শেষ কবে ভালোবেসেছি মনে পড়ে না
অথচ সেদিন স্বপ্নে-
যেন বহুকাল পর কোনো চেনা মুখ,
ছায়ার উপরে মানুষের মতোই নরম শীতল চোখ,
নারী নাকি অপ্সরা?
আফ্রোদিতি, ভেনাস
প্রথম নরক দর্শনের অভিজ্ঞতা,
নাকি স্বর্গের অসহ্য সুধা?
সারারাত ঘুমাবো না।
গতরাতে ঘুম ভেঙে রাজপথে গিয়েছি,
সাতাশটা সিগারেট পুড়িয়েছি অহেতুক,
শিমুল তুলোর মতো হাওয়ায় উড়িয়েছি নীল খাম,
অলোকানন্দার বাগান থেকে তুলে এনেছি কিছু অলৌকিক ফুল
বিবর্ণ শরীর খুলে
ঝেড়ে ফেলেছি গতজন্মের সব ঋণ,
এখন হৃদয় শূন্য, যেমন গাঢ় অন্ধকার।
অন্ধকারে আজকাল বড় একা লাগে,
বুকের ভেতর নিঃশব্দে চিৎকার করে ওঠে চব্বিশে আগস্ট
একটা আবছা চেহারা মনে পড়ে যায়,
তোমার মুখ।
অনেক কাল আমাদের দেখা হয়নি
অন্তত কয়েক হাজার বছর কিংবা কয়েক শতাব্দী
অনেক জন্ম আগের কথা, মনেও পড়ে না।
শেষবার তোমার শরীরে দেখেছিলাম উদ্ভাসিত জোছনা
তবু শেষ কবে দেখা হয়েছিলো- মনে নেই,
এমন আরো অনেক বছর আমাদের দেখা না হোক।
আমাকে যেতে হবে অনেক দূর;
শেষ কবে ভালোবেসেছি মনে পড়ে না,
অথচ ঠিকই টের পাই- বিষাদের নাম করে
যেন আমাকেই অনুবাদ করে যায় জীবনানন্দ দাশ।
অন্ধকারে চোখ ভিজে যায়,
নিজেকে সঁপে দিতে চাই মহাকালে,
বুকের ভেতর জেগে ওঠে উত্তাল ঢেউ
মনের ভেতর ঝড়-
ঝড় না মৃত্যু?
মৃত্যু নাকি ওসিরিস?
ভালোবাসা, বিশ্বাসহীনতা
জুডাস, সিসিফাস...
মাথার ভেতর কেউ "বাইশে শ্রাবণ", "বাইশে শ্রাবণ" বলে
চিৎকার করতে করতে চলে যায়।
আমি উদ্ভ্রান্তের মতো চেয়ে থাকি কোলাহলে-
সাইকেল, রিক্সা, ট্রেন,
বাস, লঞ্চঘাট, স্টেশন,
মানুষ! মানুষ! মানুষ! কি ভীষণ ভিড়...
ভিড়ের মধ্যেও আমাকে জড়িয়ে থাকে নিজস্ব নিঃসঙ্গতা।
আমাকে যেতে হবে অনেকটা দূর-
অচেনা পথে,
তবু তোমার পথের আকর্ষণ আমাকে স্থির হতে দেয়নি কোনোদিন
তাই অন্ধকার গিলে ফেলা বেহায়া জোছনায়
ঘুম ভেঙে গতরাতে চেনা পথে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
চার হাত-পা ছড়িয়ে দৌঁড়ে হেঁটে নদী-মাঠ-বন,
যেন বুভুক্ষু পথিক কিংবা পলায়নরত হরিণ।
ছুটে গেছি-
মেঘ মৃত্যু পেরিয়ে
অবশেষে তোমার দরজায়,
অলোকানন্দার বাগান থেকে তুলে আনা অলৌকিক ফুল
স্বযত্নে বাইরে রেখে এসেছি মধ্যরাতে।
ভোর বেলায় দরজা খুলেছিলে, রাই?