বন্ধুরা,
সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয় যখন সারাদিনের ব্যস্ততা আর দূশ্চিন্তা সরিয়ে রেখে আমরা সামিল হই কাব্য কথায়। ভার্চুয়াল জগতের দূরত্বকে উপেক্ষা করে খুঁজতে থাকি মনের খোরাক, মানষিক বিনোদন। আর সেই তাগিদেই আমাদের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন । একটা সম্পূর্ণ দিনের কিছুটা সময় যদি একটু কাব্যালোচিত হয় তাহলে ক্ষতি কি ? এই আসরে আমরা একে অপরকে কতটুকুই বা চিনি-জানি। কিন্তু কৌতুহল তো হয় সকলকে জানবার। তাই আজ আসুন সকলে পরিচিত হই আজকের অতিথি কবির সাথে । আসরে আজকের অতিথি হলেন আসরের সৌখিন কবি, আমাদের সকলের প্রিয় হাফিজুর রহমান চৌধুরী।
বাংলা কবিতা ডট কমের সৌজন্যে প্রচারিত অনুষ্ঠান "অতিথি আলাপন"-এ কবিকে স্বাগতম । প্রিয় কবি বন্ধুরা, আসুন সকলে খুব কাছের থেকে চিনে নিই, জেনে নিই আসরের উপস্থিত সকল কবিদের ভীড়ে সম্মিলিত এই কবিকেও ।
তাহলে বন্ধুরা শুরু করা যাক অতিথি কবির সাথে আজকের আলাপন পর্ব...
============================================
১. নমষ্কার প্রিয় কবি। কেমন আছেন বলুন? কেমন চলছে আপনার লেখা-লেখি?
------------------------------------------------
প্রথমত আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই অতিথী আলাপনে্র সাক্ষাতকার পর্বে আমন্ত্রন করে এই আসরের সন্মানিত পাঠক এবং কবিদের সামনে আমার নিজের কিছু পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ দেয়ার জন্যে। আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের সবার দোয়ায় আমি ভাল আছি।সীমিত মেধা নিয়েও সময় সুযোগ করে লেখালেখিটা চালিয়ে যাচ্ছি যতটুকু পারি।
------------------------------------------------------------
২. প্রিয় কবি, আমরা আপনাকে একান্ত নিজের মতো করে জানতে চাই। আপনার পরিচিতি। আপনার এই সাইটে আসার পটভূমি জানতে চাই।
---------------------------------------------------------------
নিজের ব্যাপারে বললে বলতে হয়, আমি খুব সাদামাটা, প্রচার বিমুখ এবং শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। নিজের মত নিজের জগৎ নিয়েই থাকতে অভ্যস্ত। খুব কোলাহল, উৎসব বা আনুষ্ঠানিকতার দিকে আমার ঝোঁক বরাবরই কম।আমার জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাগুরা জেলায়।তবে আমি মুলত ফেনী জেলার সন্তান। শৈশব থেকেই আমার বাবার চাকুরি জনিত কারনে যাযাবরের মত এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরেছি।শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে ব্যা্চালর করি। এখন নিজেরই একটা ছোটখাট কনসাল্টেন্সী প্রতিষ্ঠান আছে।
সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতি আমার ঝোঁক বরাবর।তবে তার মধ্যে কবিতাই সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
এই সাইটে আসার গল্পটা খুব সরল। আগে এক সময় প্রথম আলো ব্লগ এবং শব্দতরী ব্লগে কবিতা লিখতাম। মাঝে লম্বা বিরতি। হঠাৎ মনে হলো আবার লিখব। বাংলা কবিতা ব্লগ সার্চ দিতেই পেয়ে গেলাম কাংখিত এই সাইট। সেই থেকে এখনও লিখছি।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৩. আপনার কর্ম ব্যস্ততা সরিয়ে আপনি কিভাবে কবিতা লেখেন? আপনি কখন কবিতা লেখেন? কবিতার পাশাপাশি আপনি অন্য কি কি ধরনের লেখালিখি করেন? কবিতা লেখার ব্যাপারে আপনার কি কি অন্তরায়? আসরের নতুন কবি বন্ধুদের ভালো কবিতা লেখার কি কি টিপস দেবেন?
