ঠিক বারোটা বাজে তখন
বুড়িটা স্নান ঘরে,
দরজাতে ঠক ঠক
ডাক হরকরা করে।
‘কে-এ-এ-এ’ কাঁপা কাঁপা গলায়
আওয়াজ করে বুড়ি,
শুনতে ঠিকই পাই সে
লাঠিতে ঘোরাঘুরি।
পোস্টম্যান হেকে বলে
‘চিঠি আছে মা-সি-ই-ই’।
ঠান্ডা লেগে আশি-বুড়ির
ধরেছে সর্দি-কাশি।
‘আসছি...’বলে কাশতে কাশতে
এগিয়ে যখন এলো
চলতে ফিরতে অক্ষম বুড়ির
পা পিছলে গেল।
খপ করে ধরলো পোস্টম্যান
চিঠির তোড়া ফেলে
‘এক্ষুনি কি হতো মাসি
তুমি পড়ে গেলে ?’
কাঁদতে কাদতে বললো বুড়ি
‘কি আর হবে বলো
আর যে পারিনা ভগবান
এবার আমায় তোলো’।
ব্যাথায় ব্যকুল পত্রবাহক
‘কেঁদো নাগো মাসি
অনেক চিঠি পড়ে আছে
এবার আমি আসি’।
চোখের জল মুছে বুড়ি
‘একটু থেকে যা-না,
চশমা কাছে নেই,
তুই পড়ে শোনা’।
ব্যস্ত বাহক বললো তখন
‘তাড়া তাড়ি দাও
কবে থেকে বলছি তোমায়
ডাক্তার বাড়ি যাও’।
এই বলে পোস্টম্যান
পড়তে থাকে পত্র
মাসে মাসে চিঠি পাঠায়
আমেরিকার পুত্র।
“আমরা সবাই ভালো মা
তুমি কেমন আছো ?
নাতি তোমার খুঁজে ফেরে
ঠাকুরমা ঠাকুরমা আজও”
চোখের জল টপ টপ
বুড়ি আঁচল ভাসায়
পত্রবাহক বলে ‘ওরা কেন
মাসে মাসে কাদায় ?’
বুড়ি বলে ‘থাকনা সেসব
আর কি লিখেছে শুনি’।
পত্র বাহক বলে ‘ছেলে তোমার
বৌ-এর খাউ বকুনি।
এবার পুজোয় আসবে না সে
কাজ আছে অনেক’।
এই কথা শুনে বুড়ি
চাপতে পারে না আবেগ
‘কেন তুই আসবি না বাবা
কাজই তোর সব?
আর ক’দিন? মা যে তোর
হয়ে যাবে নিরব’।
ডাক হরকরা বলে ‘মাসি
আরও আছে শোন
সামনের মাসে হাজার পঞ্চাশ
পাঠিয়ে দেবে জানো’।
বুড়ি বলে ‘টাকা দিয়ে
কি হবে রে ভাই?
রান্নার মাসি না এলে
জল বাতাসা খায়।
টাকা পয়সা চাইনা বাবা
থাকনা তোরা সুখে
শুধু মরার পরে একটু
জল দিয়ে যাস মুখে’।
রচনাকালঃ ২৮/০১/২০০৭