বন্ধুরা, আশা কবি সকলেই ভালো আছেন। আপনাদের ভালোবাসা আর আসরের টানে প্রিতি বুধবারের মতো চলে এলাম অতিথি আলাপনে, তবে আজ একটু অন্য রকম ভাবে। সকলেই বলবেন কিন্তু আজকের আলাপন কেমন লাগলো? এই নতুন আলাপনে আপনাদের সকলের স্বাগত।
তাহলে বন্ধুরা চলে আসি আজকের অতিথির কাছে। আমাদের আজকের আলাপনের অতিথি হলেন আমার আপনার আমাদের সকলের প্রিয় কবি আরশাদ ইমাম। ।বন্ধুরা আর বিলম্ব নয় শুরু করি কবির সাথে কথোপকথন। আপনারাও সরাসরি প্রশ্ন করুন আমাদের অতিথি কবির কাছে।
প্রশ্ন ১.
কেমন আছেন বলুন? কেমন চলছে আপনার লেখা-লেখি?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
আছি ভালো এবং ব্যস্ত। লেখালেখি চলছে স্বাভাবিক গতিতে।
প্রশ্ন ২.
আপনার জন্মস্থান, কর্মস্থান সম্পর্কে আমাদের আসরে কবিদের যদি বলেন। আপনি আপনার নিজের কথা বলুন, মানে আপনার বাড়িতে কে কে আছেন? তারা কে কি করেন? আপনি কি করেন? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
আমার জন্ম বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায়।উপজেলা শহরে লেখাপড়া করেছি স্কুল পর্যন্ত। তাপর কলেজ অর্থাৎ হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল পড়েছি রাজশাহী সরকারী (ওল্ড গভমেন্ট) কলেজে। এরপর ঢাকায় চলে আসি ১৯৮৯ সালে। ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। সম্মান মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করে কিছুকাল বেকার। হতাশ। দুঃখ কষ্টকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করা, তার ভিতর দিয়ে যাওয়া এবং জীবনকে প্রকৃত রূপে চেনার সুযোগ তখনই ঘটে। তিন বছর পেলাম সরকারের সিভিল সার্ভিসে চাকুরী। গ্লানিময় জীবনের পরিসমাপ্তির সূচনা তখন।তারপর থেকে সার্ভিসে আছি। ইন এ নাটশেল। সরকারের পরিকল্পনা, আইন ও বিচার, অর্থ, মহিলা ও শিশু, শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে কর্মসেবা প্রদান করেছি। বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত আছি।
দুই ভাই বোন। বোন ছোট। সেও সিভিল সার্ভিসে আছে। এখন বাংলাদেশের একটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারতে যা অতিরিক্ত জেলা শাসক/ডিএম)। আমার স্ত্রীও পেশাজীবি, পেশায় চিকিৎসক। একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের এ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর।আমার আব্বা শিক্ষক ছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।আমার আম্মাও শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তিনি আবার মুসলিম ধর্মমতে হজ্জ্বও সম্পাদন করেছেন।আত্মীয় স্বজন অনেক আছেন। যোগযোগ আছে। তবে কম।
আমার দুই ছেলে। ছোট জন পাঁচ বছর, বড়জন বারো।স্কুল গোয়িং। গ্রামের সঙ্গে আমার সরাসরি যোগযোগ আছে। নিজস্ব (পৈত্রিক) বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনার সুবাদে। এছাড়া চাকরীর কল্যাণে দেশের ৬৫% উপজেলা/জেলা পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে।অবশ্য সে সময় কবিতা লিখিনি।
প্রশ্ন ৩.
