নমষ্কার বন্ধুরা, আশা কবি সকলেই ভালো আছেন।আপনাদের ভালোবাসা আর আসরের টানে প্রিতি বুধবারের মতো চলে এলাম অতিথি আলাপনে, তবে আজ একটু অন্য রকম ভাবে।সকলেই বলবেন কিন্তু আজকের আলাপন কেমন লাগলো?
তাহলে বন্ধুরা চলে আসি আজকের অতিথির কাছে। আমাদের আজকের আলাপনের অতিথি হলেন আমার আপনার আমাদের সকলের প্রিয় কবি কবি শ.ম. শহীদ।বন্ধুরা আর বিলম্ব নয় শুরু করি কবির সাথে কথোপকথন। আপনারাও সরাসরি প্রশ্ন করুন আমাদের অতিথি কবির কাছে।
১. নমষ্কার কবি। কেমন আছেন?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
নমষ্কার! প্রথমেই আমি আসরের সমস্ত কবিদের আমার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এবং আমাদের প্রিয় এডমিন এবং আপনিসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি “অতিথি আরাপন”-এ সুযোগ প্রদানের জন্য।
আপনাদের আশীর্বাদে এবং সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় খুব ভালো আছি।
২. প্রিয় কবি, আমরা আপনাকে একেবারে আপন করে জানতে চাই। আপনি কোথায় থাকেন? কি করেন? আপনার পরিবারে কে কে থ্যাকেন? তারা কে কি করেন? ইত্যাদি।
***কবি শ.ম.শহীদঃ
বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা শহরে আমার বাড়ি। ব্যবসা করি। ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক দোকান আছে আমার। আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচ। আমি, আমার স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী পাক্কা গৃহিনী (খুব ভালো রাঁধেন তাই) ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে যথাক্রমে দশম (বড় ছেলে), অষ্টম (ছোট ছেলে) ও পঞ্চম শ্রেণীতে মেয়ে।
৩. এবারে জানতে চাইবো কবিতা বলতে আপনি কি বোঝেন?মানে
কবিতা কি? আপনি কেন কবিতা লিখেন? ঠিক কখন আপনার ভেতরে কবিতা জন্ম নেয়?কবিতা জন্ম নেয়, নাকি আপনি কবিতার জন্ম দেন? আপনি কি চাইলেই একটা কবিতালিখতে পারেন?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
কবিতা কি? ছোট্ট প্রশ্ন কিন্তু উত্তর ব্যাপক। জ্ঞানী-গুণীরা নানা ভাবে ‘কবিতা’কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এবং করে চলছেন। আমি অতি সাধারণ তাঁদের মতো সুন্দর করে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারবো না। তবে কবিতা বলতে আমি যা বুঝি তা হচ্ছে-“কোন বিষয়কে স্বল্প পরিসরে সকলের বোধগম্য মনোরম এবং ছান্দিক উপস্থাপনই হচ্ছে কবিতা, যা পাঠক বা শ্রোতার হৃদয়কে ছুঁয়ে দেয়”। অনেকে অন্ত্যমিলকে কবিতার ছন্দ মনে করেন, ব্যাপারটা তা নয়, প্রকাশ শৈলীতে বাক্যে শব্দের অলংকরণই হচ্ছে আসল ছন্দ।
৪. প্রিয় কবি,এবারে জানতে চাইবো এই অনুষ্ঠান আপনার কেমন লাগছে? এই অনুষ্ঠানের উন্নতিকল্পে আপনার পরামর্শ চাই।
***কবি শ.ম.শহীদঃ
বেশ ভালো এবং নিজে অতিথি আলাপনে আসতে পেরে আরো ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে আমার মতো একজন অতি নগন্য (কবিতার আসরে দু’কলম লিখিয়ে) লেখকের প্রকাশ ঘটছে।
এই অনুষ্ঠানে আসরের প্রিয় কবিদের পাশাপাশি নতুন এবং প্রতিশ্রুতিশীল কবিদের বেশী বেশী সুযোগ দেয়া উচিত। তাতে অনুষ্ঠানটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আমার মনে হয়।