কর্ম ব্যস্ততা সব সময়ই আছে। তবে আমার একটা সুবিধে হচ্ছে কাজের একটা বড় অংশ আমাকে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে বসেই সারতে হয়। তাই হঠাৎ যখন কোন কবিতার ভাব এসে পড়ে সাথে সাথে সেটা টুকে নিতে পারি। অফিসে বসেও আমি অনেক কবিতা লিখেছি ও আপ লোড করেছি।তবে দিনের ব্যস্ততা সেরে রাতের ভাগেই বেশি লিখতে পারি।
কবিতার পাশাপাশি অন্যকিছু খুব বেশি লিখেছি তা নয়। কয়েকটা ছোট গল্প লিখেছিলাম। বিশ্ব বিদ্যালয় পাঠকালীন সময়ে বিভিন্ন সাহিত্য মেগাজিনে ছাপাও হয়ে ছিলো। সেই পর্যন্তই। কেন জানি গল্প লিখতে গেলেও কবিতার লাইন বেরিয়ে আসে। তাই কেউ কেউ আমাকে বলেছেন আমি যেন কবিতা নিয়েই থাকি।
লেখালেখির প্রধান অন্তরায় আমার সময়। লিখতে গেলে আসলে পড়তে হয়। আরো বেশি জানতে হয়। সেই জানার পরিধি বাড়ানোর মত পর্যাপ্ত সময় এখন পাই না। প্রফেশনাল কাজের চাপ আছে।
আসরের নবীন কবিদের টিপস দেবার মত যোগ্যতা আমার আছে কি না আমি জানি না। আমি শুধু কবিতা নিয়ে আমার কিছু ভাবনা শেয়ার করতে পারি।
বিশ্বের একজন সুবিখ্যাত স্থপতি আছেন-লুই আই কান। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে – Right thing half done is always better than wrong thing well done. কবিতা লেখার সময় আমি এই বিষয়টা মাথায় রাখার চেষ্টা করি।
২য় কথা হচ্ছে সব সময় আরো বেশি জানার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। যদিও জানা ও সৃষ্টি করার সামর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার বলে আমার বিশ্বাস। কবিতা শিখে কবি হওয়া যায় না বলেই আমি মনে করি। যার মধ্যে সহজাত কবিত্ব আছে সেই শুধু জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে তার লেখার ধারকে আরো বাড়িয়ে নিতে পারে মাত্র। যাই হোক কবিতায় অন্তত তিনটি বিষয় থাকা অপরিহার্য বলে আমার ধারনা-
১) ভাবঃ বিমূর্ত শব্দ, চিত্রকল্প অথবা রূপকের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা মূর্ত বক্তব্যটাই হচ্ছে ভাব।এই ক্ষেত্রে ভাবের একটা অংশকে রেখে দিতে হবে পাঠকের উৎঘাটনের জন্যে। তবেই প্রকৃত কাব্য রস নিসৃত হবে।
২) কাঠামোঃ ছন্দের মধ্যেই হোক বা ছন্দের বাইরে থেকেই হোক একটা সুপরিকল্পিত কাঠামো বিন্যাস থাকা প্রয়োজন। একটা গদ্য লিখে ইচ্ছে মত বাক্যকে ভেঙে দিলেই কিন্তু তা কবিতা হবে না। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে এটা ঠিক করা যে পাঠককে আমি কোথায় পড়তে দেব আর কোথায় বিরতি নিতে দেব।এই জন্যে গুণী কবিরা বলেন কবিতা চোখ দিয়ে নয় কান পেতে লিখতে হবে।
৩)ঐক্যতানঃ পুরো কবিতা জুড়ে ভাব বলি আর ছন্দ বলি বা বর্ণনা বলি সব কিছুর শু্রু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ঐক্যতান থাকা জরুরী।যেমন সঙ্গীতে অনেক বাদ্য যন্ত্র বাজলেও তারা একটা নির্দিষ্ট তাল এবং লয় রেখে ঐক্যতান সৃষ্টি করে।-
------------------------------------------------------------- ৪. আপনি কাউকে কবিতা লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন? আপনার প্রেরণায় কি
কখনো কেউ এই সাইটে এসেছেন? আপনি কিভাবে অন্যের থেকে অনুপ্রেরণ আশা করেন?