আপনার কর্মব্যস্ততা সরিয়ে আপনি কিভাবে কবিতা লেখেন? আপনি কখন কবিতা লেখেন? কবিতার পাশাপাশি আপনি অন্য কি কি ধরনের লেখালিখি করেন? কবিতা লেখার ব্যাপারে আপনার কি কি অন্তরায়? আসরের নতুন কবি বন্ধুদের ভালো কবিতা লেখার কি কি টিপস দেবেন?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
১৯৯৭ হতে ২০১৫ পর্য্ন্ত কবিতা লেখা বন্ধ ছিল।২০১৫ থেকে আবার স্টার্ট করেছি। এখন চলছে।কাজের ফাঁকে কবিতা, শোবার আগে কবিতা, বন।দুদের সঙ্গে আলাপে কবিতা, সংকটে, উল্লাসে, চেতনায়, সংশয়ে, শ্বাসে, ভালোবাসায়, প্রেমে-অপ্রেমে, স্বপ্নে, বিভ্রমে, ভ্রান্তি বিলাসে, কর্ম সৃজনে.......কবিতা কবিতা কবিতা।কবিতা ভালো লাগে। কবিতা অনেক পড়িনি। তবে জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্য্, সৈয়দ শামসুল হক, শামুসর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, হেলাল হাফিজ এঁদের কবিতা পড়েছি।আর পড়েছি কবি ও সাহিত্যিক হুমায়ূন আজাদ স্যার-এর লেখা। তাঁর লেখা সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমার জীবনে তার লেখা ২/৩টি উপন্যাস পাঠ হলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ২/৩টি মহৎ কবিতা পাঠ।কেটি উপন্যাসই একটি প্রেমের কবিতা (যেমন-ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ)।মানুষ হিসেবে আমি কবি শামসুর রাহমাস, হুমায়ূন আজাদ স্যার এর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম।মানুষ হিসেবে দু’জনকেই অতি চমৎকার মানুষ বলে আমার মনে হয়েছে।হুমায়ূন আজাদ স্যারের মত এত ভালো মনের মানুষ বেঁচে থাকা সমাজে খুব প্রয়োজন ছিল্।যদিও তাঁরা গত।তবে আমাকে নির্দ্বিধায় বলা চলে পাঠের জগতে নাথিং।এখানে বলে রাখা ভাল।আমি নিজেকে কবি বলে পরিচয় দিই না। কারণ আমি কবিতা বিষয়ে কোন কেতাদুরস্ত মানুষ নই।আমার কোন প্রকাশনা নেই। না কবিতা না গল্প বা উপন্যাস।অথবা প্রবন্ধ।আমি একজন শখের লিখিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকালে প্রচুর গল্প লিখেছি।গল্পের নেশায় পথে পথে ঘুরতাম। আমার দেখার চোখ খুলে দিয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক, রশীদ করিম, হাসান আজিজুল হক, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় প্রমুখ।তখন ছোট গল্প পাঠের নেশা ছিল। আপলাতুন নামের একজন ভদ্রলোক দারুণ গল্প লিখতেন, গোগ্রাসে গিলতাম তার গল্প। ঐ সময় প্রচুর উপন্যাস পড়েছি। আরো পরে এসেছেন হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তারাও আমাকে ব্যাপক অনুপ্রাণিত করেছেন। হুমায়ূন ও জাফর ইকবাল স্যার তো গল্প তৈরি, পাঠ ও লেখার ধরণে বেশ আঁচড় ফেলেছেন।ফিরে সায়েন্স ফিকশনের প্রেমে পড়ে যাই। কবিতা ভুলে। সব কিছু থেতে যায় ২০০১ এ, হুমায়ূন ও জাফর ইকবাল ছাড়া। তাদের পাঠক হয়ে পার করেছি দেড় যুগ। কলম তুলে রেখে শুধু পড়েছি।
