১.
এইখানে এক আস্ত মহীরূহ । বিস্তৃত শিকড়ের একটাতে পিতামহ বসতেন । জন্মাবধি আমি কোন ব্যতিক্রম দেখিনি এর । তিনি ঐ শিকড়ের ওপর বসলেই মা বড় জামবাটি ভর্তি করে চা-এর জল বসাতেন । আমরা সবাই পিতামহকে ঘিরে বসতাম । তিনি গল্প বলতেন অসাধারণ । রোগা কেঠো শরীর থেকে গম্ভীর মন্দ্র স্বর আমাদের স্তব্ধ করে দিত তখন । পাশে মেঘনার নিরন্তর ঢেউ । সেইদিকে চেয়ে পিতামহ আনমনে গল্প বলে যাচ্ছেন - এরকম একটা ছবি বহুদিন  পর্যন্ত আমার মনে আঁকা হয়েছিল।

২.
তিনি শম্বুকগতি হিমবাহের কথা বলতেন ।বলতেন বহু প্রত্যাশিত রৌদ্রের কথা । তিনি তখন দার্জিলিং-য়ে । সদ্য যুবক । জানালায় দাঁড়িয়ে মেঘের খেলা দেখতেন । ঘুম স্টেশনে রোদের আদর দেখতেন ।আর দেখতেন কাঞ্চনজঙ্ঘা । সেইখানে সূর্য উঠতো । সেইখানে সূর্য ডুবতো । সেইখানে স্বর্গশেষের সীমা ।

৩.
দাদু মারা গিয়েছিলেন প্রিয় অশথ গাছের নিচে । তাঁকে কিছুতেই ঘরে নেয়া যায়নি । মৃত্যুর সময় আমি তাঁর হাত ধরেছিলাম । ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন । পরিজন পরিবৃত দাদু অস্পষ্ট ভাবে একটা কিছু বলতে চাইছিলেন । মেঘনা তাঁর স্বর ঢেকে দিয়েছিল । কেউ তাঁর কথা বুঝতে পারেনি সেদিন । আজ এই এতবছর আমি বুঝতে পারি দাদু আসলে একটা নাম করেছিলেন । নাম করেছিলেন কিন্তু সেটা তাঁর পূত্রের নাম ছিল না । প্রিয় দৌহিত্র অথবা শৈশবের কথাও নয় । হয়তো শেষ মূহুর্তে তাঁর মনে পড়েছিল গতা স্ত্রীর কথা । কবিতার মতো বাসর ঘরের কথা । তিনি সেসব কিছু্ই বলেননি । বলেননি কোন সূবর্ণ সময়ের কথাও । অগ্যস্ত যাত্রার আগে দাদু আসলে একটা নাম করেছিলেন । দাদু আসলে বলতে চেয়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা ।