মিনতি মুখার্জি মাথা নত করিয়া কয়
সরকার বাবু, একটা দাবীর কথা কইতে মন চায়
অনুমতি দিতে বাবুর যদি আজ্ঞা হয়
রাজ্যের বিরক্তি লইয়া সরকার বাবু শুধাইলো,
"তা কি হইয়াছে? খোলাসা করিয়া বলো"
আজ্ঞে বাবু, স্বাধীনতা গত হইলো এতটা বছর,
মনকান্দি গ্রামের উপর যদি দিতেন একটু নজর।
“মনকান্দি গ্রামের আবার কি দরকার?” শুধায় সরকার
বাবু সদাশয়, “নিতান্তই নগণ্য জনতার আবদার!
মনকান্দি গ্রামের জনতার বড়ই দুর্ভোগ!
কিছু একটা করা নিতান্তই আবশ্যক"
আহা আদিখ্যেতা রাখিয়া বলো, " কিসে এতো জরুরত?"
সংশয়ে শুধায় বাবু, "তার আগে বলো, আছে নাকি কোনো বিপদ?
চারিদিকে এতো ঝুট-ঝামেলা, নাই কোনো ফুরসৎ
বিপদ যতই থাকুক, আমার পরিকল্পনা হয়না যেন বরবাদ
সে আর বলতে বাবু, বিপদের সব আশঙ্কা হইয়াছে গত
বাবুর বদন্যতায় জাতি যারপরনাই উপকৃত
জাতি আহ্লাদে সদা রাখে মস্তিষ্ক অবনত
সরকার বাবুর গুণগানে ব্যস্ত অবিরত
এই রাজ্য কার সাধ্যি আছে বাবুর হইবে না অনুগত
বাবুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যাহারা ছিলো জড়িত
আইন করিয়া তাহাদের সকলেরে করিয়াছি নিবৃত
বেশ বেশ, তথৈবচ! তা হইলে দাবী শুনিতে আমি রাজি
বলো, মনকান্দি গ্রামবাসীর কি জরুরী আর্জি
সকল-ই বাবুর বিনীত মর্জি
বাবুর সহিত কে করিবে কারসাজি
বাবুর পিছনে কেউ দেবে না ডিগবাজি
বাবুর দরবারে আমার মস্তক আমি রাখিলাম বাজি
প্রাণে জল ফিরিয়া আসিলো হে মিনতি
চোখ কান সদা রাখিও সজাগ ঠেকাইতে জনতার ভীমরতি
তোমরা না থাকিলে আমার যে বড়ই দুর্গতি
তোমরা আছো বলিয়া আমার আজ কত শান্তি
তাইতো বলি দিকে দিকে কেন আমার এত সুখ্যাতি
তা এইবার বলো দেখি 'খন
কি চায় মনকান্দি গ্রামের সাধু জন
ও গাঁয়ে মোটের উপর সবাই থাকে জরাজীর্ণ কুঞ্জে
তেল নুন এটা ওটা কিনিতে নিত্য আসা লাগে গঞ্জে
তাতো বুঝিলাম, তাতে কিবা এমন হইয়াছে?
তেল নুন কি আর ধরে ওদের গাছে?
আগেই বলিয়া রাখলাম মিনতি, কমিবে না তেল নুনের দাম
অর্থের যোগান না থাকিলে লইতে কহ রাম নাম
বাবু আজ্ঞে, দাম লইয়া কাহারো নাই মাথা ব্যথা
জানে তাহারা ওইসব লইয়া দাবী তোলা হইবে বৃথা
তা হইলে আর এই কালক্ষেপণ কেন অযথা
তুমি কি জানো না আমার আজকাল কত ব্যস্ততা
দিন রাত থাকি চিন্তায়, চারিদিকে কত অব্যবস্থা
গুজব রটিয়াছে, জনতা নাকি হারাইয়া ফালাইছে আস্থা
বাবু আজ্ঞে, ওসব লইয়া চিন্তার নাই কোনো অবকাশ
দিনে হউক রাইতে হউক, পাকা পোক্ত সকল হিসাব নিকাশ
অপারগ নির্বোধেরা করুক যত হাস্য রস উপহাস
ওসব লইয়া কখনোই যেন বাবু না হইবেন নিরাশ
বুঝিলে মিনতি, কি করিয়া বোঝাই মনের আকুতি
যত কিছু ঘটিতেছে আসে পাশে - লাগে বড় ভীতি
বোঝা দায়, উপরওয়ালার কখন কি মতিগতি
সুখনিদ্রার যে আর নাই অবকাশ রাতভর একরত্তি
শুনিয়াছি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়াছে দুর্নীতি
এই নিয়ে ক্যান এত ঘ্যান ঘ্যান? বড্ড লাগে বিরক্তি
এ ও কি সম্ভব, দুর্নীতি ছাড়া হইবে উন্নতি?
