*** মেয়েটা ভালো ছিলো ***
** তন্ময় দে বিশ্বাস **
স্কুলে কাজ করে কবিতা - অনেক পড়ুয়া তার ,
দিদিমনি হিসাবে যথেষ্ট সুনাম -
দেখতে খুব সুন্দরী না হলেও, সুশ্রী - সপ্রতিভা,
বয়স - ২৬, রঙ - ফরসা, উচ্চতা - ৫' ৪", স্লিম চেহারা ,
বর্ণনাটা এই জন্যে দিলাম, যাতে আপনাদের চারপাশের এরকম অনেকের মধ্যে থেকে একটা কবিতাকে বেছে নিয়ে কল্পনা করতে অসুবিধে না হয় ।
ক্যানিং থেকে সকাল 7.20 র লোকালে সোনারপুরে স্কুলে যায় কবিতা । রোজ 11 টা থেকে বিকেল 5 টা পর্যন্ত স্কুল । সব ক্লাসেই ক্লাস নিতে হয় রোজ । হাজার হলেও বাংলা ভাষার ক্লাস মানে মতৃভাষার ক্লাস বলে কথা । সব শ্রেনীর ক্লাসেই কবিতা খুব প্রিয় । স্কুল শেষ হলে 5.40 এর ট্রেনে ক্যানিং এ বাড়ী ফেরে কবিতা ।
নিত্যদিন বারোমাস সন্ধ্যা 7 টায় স্টেশনে নেমে 10 মিনিট মেঠো পথে হেঁটে বাড়ী ফিরতে হয় কবিতাকে ।
এখন আর রিক্সা পাওয়া যায় না । আর ভ্যানে আর পাঁচ জনের সঙ্গে গা ঘেঁসাঘেঁসি করে গাদাগাদি করে এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় লাফাতে লাফাতে ফিরতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা কবিতা । সে একটু স্বতন্ত্র থাকতে ভালোবাসে । তাই আস্তে আস্তে হাঁটতেই ভালো লাগে কবিতার ।
দুবেলা পথে দেখা হয় কতোজনের সঙ্গে - রবি, সুনীল, শক্তি , শঙ্খ, নজরুল , সুকান্ত - আরো কতো । সবাই কবিতাকে চেনে , ভালোবাসে ।
আর দেখা হয় একদল উচ্ছ্বল উশৃঙ্খল পড়ুয়াদের সঙ্গে ।
পড়ুয়া ছেলেগুলোর নজর ভালো লাগেনা কবিতার -
কবিতার মধ্যে তারা যেন অন্য কিছু খোঁজে -
কবিতার স্নিগ্ধ লাবন্যের মধ্যে তারা হাতড়ে বেড়ায় অন্য কিছু চাহিদা নিয়ে -
সেই চাহনি - সেই কামনা - সেই বিদ্রুপের হাসি , ভালো লাগেনা কবিতার ।
সেদিন চৈত্রমাস -
আর পাঁচটা দিনের মতো বাড়ী থেকে বেড়িয়েছিলো কবিতা -
ট্রেন এসেছিলো সময়মতো -
স্কুলটাও চলেছিলো ঠিকঠাক -
ফেরার ট্রেনটা একটু লেট করেছিলো ক্যানিং এর স্টেশনটা ছুঁতে -
সন্ধ্যার অন্ধকারটা একটু গাঢ় -
একাই পথ হাঁটছে কবিতা -
একটু কেমন যেন ভয় ভয় করছে -
সবে কালবৈশাখীর ঝড় টা থেমেছে -
এক পশলা বৃষ্টি পরিবেশটাকে বেশ ঠান্ডা করে দিয়েছে -
রাস্তায় লোকজন খুব কম -
আজ রবি সুনীল শক্তি কারো সঙ্গে দেখা হয়নি -
দেখা হলে হয়তো বলতো একটু বাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিতে -
ফাঁকা ধুধু মাঠ - হঠাৎ -
সেই একদল উচ্ছ্বল উশৃঙ্খল পড়ুয়ার দল -
ঝাঁপিয়ে পড়লো কবিতার ওপর -
হিংস্র থাবায় ক্ষত বিক্ষত করে দিলো কবিতার শরীর -
এক এক করে ছিঁড়তে লাগলো কবিতার শরীরের ছন্দ -
দেহের গোপন রেখায় বোলাতে লাগলো কামুক হাত -
খুলে ফেললো সমস্ত সৌন্দর্যের আস্তরন -
বেশভূষা হীন - ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ধর্ষিত হোলো কবিতা -
যেন কয়েক যুগ ধরে চললো এই অত্যাচার -
শব্দহীন হয়ে গেলো কবিতা -
পড়ুয়ার দল সহাস্যে - যুদ্ধ জয়ের ভঙ্গিতে ফিরে যায় যে যার পথে -
ধীরে ধীরে দাঁড়ায় কবিতা -
ক্ষতবিক্ষত পর্যুদস্ত অবসন্ন শরীরটাকে টেনে টেনে নিয়ে চলে তার ঘরের দিকে ,
বাড়ী ফিরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায় -
পরদিন স্কুলে যাবার পথে লক্ষ্য করে,
সবাই যেন কেমন করুণার - উপহাসের তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে তাকে ,
স্কুলে যায় কবিতা - আর পাঁচটা দিনের মতোই -
কি করে কিজানি সবাই যেন জেনে গেছে কাল রাত্রের কবিতার ওপর ঘটে যাওয়া অত্যচারের কাহিনী -
একজন ধর্ষিতা কে দিদিমনি হিসেবে মানতে চায়না স্কুলের শিক্ষক সমাজ - পড়ুয়ার দল -
বাড়ী ফিরে আসে কবিতা -
অপমানের যন্ত্রনা অনেক - কিন্তু এই অপমানের যন্ত্রনা আরো অনেক অনেক বেশী -
হাতের ব্যাগটাকে ওয়ারড্রোবে ঢুকিয়ে রাখে কবিতা -
সাবান মেখে স্নান করে -
সুন্দর করে সাজায় নিজেকে -
পরিপাটি করে গুছোয় বিছানাটাকে -
নতুন চাদর পাতে , বালিশে নতুন ওয়াড় লাগায় -
পুজোর সময় কেনা ফরাসী পারফিউমটা পুরোটা ঢেলে দেয় গোটা বিছানায় - বালিশে - গায়ে -
তারপর বিছানায় শুয়ে -
ধারালো ব্লেড দিয়ে এদিক ওদিক চিড়তে থাকে বাঁ হাতর রক্তশিরা -
মোক্ষম আঘাতে ধমনী থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোতে থাকে রক্তধারা - লাল রক্ত স্রোত -
ধর্ষিতা কবিতার রক্ত এখনো লাল - সুমিতা কাকলি মহুয়া সঙ্গীতার রক্তের মতোই লাল -
এখনো কালো হয়ে যায়নি -
কবিতা ভালো ভাষা দিদিমনি হতে চেয়েছিলো -
কবিতা বাংলা কবিতা হতে চেয়েছিলো -
পরদিন সকালে পাড়ার সবাই আবিস্কার করে -
কবিতা মারা গেছে -
কবিতার লাশখানা ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় -
কবিতার সৌরভে চারিদিক ম ম করছে -
পাশথেকে সেই তারাই সবাই বলাবলি করতে লাগলো -
" মেয়েটা ভালো ছিলো "-----------------।।।।।।