অভাবের সংসারে আমাদের বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক
সামান্য স্কুল মাস্টারিতে কীইবা আয় হয় তার
আমি কলেজে পড়ি, নাসিমা ম্যাট্রিক দিবে এবার
বাদলও স্কুলে যেতে শুরু করেছে
তারুপর রোগশোক ডাক্তার খরচ, অতিথি মেহমান
মাসে দুটো পয়সা বাচা তো দূরের কথা, ধারদেনা লেগেই থাকে
বাবা এসব নিয়ে খুব বেশী ভাবেন না,
সকাল হলে বাবা স্কুলে যায়, তাঁর কাঁধে লাঞ্চব্যাগ, মাথায় ছাতা
রোজকার গায়ে তাঁর সেই একই রঙের আকাশী শার্ট
পথের পাশের গাছ এবং দূরের সবুজ দুচোখ ভরে দেখতে দেখতে
বাবা স্কুলে যায়, সন্ধ্যে হলে ফিরে আসে
বাবার চোখে কোন চিন্তা নেই, কোন দুশ্চিন্তার ছাপ নেই
বাবা দিব্যি হাসেন, বই পড়েন, চা খান, বাজারে আড্ডা দেন
আর আমাদের মা!
মায়ের সব সুখ ভেস্তে যায় সুখ সমিতির কিস্তির চিন্তায়
মায়ের রাতের ঘুম হারাম হয় যোগবিয়োগের হিসেব করতে করতে
সলিম কাকার মুদি দোকানে কত বাকী পড়েছে? ইলেকট্রিক বিল
সুনীল কাকুর মাছের পাওনা, ফার্মেসীতে কত পাবে?
নাসিমার টিউশন ফি, কলেজের বেতন, কাঁচাবাজার
বাবা যেন এসব কিছুই জানে না!
মাস শেষে বেতনের পুরোটা টাকা
মা’র হাতে তুলে দিয়ে বাবা যেন বেঁচে যায়
বাবা দিব্যি হাসে, আমাদের সাথে খুনসুটি করে।
চল্লিশেই মা’র চুলে পাক ধরেছে, প্রেসার
মায়ের হাতের কব্জির শিরগুলো দাঁড়িয়ে গেছে
মায়ের স্পঞ্জের ফিতাটা ছিড়ে গেছে
মা ছেড়া জুতো পরেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে
আমি তাকিয়ে দেখছি, মা যেন রোগাক্লিষ্ট শীর্ণদেহী একজন খোরা মানুষ