একটি কথা না বললেই নয়, আমার পাঠের জগতে একটি বিশাল স্থান দখল করে আছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।আপনারা তাকে চেনেন কি না জানিনা। তিনি অন্তরালের মানুষ। কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে যা দিয়ে গেছেন তা অনেকেই দিতে পারেনি। বিদেশী সাহিত্যের অনুবাদ ও কিছু মৌলিক লেখা। বাংলাদেশের পাঠক সমাজ তার হাত দিয়ে তৈরি হয়েছে। এটাকে ব্যবহার করেছেন ইমদাদুল হক মিলন ও হুমায়ূন আহমেদ।
আর একটা সময় ছিল মঞ্চ নাটক তথা গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ঢাকায় নাট্য শিক্ষাঙ্গন নামের একটি নাটক শেখার সুকলে ১ বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করে মঞ্চ নাটক, লাইটিং, মেক-আপ/ গেট-আপ, মঞ্চসজ্জা ও অভিনয়ে প্রায় পাঁচ বছর সময় দিয়েছি। বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমী থেকেও নাটক এর বিভিন্ন উইংস সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ নিই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। এরপর ঢাকার নাট্যচক্র নামের একটি নাটকের গ্রুপের সঙ্গে নিয়মিত নাটক করেছি। লিখেছি গল্প-কবিতা। মাঝে মাঝে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করেছি।সংখ্যায় অনুল্লেখ্য।আর দেখেছি নাটক-সিনেমা। সবেই থেমে যায় বেকারত্বের চাপে বেকানের সময়ে।সময় বহিয়া যায়।সে পথে আর ফেরা হয়নি।
বর্তমানে কবিতা আবার লিখছি। আর ফেসবুক নিয়ে আছি। ফেসবুকে নানা রকম সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখি। ভালবাসা আমার বাংলা ভাষা, দেশ, সংস্কৃতি, সাহিত্য। ওরিয়েন্টালিজম (অন্ধভাবে নয়)। মাঝে পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছি। সাহিত্যের পাতার জন্য কাজ করেছি। পেইন্টিং পছন্দ করি।ভ্রমণ করতে ভালো লাগে। বিজ্ঞানের জ্ঞান শিশির বিন্দু। কিন্তু আগ্রহ সহকারে পড়ি। রানৈতিক বিশ্বাস মুক্তিযদ্ধের প্রতি ভালবাসা। পৃথিবীর ডান ও বাম ঘরানার মধ্যে বামটাকেই প্রিফার করি। তবে বাম রাজনীতির বর্মান হালচাল পছন্দ না।বলতে পারেন সোভিয়েত ঘেঁষা, পুতিন মার্কা।সারা পৃথিবীর প্রতিটি চলমান ঘটনায় আমার নিজস্ব অবস্থান আছে, প্রভাবিত না হয়েই। ফার্ম এ্যান্ড ফাইনাল।বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি আমার প্রিয় বিষয়। বিজ্ঞান না থাকলেও ধর্ম, রাজনীতি ও মানবিক বিষয়গুলো কবিতায় ছড়িয়ে পড়ে। আছে প্রেম। ব্যক্তি গোষ্ঠী, দেশ সমাজ ও বাঙালীয়ানার প্রতি।পরিপূর্ণ মুক্ত মানুষ হতে পারিনি।পাকিস্তানের (এবং তাদের সহযোগী যারা তাদের)বিষয়ে একটা এ্যালার্জী কাজ করে। তবে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে দ্বিধান্বিত নই।প্রায়(!)সৎভাবে জীবন যাপন করি।মানুষ হিসেবে অনেক দুর্বলতা আছে।আমি ত্রুটিহীন মানুষ নই।ধর্মের ব্যাপারেও বিভিন্ন ভাবনা আছে।জ্ঞান নাই বলে লিখি না।
এখন কবিতাই একমাত্র লেখালেখি। গল্প লেখার চেষ্টা করিনি। তবে পরিকল্পনা আছে।কবিতা লেখঅয কোন অন্তরায় আছে বলে মনে করি না। তবে লেখার আগে পাঁচটি জিনিস দরকার।
এক, ভালবাসা (তা সে ব্যক্তি হোক, বিষয় হোক, ঘটনা হোক),
দুই, দেখার চোখ-অনুভবের চোখ,
তিন, কবিতা পড়ার অভ্যাস ও ধৈর্য্,
চার, ভাবকে ভাষায় সাজাবার জন্য কিছু প্রস্তুতি এবং
পাঁচ, লেখার প্রবণতা ও লেখার ভাষা।
প্রশ্ন ৪.