--------------------------------------------------
আগেই বলেছি আমি কিছুটা অন্তঃমুখী টাইপের মানুষ। তাই অন্যকে সরাসরি উৎসাহিত করার মত অভিজ্ঞতা আমার ঘটে নি। তবে অন্যের পাতায় গিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করে চেষ্টা করি যথাসাধ্য উৎসাহিত করতে।আনুষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি নয় আমি চাই ,আমার কবিতা পড়ে যদি কারো সত্যি ভাল লাগে, তবে সে টুকু আন্তরিক ভাবে শেয়ার করলেই আমি খুশি।আন্তরিকতা অর্থে আমি বলতে চাইছি তাঁরা যেন কবিতার ভাল মন্দ দুটোই মন খুলে শেয়ার করেন। তবেই কবি হিসেবে আমি উপকৃত হব এবং প্রকৃত প্রেরণা লাভ করব।
--------------------------------------------------------------
৫. কবিতা লিখতে
লিখতে আপনার কখনো কি মনে হয়েছে এর থেকে গল্প লেখা অনেক সহজ? কিম্বা কবিতা
লিখতে লিখতে কোন গল্পের জন্ম হয়েছে কি?
---------------------------------------------------
আমার কাছে উল্টোটাই মনে হয়। মানে গল্পের চেয়ে কবিতা লেখা অনেক সহজ। হয়ত কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বলেই এমন মনে হয়। না, কবিতা লিখতে লিখতে কোন গল্পের প্লট আমার মাথায় আসে নি।
----------------------------------------------------------------
৬. কবিতা কি আপনার মধ্যে জন্ম নেয় নাকি আপনি কবিতাকে জন্ম দেন?আপনার কি কোন বই প্রকাশিত হয়েছে? বিস্তারিত জানতে চাইছি।
----------------------------------------------------------------
কবিতা যে কখন কিভাবে জন্ম নেয় আমি নিজেও জানি না। কখনো এভাবে ভেবে দেখি নি।প্রায় সময় আমার অনেক কবিতা হয়ত একটা শব্দকে বা বাক্যকে ঘিরেই শুরু হয়েছে, তারপর লিখতে বসে আগে পরে আরো যোগ বিয়োগের মধ্য দিয়ে একটা কবিতা জন্ম লাভ করেছে।তবে খুব সাবলিল ভাবে কবিতা না এলে আমি জোর করে ঘসামাজা করে লিখতে যাই না। আমার মনে হয় কবিতা জোর করে লেখার মত বিষয় নয়।
না। আমার এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বা পত্র পত্রিকায় হাতে গোনা কিছু লেখা ছাপানো হলেও গ্রন্থ আকারে কিছু প্রকাশ হয় নি। খুব সহসা সে রকম কিছু ভাবছিও না। আমি সখের কবি হিসেবেই লিখে যেতে চাই।
৭. বর্তমানে এই অত্যাধুনিক স্মার্ট যুগে সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন লাইন বিভিন্ন ব্লগ বা সাইটের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মতামত যদি আমাদের পাঠক কূল কে জানান তো খুব ভালো লাগে।
--------------------------------------------------------------
সুন্দর প্রশ্ন। আমারতো মনে হয় আমরা সত্যি খুব ভাগ্যবান। অন লাইনে লেখালেখির সব চেয়ে বড় যেটা সুবিধা তা হচ্ছে পাঠকের তাৎক্ষণিক প্রতক্রিয়া জানতে পারা। পাশাপাশি যে কোন স্থানে থেকে যে কোন মুহুর্তে লেখার সুযোগ। তাই আমি বলব এত বড় সুযোগ পাওয়া সত্যেও যদি আমরা প্রতিভা বিকাশ করতে না পারি তবে তা হবে আমাদের চরম দূর্ভাগ্য। এই ক্ষেত্রে একটাই প্রতিবন্ধকতা আছে যা আমার কাছে মনে হয় সেটা হচ্ছে প্রচলিত মাধ্যমে যারা লিখেন এবং পাঠ করেন তাদের কম সম্পৃক্ততা। আরো বেশি সিরিয়াস লেখক ও পাঠকের সমাবেশ হওয়াটা জরুরী।
৮. বর্তমানে প্রতিদিন নতুন নতুন কবি এই আসরে আসছেন ঠিকই তবে অনেক কবিই কিছুদিন লেখার পরেই এই আসরে তেমন আসছেন না বা আসলেও কবিতা পোস্ট করছেন না। এর কারন হিসাবে আপনি কি মনে করেন?
