স্বপনে কে যেনো আসিলো আমার দ্বারে
নাড়িলো কড়া ডাকিলো চিৎকারে,
আমি বলিলাম "কে ঐখানে?"
সে কহিলো "আমি- কভূ ভাবোনি যারে।"
খুলিয়া দ্বার চমকিয়া উঠিলাম- চাহিলাম বিহ্বলে,
সারা গায়ে কাদার মাখামাখি, রক্তাক্ত দেহে-
ছেড়া বস্ত্রে একটি মেয়ে এলো, এলো-চুলে।
মলিন মুখখানি তুলিয়া বলিলো, "চিনিয়াছ আমারে?"
আমি ভাবিয়া পাইলাম না, কি বলিবো তাহারে।
চোখের কোনে রক্ত ফোটা- বহূ কঠিন সে চোখে চোখ রাখা।
সেইখানে যে আগুন জ্বলিয়াছে,
ভস্ম হইয়া যাইতাম বুঝি আরও একটু হইলে।
কিছু কইবার সাহস হইলোনা, শুধু মাথা নাড়িলাম "না" বলিবার ছলে।
জানিনা এমন করিয়া কাটিলো কতক্ষণে-
হঠাৎ নিরবতা ভাঙ্গিলো সে, বলিলো "বসিতে দিবানা, যাইতে দিবানা তোমার ঘরে?"
একপাশ করিয়া মাথা, সরিয়া দাড়াইতে-
সে ঢুকিলো সন্তোপনে, খালি পায়ে।
বসিয়া চৌকির কোনে, আরো একবার চাহিলো আমার পানে।
"ভাই এতো অল্প দিনেই ভুলিয়া গেলা মোরে,
আমি যে তোমার বোন, যাকে দেখেছিলে কাঁটাতারে।"
দাড়াইয়া খানিক দূরে, হাটিতেছি স্মৃতির নীড়ে,
বলিলাম খানিক পরে, "তুমি আমার কোন বোন যদি একটু বুঝাইয়া বলিতে?"
কিঞ্চিত হাসির রেখা দেখিলাম- বুঝিলাম এইটা তাচ্ছিল্যের,
"যেই বাংলাকে মা বলে ডাকো আমি সেই বাংলার মেয়ে।"
আমি বলিলাম "এই অবস্থা কি করিয়া হইলো তোমার, তোমার তো কষ্ট হইতেছে খুব- আমি ডাক্তার আনিবো ডাকিয়া?"
সে না বলিলো হাতে আর মাথায়- "ব্যস্ত হইয়ো না, কিছু লাগিবেনা আমার"- কহিলো কিছুটা চুপ থাকিয়া।
" ভাই কহিবা স্বাধীনতার মানে?"---
প্রশ্ন শুনিয়া বিস্মিত হইলাম সেই ক্ষনে।
"কহিলাম যতোটুকু জানি- অন্যায় অত্যাচার থেকে চির মুক্তি,
দূর করিয়া পরাধীনতার গ্লানি।"
খানিক মাথা নেড়ে এবার সে কহিলো, "ভাই বলিবা মানবতা কারে কয়?"
বলিলাম "জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যেইটা হয়।"
"এইটা কি শুধু দেশের তরে?" মাথা নাড়িয়া কহিলাম "নাহ্! যতোটুকু জানি বিশ্ব তরে,
মানবতার আবার দেশ কি? উহা থাকে হৃদয় জুড়ে ।
আচ্ছা এইসব প্রশ্ন কেনো করিতেছো মোরে," জিজ্ঞাসিলেম তাহারে,
"তুমিও করিতে যদি খুন হইতে ব্যবিচারে, যদি শুকাইতো দেহ ঝুলিয়া কাঁটাতারে, যদি বাধিত বাঁশ হাতে পায়ে, লইয়া যাইতো ডোম ঘরে",
চোখে আসিলো জল- গায়ে কাটা দিলো লোম, তাহার আর্তচিৎকারে ।
আরো কহিলো সে “মুখে তো খুব স্বাধীনতার বুলি
আওড়াও দিবা রাতে—ভাগ করো কার কতো ভাগ
কতো অবদান তাতে, পারলে পুরোটা ঘরে তুলে
নেও কারো নজর পরেনা যাতে,— কই একবারোতো
কহিলে না মুখে, ফেলানী মরিলো কিবা কোন
দোষে? ওর পরিবার আছে কিবা সুখে?