আপনি কাউকে কবিতা লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন? আপনার প্রেরণায় কি কখনো কেউ এই সাইটে এসেছেন? আপনি কিভাবে অন্যের থেকে অনুপ্রেরণ আশা করেন?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
আমার অনুপ্রেরণায় কেউ এই সাইটে এসেছে কি না আমি জানি না। আমি এই সাইটে বনচারীর মত ঘুরে বেড়াই। যার লেখা ভালো লাগে ভূয়সী প্রশংসা করি।মন্দ লাগলে কিছু না বলেই চলে যাই। মাঝামাঝি লাগলে দুটো কথা বলি সৎ পরামর্শ দিই।তবে যেটা সাধারণতঃ করিনা তা হলো কাউকে গালমন্দ ও ভর্ৎসনা।তবে এই সাইটে অনেক কবি আছেন যাদের প্রধান লক্ষ হলো বর্মান আওয়ামীলীগ সরকারকে গালাগাল করা। যে কবিতাটি মানোত্তর্ণি হতে পারতো, ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু গালাগাল বা অন্যায্য
খোঁচাখুঁচির কারণে তা আর মান উৎরাতে পারেনা। কবিতায় ব্যঙ্গ থাকবে।কিন্তু সেটা যেন অমূলক দোষারোপ না হয় সেদিকটা কেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করি।দোষীকে দোষী বলা যায়, কিন্ত নির্দোষকে? যায় না।কবিতা ভাষার আরেক রূপ। নৈব্যক্তিক। এটা একজন মানুষকে তার বয়সের চেয়ে বেশি বাঁচিয়ে রাখবে। আপনি-আমি যখন থাকব না তখন কবিতা আপনাকে আসাকে চেনাবে। কবিতা এমন হয় যেন এটি আপনার-আমার সঠিক প্রতিরূপ-প্রতিচিত্র তৈরি করে, ভুল চিত্র বা ভুল মেসেজ না দেয়।এটি একই সঙ্গে সময়, জীবন, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন, বিশ্বাস, চেতনা, ভালবাসা, সমস্যা, সম্ভাবনা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যতকে ভাষারূপ দিয়ে আঁকবে। কাজেই সেটা কবিকে ভাবতে হবে। আমি আমার ভাব-আবেগের বশে লিখব-ঠিক আছে, কিন্তু সেটা যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা সমীচীন।কবি আসলে সমাজের অগ্রপথিক। এটা মনে রাখতে হবে।
আমি অনেক কবিকে দেখেছি এই সাইট থেকে সরে যাচ্ছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা মনে করছেন, এখানে কবিতা পাঠের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হয়। সহসা কেউ কবিতা পড়ে না। এজন্য অনেকে অনিয়মিত হয়ে যান। আমি কয়েকজনকে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তার অর্ধেক এসেছেন, অর্ধেক আসেননি।আর যারা এসেছেন তাদের অনেকে বড় রকমের বিরতি নিয়ে আসেন।
আপনি কিভাবে অন্যের থেকে অনুপ্রেরণ আশা করেন? এ কথার জবাব আমি আগের প্রশ্নের উত্তরে দিয়েছি।
প্রশ্ন ৫.
আপনার কাছে কোনটি লেখা সহজ কবিতা না গল্প বা উপন্যাস? কবিতা লিখতে লিখতে আপনার কখনো কি মনে হয়েছে এর থেকে গল্প লেখা অনেক সহজ? কিম্বা কবিতা লিখতে লিখতে কোন গল্পের জন্ম হয়েছে কি?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
কবিতা না গল্প বা উপন্যাস- কোনটাই লেখা সহজ না।এদের প্রত্যেকের মেজাজ, অভিরুচি, প্লট বা ক্ষেত্র, কলেবর, উপস্থাপনা রীতি কৌশল, ভাষারীতি-কারুকাজ, শৈলী এবং সর্বোপরি সময়-দাবী ভিন্ন। আমি কোনটাকেই সহজ ও একটিকে অপরটির চেয়ে ছোট বা বড় মনে করি না। কবিতা লিখে আমি অনেক আনন্দ পাই, বাক্য শব্দ লাইন, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোল, ড্যাশ, বিস্ময়সূচক চিহ্ন, প্রশার চিহ্ন ইত্যাদি বসিয়ে মনে করি একটি প্রসাদ নির্মাণ করলাম। গল্প লিখে মনে হয় একটি সন্তান প্রসব করলাম। উপন্যাস বা বড় গল্প যাই বলি লিখে মনে হয়েছে একটি বিশালাকার দায়িত্ব পালন করলাম।আবার এই সাইটে নিবন্ধিত হবার পর কবি জীবনানন্দ দাশ ও বনলতা সেনকে নিয়ে একটি বড় কবিতা লেখার প্রয়াস পেয়েছিলাম। সেটা লিখতেও আমাকে বিশালাকার একটি প্লট তৈরি করতে হয়েছিল মনের ভিতরে। সেট বড় গল্পের মতোই মনে হয়েছিল।কবিতা থেকে আমার হাতে কোন গল্পের জন্ম এখনো হয়নি। তবে কবিতার জন্য গল্পের জন্ম হয়েছে, মাথায়। তবে গল্প থেকে অনেক কবিতা জন্মলাভ করেছে। বিপরীতক্রমেও হতে পারে। তবে আমার ক্ষেত্রে হয়নি।
প্রশ্ন ৬.
