে দেয়া যেতো, তবে কি ভয়ংকর সুন্দর উপলব্ধিই না হতো!
ভোরের শিশিরের সাথে ঝরে পড়া অক্ষরের মতন, চেনা রোদ্দুরের ওমে ভরে থাকা উঠোনের মতন ,স্বপন-পুরের ঠিকানার নাগালও পাওয়া যেতো হাতের মুঠোয়। অনেক আগের মন নিয়ে অনেক দূরের কোনো পথে যাবার পালায় একটা চেনা সুর গুনগুনিয়ে উঠতো, তোমার সুরে, আমার স্বরে।
আর আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসতাম। আর আমাদের সেই হাসিতে হয়তো নীলাদ্রিরও ছায়া পড়তো, অধরায়, অলক্ষ্যে।