একবারোতো কহিলে না, মিছিল হইবে রাজপথে—
ফেলানির লাশ থাকিবে কাধে
কই আমাকেতো দিলে না শহীদের উপাধি—
কইলেনাতো কেউ আয় ভাই আয়, সবাই মিলে
এক দুঃখি বোনের জন্যে কাঁদি”
“তোমাদের কেউ মরলে যেমন করিয়া কাঁদো—আহাজারি
করো— বলো আর্তনাদ করিয়া— কই আমার জন্যে তো
কেউ এমনটা করিলে না, দুঃখি বলিয়া, আমি বুঝি
তোমাদের কেউ না,
সারা দিন রাত যারা মানবতার নামে মূর্ছা যায়,
যারা খুজিয়া ফেরে মানবতার অপরাধ, তাদের
চোখেও আমি ধরা পড়িলামনা—তাই আজো
বুঝিলাম না মানবতা কারে কয়।
জানো ভাই, ১৬ কোটির মুখে মুখে খুজিয়া ফিরেছি
কেউ দিলোনা এতোটুকু ঠাই।
কেউ কেউ বললো এপারে—ওপারে, জোর প্রতিবাদ ও
তুললো স্বমোস্বরে। তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার
অন্ত নাই—ভেবেছিলাম এইবার বুঝি হবে কিছু একটা
শুনিলাম বিচার হইবে—পোড়া আত্মাটা একটু
হইলোও শান্তি পাইবে, আমার ভাইয়েরা বুঝি
বিচার ছিনায়া আনিবে
হইলো বিচার, দুঃখিনী বাংলা মায়ের মরা
মেয়েকে নিয়ে—অবশেষে।
সবি দেলিলাম, ওরা কহিলো অপরাধী সে তবে
দেশ প্রেমিক ও বটে।
বিচারের রায়—বেখুসুর খালাস—হায়রে হায় মানবতা
গরীব দেশের গরীব মেয়ে পাবে কি আর তা।
যারা নতুন নতুন রেকর্ড গড়িয়া বিশ্বকে বলিছো চুপ
আমরা বাঙ্গালী গর্বে গর্বিত কহিয়াছে গ্রিনেজ বুক
তাহারা যেনো বিশ্বকে না বলে ফেলানির ইতিকথা—
বিশ্বতবে বুঝিয়া যাইবে আর বলিবে—তোদের
ক্ষমতা ফেলানির মাথা।
সেদিন কে যেনো মরিলো পরিয়া ক্ষেতে, আমার
মতোই ঝাঝড়া হইলো নিষ্ঠুর পৃথিবীতে—
কাহারা যেনো কহিতে লাগিলো—বেশ হইয়াছে
শালা একটা চোর ছিলো,
তাদের পায়ে রাখিয়া হাত বলি ওরে বাঙ্গালী ভাই—
চোরের বিচার আমরাও চাই।
রাজ্য যারা করিলো চুরি—গড়িলো বাড়ি—চড়িলো
গাড়ি, বিশ্ব খাতায় তুললো বাংলাদেশের নাম—
বাহিয়া দুর্নিতীর সিড়ি,
তাহাদের বিচার আমরাও চাই—কই তাদেরকে তো
বলোনা কিছুই।
অথচ দেখো সংগ্রামে যাদের দু’মুঠো আহার, মরছে
সে সর্বদাই—পেটের দায়ে মিছেমিছি।
কেউ কেউ আবার নিশ্চিন্তে কবে—সীমান্তে মরে মরুক
আমাদের কি তবে—ওরা চাষা—পোষা কেঁদে কেটে ঠিক
সব সয়ে রবে।
বলছি এবার তাদের তরে, ফেলানীরা মরছে
এখন মরেছিলো একাত্ত্বরে, তোমরা শুধু করিয়াছ
সভা—তুলিয়াছ ছবি কুড়িয়াছো বাহ, বাহ!
লহিয়াছ খেতাব নিল্লর্জ্জ্বের মতো—মরিলাম আমরা,
করিলাম ত্যাগ যতো, তবু তোমরা হইলে সবার সেরা—
হায়রে আমার দেশ, হায়রে স্বাধীনতা!
একদিন ঠিক বুঝিবে সবাই—যেমন বুঝেছি আমি—
সেইদিন ঠিক শেষ হইবে তোমাদের ঠকবাজির জারিজুড়ি।
শেষ কথাটা বলিয়া যাই—যাহা কইতে আসিয়াছি ভাই,
শুধু একটি বার কহিবে ওরে— ভূলিনাই  ফেলানী
ভূলিনাই তোরে”
নিদ্রা ভেঙ্গে শিয়রে বসে বলিতেছি তখনো
একই স্বরে—
“ভূলিনাই বোন ভূলিনাই তোরে”।