কবি হিসাবে পাঠকের মন জয় করার সহজ উপায় কি? আপনার মতামত? কবি না গল্পকার সহজেই পাঠকের মন জয় করেন? আপনার মতামত?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
উত্তরটা আমার জানা নেই।মানে আমি যা মনে করি তিা ঠিকসহতেও পারে নাও পারে।কারণ আগেই বলেছি আমার কোন প্রকাশনা নাই।তবে মনে হয় পাঠকেরা ভালবাসার কবিতা বেশি পড়েন। বাঙালী বড়ই ছন্দ-প্রিয় জাতি। ছন্দোবদ্ধ লেখা তারা বেশ পছন্দ করেন। তবে যারা আধুনিক বা আধুনিক মনস্ক কবি বলে নিজেদের ভাবেন, তাঁরা অরেকটু বাড়িয়ে উত্তর-আধুনিক ভাবধারার দুর্বোধ্য ছন্দ, ভাষা, বিন্যাস ও শব্দ শৈলীর কবিতা লিখে থাকেন। আমি এই সাইটে আসার পর দেখেছি এমন অনেক কবি এমন কবিতা লেখেন যা শত শত মন্তব্যের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। অথচ অমার কাছে ভালো লেগেছে এমন কিছু কবিতা পাঠক শূন্যতায় অস্থি-চর্ম সার।অনেক মান সম্মত কবিতা পাঠক প্রিয়তা পায়নি। কিন্তু আরো আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ করেছি কবিতা হয়নি (মানে আমার মনে হয়েছে তা কবিতার যোগ্য নয়) পাঠক প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন।কাজেই কি করে বলি যে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি কি?
মানুষের হাতে সময় কম। এ বিচারে কবিতা পাঠ কম সময় দাবী করে। কিন্ত আমার মনে হয় গল্প অনেক অল্প পরিসরে অনেক কথা বলতে পারে, যা উপন্যাসের পক্ষে সম্ভব নয়।কবিতা আর গল্প উপন্যাস ভিন্ন ফর্মের জিনিস। তুলনা প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন ৭.