যারা গায় মোর গুণগান, কি এমন তাহাদের প্রাপ্তি?
না হয় তাহাদের থাকুক কিছুটা প্রতিপত্তি,
এতে জনগণের কিসে এতো আপত্তি?
আজ্ঞে বাবু, লাভ নাই এতো কিছু নিয়া আমলে
দারোগা পুলিশ আছে কত আপনার বগলে
আদেশের অপেক্ষায় আছে, নিপাত করিবে সব সমূলে
হা পিত্তেশ আপত্তি সকলি যাইবে বিফলে
কে না চায় বাবুকে জ্ঞানী গুণী উচ্চ মহলে?
কে পারিবে চালাইতে রাজ্য, আজ্ঞে বাবুর বদলে?
খাঁটি কথা বলিয়াছো মিনতি, কে আছে এই তল্লাটে?
কে পারিবে দেশ চালাইতে এমন মহা দাপটে?
আমি না থাকিলে জাতি যে পড়িবে মহা সঙ্কটে
তবু দেখি কিছু লোক জল করে নিত্য ঘোলাটে
ভাবিলে কষ্ট হয়, কি যে লেখা আছে এ জাতির ললাটে!
সে যাইহোক, শোনা হইলো না মিনতি কি যেন চাও বলিতে?
বাবু আজ্ঞে, মনকান্দি গ্রামের ছোট্ট একটা দাবী
ওই গ্রামে কেউ নয় মোটে বিপ্লবী
আপনার সুরৎ তাহাদের অন্তরে যেন দেবতার প্রতিচ্ছবি
কায়মনোবাক্যে আশীর্বাদ করে পুরোহিত, বিশপ, মৌলবী
ভালো কথা মিনতি, মৌলবীরা সব নাকি হইয়াছে একজোট
সামনে সময় গুরুতর, দিবে তো সবাই আমারে ভোট
ওদের বলিয়া দিও, দেখায় না যেন অহেতুক দাপট
ওদের ক'জনই বা আসল? সবই দেখি ভণ্ড কপট!
বাবু আজ্ঞে, তাহা বলিব বটে নিশ্চয়
বটে মৌলবী সব হইয়াছে একজোট, তবে আছে সংশয়
সুযোগ পাইলেই যে যারে পারে কাফের মুনাফিক কয়
এই সুযোগ হাতছাড়া করিবার নয়!
অবশ্যি হাতছাড়া করিবার নয়,
পাশে থেকে মুরোদ শেখ চিল্লায়ে কয়
মুরোদ, তুমি কেন আসিলে চুপিসারে?
কথা কেন বলো উচ্চস্বরে, আসিয়া আমার ঘরে?
গোস্তাখি মাফ হয় জাহাঁপনা, টেনশনে বাড়িয়াছে উত্তেজনা
নামে মুরোদ বলিয়া কাজে না হোক কথায় জোর বেশী জাহাঁপনা
বলিতেছিলাম, মোল্লা-মৌলবীদের নিয়া আছে নানা যন্ত্রনা
তবে আমিও করিয়াছি সুক্ষ পরিকল্পনা
মুরোদ! কি সেই পরিকল্পনা? বলিয়া ফেলো তড়িঘড়ি,
আমিও দেখিয়া নিতে চাই ওদের কত বাড়াবাড়ি
কুঁইকুঁই করিয়া মিনতি মুখার্জি কয় মিনতির সুরে
বাবু আজ্ঞে, আমি কি তবে আসিব খানিক পরে
বলিব তখন, যে দাবী ছিলো মনকান্দি গ্রামের অর্ধ শতক ধরে!
[উপরের লেখাটিতে চরিত্র গুলোর নামগুলো নিতান্তই মনগড়া, রাজনৈতিক চাটুকারদের চরিত্র তুলে ধরতেই এই গল্প।]