১৯৯৮ সালের কথা। পুরকৌশল নিয়ে পড়ছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুরকৌশল বিভাগের লেভেল পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল , রং ঢং। কবিতা পারফর্ম করবার দুর্দমনীয় আকাঙ্খা। অনুষ্ঠান শুরু হবার পূর্বমুহূর্তে রিহার্সালে দেখলাম, কবিতাটির পংক্তি ভুলে যাচ্ছি।
মঞ্চের দিকে এগিয়ে নিতে নিতে উপদেশ ছিল,"যা খুশি একটা কিছু বলে দিও!"
এতো বছর পরে লেখালিখি করতে এসেও দেখি সেই একই কনসেপ্ট। Pantser বনাম Plotter। কোনোটাই পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়নি। কুশীলব সকলে যা খুশি বলতে শুরু করলে, আর যাই হোক শিল্প হয়না বলেই মনে হয়। কোলরিজ গদ্যকে বলেছেন ,"শ্রেষ্ঠ বিন্যাসে শব্দসমূহ " আর কবিতাকে বলেছেন "শ্রেষ্ঠ বিন্যাসে শ্রেষ্ঠ শব্দ সমূহ ", দৈনন্দিন জীবনের হররোজ সে বৈশিষ্ট্য কই ? তাহলে প্রতিটি কবির কবিতাই তো উৎরে যেত !
আর তাই বোধহয় সাধনার ভাষা সর্বদাই নীরব। ওখানটাতেও সত্যিকে আবাহনের জন্য খুব জোর লড়াই চলে যদিও, তবে তা নিতান্তই আত্মশুদ্ধির। ওখানটায় লোক দেখানো আসলেই চলেনা।
তবে এটা বিশ্বাস করতে দোষ নেই , কবিতা কবি মাত্রেরই সম্পত্তি নয়। কবিতা এক বিশেষ মুহূর্তে কবির, তারপরে তা পাঠকেরও। কতবার এমন হয়েছে, কবিতার ভাব বিনিময়ে এমন ব্যাখ্যা পেয়েছি, খুব আপ্লুত হয়ে আত্মস্থ করেছি যে , সে ব্যাখ্যাটাও খাটে। তবে দিনশেষে কবিতা একটা অনুভূতির রংধনু , নির্বিশেষে সকল পাঠকের জন্যই।
বোদলেয়ারের একটা কবিতা আছে, সুনীলের অনুবাদে বহু বহুদূর আরো যায় তার সম্ভাবনা। কবিতাটি আমার খুব প্রিয় :
"কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো, হেঁয়ালি মানুষ আমায় বলো?
-তোমার বাবা, মা, বোন, ভাইকে ?
-আমার বাবা নেই, মা নেই, বোন নেই,ভাই নেই।
-তোমার বন্ধুদের ?
-তুমি এমন একটা শব্দ ব্যবহার করেছো, যার অর্থ
আমি আজ পর্যন্ত বুঝিনি
-তোমার দেশ?
-কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান আমি জানিনা
-সৌন্দর্যকে ?
-আমি আনন্দের সাথেই তাকে ভালোবাসতাম যদি হতো সে
কোনো দেবী এবং অমর
-সোনা?
-আমি তা ঘৃণা করি যেমন তুমি ঈশ্বরকে
-তবে কী তুমি ভালোবাসো, অসাধারণ আগন্তুক?
-আমি ভালোবাসি মেঘ, যেসব মেঘেরা ভেসে যায়,ওই ওখানে....
ওই সেখানে.... বিস্ময়কর মেঘেরা।"