বর্তমানে এই অত্যাধুনিক স্মার্ট যুগে সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন লাইন বিভিন্ন ব্লগ বা সাইটের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মতামত যদি আমাদের পাঠক কূল কে জানান তো খুব ভালো লাগে।
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
বর্তমানে এই অত্যাধুনিক স্মার্ট যুগে সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন লাইন বিভিন্ন ব্লগ বা সাইটের ভূমিকা ব্যাপক। আমি নিজে তো এর স্বাক্ষী। বাংলা কবিতা সাইট না পলে আমার কবিতা ডায়েরী বা মনের ভিতরে বন্দী থাকতো বা মারা যেত। এই সাইট আমার অন্ধ মনের বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছি। আমি আমার পক্ষ থেকে এই সাইটকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সময় দিয়েছি এই একটি বছরে।আমি বিভিন্ন ব্লগে ঘুরি। তবে কবিতা লিখলে প্রায়শই এখানে এসে তা পোস্ট কার। দুটো লিখলে অন্যটা ফেসবুকে দিই। কার বেশি হলে অন্যত্র।বাংলা কবিতা ব্লগে না বুঝে বেশ কিছ লেখা কবিতা আকারে পোস্ট করে, এখন সেই বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। এগুলো কল্ঙ্ক তিলকের মতো হয়ে আছে। এগুলো সরানো যায় না। ব্যান তালিকায় ঝুলে আছে। তবুও আমি অন লাইন বিভিন্ন ব্লগ বা সাইটের ভূমিকা অবিস্মরণীয় বলব।আর এই সাইটটি দুই বাংলার কবিদের এক স্পর্শহীন বন্ধন মালা। যাদের অনেকের সাথে কোনদিন দেখা হবে কি না তারা এর মাধ্যমে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।অনেকরে সঙ্গে অনেকের দেখা সাক্ষাৎ হয়তো হয়েছে, কিন্তু লেখার যে আনন্দ তা এখানে না এলে অপূর্ণ থাকতো। এজন্য এই সাইটকে বিশেস ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রশ্ন ৮.
বর্তমানে প্রতিদিন নতুন নতুন কবি এই আসরে আসছেন ঠিকই তবে অনেক কবিই কিছুদিন লেখার পরেই এই আসরে তেমন আসছেন না বা আসলেও কবিতা পোস্ট করছেন না। এর কারণ হিসাবে আপনি কি মনে করেন?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
বর্তমানে প্রতিদিন নতুন নতুন কবি এই আসরে আসছেন ঠিকই তবে অনেক কবিই কিছুদিন লেখার পরেই এই আসরে তেমন আসছেন না বা আসলেও কবিতা পোস্ট করছেন না। এর কারণ তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কবি কবিতা লেখে পাঠকের জন্য। পাঠক যখন তা না পড়ে কবি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আর যারা নতুন, তারা তরুণ তাজা প্রাণ। একটা তা[ক্ষণিক স্বীকৃতি মনে মনে প্রত্যাশা করেন। সে প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশ হয়ে পড়েন। আমাদের মত যারা দীর্ঘদিন ধরে আছি তাদের অনেকেও এখন একই কারণে ইরেগুলার। এ বিষয়ে আমি আমার ৪ নং প্রশ্নের উত্তরে তার কিছুটা আলোকপাত করেছি।সেসবও প্রণিধানযোগ্য।
প্রশ্ন ৯. যারা এই আসর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
আপনারা চলে যাবেন না। এখানে লিখুন, প্রয়োজনে অন্য সাইটেও লিখুন।মনের মত লিখুন। প্রতিদিন না পারলে অনিয়মিত লিখুন। কিন্তু লিখুন। এখানে লেখা বন্ধ করবেন না। লেখা বন্ধ করবেন না।
প্রশ্ন ১০.
এই সাইটকে আপনি অন্য সাইটের তুলনাই কতখানি উৎকৃষ্ট মনে করেন?কেন? সাইটের উন্নতিকল্পে এডমিনের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন?