--------------------------------------------------
সঠিক চিত্র। দেখুন নামের আগে বা পরে কবি যোগ করলেই কবি হওয়া সম্ভব নয়। এই আসরে কবি হিসেবে নাম নিবন্ধন করলেই কবি হয়ে যাবে তা তো নয়। যার ভিতরে কবিত্ব আছে সে কবিতার প্রেমের কারনেই আসরে পড়ে থাকবে। বাকিরা হারিয়ে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।
৯. যারা এই আসর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন? তাদের চলে যাবার কারন হিসাবে আপনি কি মনে করেন?
--------------------------------------------------
কবিদের আসর চলে যাওয়ার মুল কারন আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি। তবে কিছু কিছু ভাল কবি আসর ছেড়েছেন বা ছাড়ছেন-ব্যক্তিগত কারণে, কিংবা কারো দ্বারা অহেতুক নাজেহাল হওয়ার দরুন অথবা হতে পারে অভিমান করে।অভিমান করাটা কবিদের একদম স্বাভাবিক একটা গুন।ভাল এবং গুনী কবিদের আমি বলব সব কিছু ভুলে শুধু কবিতার কথা ভেবে ফিরে আসুন।
১০. এই আসর থেকে আপনার প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে কিছু বলুন।
-----------------------------------------------------------------
এই আসর আমাকে যা দিয়েছে তা অমূল্য। এতো প্রেরণা এতো ভালবাসা আমি পেয়েছি সহযাত্রী কবি বন্ধুদের কাছ থেকে যা শুধু কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রকাশ করার মত নয়।অপ্রাপ্তি বলতে কিছু নেই।
--------------------------------------------------------------
১১.
বাংলা কবিতার একাল ও সেকাল নিয়ে আপনার থেকে কিছু শুনতে চাই।
---------------------------------------------------------------
এক বাক্যের এই প্রশ্নটির গভীরতা এতো ব্যাপক যে এত সীমিত পরিসরে বলা প্রায় আসম্ভব।আমি শুধু এক কথায় বলতে চাই- আমরা যেন পিছিয়ে আছি সেকালের কবিদের কাছ থেকে সাধনার জায়গাটিতে।তাঁরা আরো অনেক বেশি নিবেদিত ছিলেন বলে আমার কাছে মনে হয়। বিশ্ব সাহিত্য নিয়েও তাঁদের গভীর জ্ঞান এবং অভিনিবেশ ছিলো। আর আমরা অল্প জেনেই বেশি প্রকাশ করার নেশায় মত্ত আছি।
----------------------------------------------------------------
১২. এই সাইটকে আপনি অন্য সাইটের তুলনাই কতখানি উতকৃষ্ট মনে করেন? কেন?
সাইটের উন্নতিকল্পে এডমিনের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন?
---------------------------------------------------
আমি অন্যান্য সাইটে খুব একটা যাই না। তাই তুলনা মূলক পর্যালোচনা সম্ভব নয়। তবে এই সাইট আমার ভীষন ভাল লাগে। খুব ইউজার ফ্রেন্ডলী সাইট।
সম্মানিত এডমিন এর ভূমিকা প্রশংসনীয় এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি অনেক উদার মনোভাব নিয়ে সবাইকে সৃজনশীলতা অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়েছেন যার জন্যে অনেক ধন্যবাদ প্রাপ্য।তবে পাশাপাশি যারা লিখছেন তাদেরও উচিত সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরে ও পরামর্শ দিয়ে এডমিনকে যথা সাধ্য সাহায্য করা।
বন্ধুরা, আমরা আজকের অনুষ্ঠানের একদম শেষে উপস্থিত। আমাদের আসরের অতিথিকে এবার আপনারা প্রশ্ন করুন। আমাদের অতিথি কবি হাফিজুর রহমান চৌধুরী তার যথাযত উত্তর দিয়ে আপনাদের সহিত আলাপ করবেন। আর ততক্ষণে আমরা একটু চা বিরতি নিই।