============================================
***কবি আরশাদ ইমামঃ
আমি বেশ কয়েকটি কবিতার সাইট ঘেঁটে দেখে তারপর এই সাইটে নিবন্ধিত হয়েছি। এখন পর্যন্ত এটাই আমার একমাত্র জানালা।এই সাইটের সঙ্গে এ্যাটাচড্ তারুণ্য ব্লগেও মাঝে মাঝে লিখি।তবে আনন্দ পাই এখানে লিখে।এখানে অপশনগুলো বেশ ভালো লাগে। সাইটের টে-আপটাও ভালো। তবে এর আরো ইন্নয়ন প্রয়োজন।কি রকম?সমস্যাগুলো বলি তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
(১) এখানে ইউনিকোডে লেখা যায় কিন্তু সচ্ছন্দভাবে চলাফেরা করা যায় না। এ্যারো কি ব্যবহার করে সরাসরি এক লাইন উপরে আসা যায় না।মাইক্রোসফট্ ওয়ার্ড বা ওয়ার্ড ফাইল-এর অনেক অপশনই এখানে কাজ করে না।
(২) কোন সিম্বল নিয়ে পেস্ট করা যায় না। লেখার সঙ্গে যদি কোন ছবি পোস্ট করতে চাই সেটার কোন সুযোগ এখানে নাই।এখন যা সময়, শুধু লেখা নয় ইলাস্ট্রেশন এর সযোগ রাখা বা্ঞ্ছনীয়। এখানে সে সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
(৩) একটি লেখা থেকে অন্য লেখায় যেতে গেলে দরজা-জানালা বন্ধ করে অন্খার সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে তারপর আলোর মুখ দেখা যায়। এখানে এক কবিতা থেকে সরাসরি অন্য কবিতায় বা লেখায় ট্রান্সফার হওয়ার সুযোগ তৈরি করা সমীচীন।সেক্ষেত্রে লেখার পাশে একটি লিস্ট বা অশন রাখা যেতে পারে।
(৪) দু’টো উইন্ডো পাশাপাশি দেখার অপশন ক্রিয়েট করা যেতে পারে।
(৫) কবিতার পাঠক কারা সেটা কবির জানার অবকাশ নেই।কে বা কারা কতবার কবিতা পাঠ করেছেন তা জানা যায় না, কেবলমাত্র কতবার পঠিত হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যান দেখা যায়, যেটাতে কবি হিসেবে আমার মন ভরে না।
(৬) সাইটের এডমিন মহাশয় কে তা আজও আমি জানি না। এডমিনের সঙ্গে লেখক-পাঠক বা কবিদের কোন মেল বন্ধন লক্ষ্য করিনি। এমিন মহাশয় রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো দুর্লভ। তাঁর সঙ্গে আলাপ বা সলাপরামর্শ করার ব্যবস্থা করা দরকার।
(৭) লেখকের প্রত্যেকেই যে সাইট অপারেট-এ ব্যাপক পারদর্শী, তা তো নয়। আমি নিজেও খুব কম বুঝি।একটা শিক্ষণ মেনু থাকলে ভাল হত।
(৮) আরেকটা কথা এডমিন প্রকাশিত কবিতা পড়েন কি না তা বুঝা যায় না। কোন কবিতায় আপত্তিকর বা চরিত্র হননের মতো কিছু থাকলে সরাসরি কবির বা লেখকের কাছে মেসেজ দিয়ে (ই-মেইলে)তা নজরে আনা সংশোধনের পরামর্শ বা নিচজ থেকে প্রত্যাহারের প্রস্তাব করার ব্যবস্থা করা যেতে পরে।এটি পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
(৯) এই সাইটে সফট্অয়্যার লিংক সংযোজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত, পুরাতন ও নতুন কবিদের পৃথক পরিসংখ্যান, নাম, পরিচিতি ও কবিতার আলাদা তালিকা/বিবরণ সন্নিবেশ করা যেতে পারে।
(১০) সর্বোপরি প্রতিবছর এক বা একাধিক প্রকাশনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে নির্বাচিত লেখা নিয়ে। বছরান্তে একটা বা একাধিক অনুষ্ঠান করা যেতে পারে কি না তা নিয়ে সাইট কর্পক্ষ চিন্তা করে দেখতে পারেন।
অনেক কথা বললাম। এত কথা বলা ঠিক হলো কি না বুঝতে পারছি না।তবুও তপন দাদার পত্রে ও তাগিদে লেখা হলো। এটি অতিকথন দোষে দুষ্ট হলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন।আর আমাদের বা আমার জন্য কোন বিশেষ এক বা একাধিক পরামর্শ থাকলে দিয়ে বাধিত করবেন।ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা। সালাম। নমস্কার।
নমস্কার কবি। ভালো থাকুন, ভালো লিখুন।
তাহলে বন্ধুরা আজ এই পর্যন্ত। আগামী সপ্তাহে আবার এক প্রিয় কবির সাথে আপনাদের আলাপ হবে। ততক্ষনে আপনারা আমাদের অতিথি কবিকে প্রশ্ন করুন আর জেনে নিন আপন করে আপনার প্রিয় কবিকে।