৫. আপনার কাব্য প্রেমের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কেন এই কবিতাসক্তি? কবিতা কি আপনি শুধু আপনার মানশিক খোরাক? নাকি অন্য কিছু?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
আসক্তির সঠিক কারণ আমারও অজানা।
যেহেতু কবিতা লিখে আমি কোন অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করিনা বা ভবিষ্যতে নামী-দামী হয়ে ওঠার আকাংখ্যা আমার মাঝে নেই তাই র্নিদ্বিধায় বলবো, অবশ্যই কবিতা আমার মনের খোরাক। একদিন আসরে না এলে, কোন কবিতা পোষ্ট না করলে বা আমার কোন প্রিয় কবির কবিতা পাঠ না করলে কেমন যেনো একটা ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি আমাকে ঘিরে থাকে।
৬. কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার জীবনের সেরা স্মরণীয় ঘটনা কি? আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন কি? কবিতা আপনাকে কি দিয়েছে?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
অবশ্যই।
ঊনিষশ’ নব্বই-এর কথা। আমি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পীকার আলহাজ্ব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাহেবের ব্যাক্তিগত সহকারী হিসেবে চাকুরীরত। তখন আমার কিছু কিছু লেখা দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দেশ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল। আমিও আমার অবস্থান থেকে সেই সব আন্দোলনে শরিক হচ্ছি কবিতার মাধ্যমে। সাপ্তাহিক বিক্রম-পত্রিকায় আমার একটি লেখা পড়ে বস গরম। আমাকে তাঁর রুমে ডেকে নিয়ে প্রচন্ড রেগে বললেন-“তুমি নিজে তো ডুববেই আমাকেও ডোবাবে! যাও তোমার আর এই অফিসে চাকুরী করার দরকার নেই। এক্ষুনি বিদেয় হও!”
আমি মন খারাপ করে তাঁর রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের টেবিলে এলাম। চাকুরী যখন নেই, সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী কালই লালমনিরহাটে চলে যাবো। পরক্ষণে তিনি আবারও আমাকে ডাকলেন এবং নরম স্বরে বললেন-“এই সব হাবিজাবি না লিখে ভালো কিছু লেখো, অন্য কিছু লেখো। কাল আমি অফিসে আসবো না তুমি বাসায় যাবে। এই টাকাটা রাখো”। তিনি আমাকে পাঁচশ টাকা দিলেন, কেনো সেটা আজও জানিনা।
কবিতা আমাকে কখনো নির্মল আনন্দ দেয় কখনো ভীষণ আবেগী করে তোলে।
৭. প্রিয় কবি, আধুনিক কবিতা বলতে আপনি কী বুঝেন? এই আসরে রচিত সব কবিতাই কি আধুনিক কবিতা? আপনি কি বলেন? আধুনিক কবিতার স্বকীয়তা বলতে আপনি কি বোঝেন?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
‘আধুনিক’ শব্দের অবিধানিক অর্থ- বর্তমান, সাম্প্রতিক, হাল, ইদানীং যাই হোক ‘আধুনিক কবিতা’ সম্পর্কে আমার ধারনা একেবারেই অস্পষ্ট। আধুনিক কবিতার মোড়কে এমন কিছু কবিতা মাঝেমধ্যে পড়ি যা আমার সামান্য জ্ঞানে বুঝে উঠতে পারিনা। ব্যর্থতা আমার নিজের তাই আধুনিক কবিতার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইনা।
৮. আপনি এই আসর ছাড়াও কি কোন অন লাইন সাইটে লেখেন? অন্যান্ন সাইটের সাথে এই সাইটের মূল পার্থক্য কি? কেন এই আসর এত বেশি জনপ্রিয়?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
আমি এই আসর ছাড়া শব্দনীড়, ঘুড়ি, বন্ধু ব্লকে মাঝেমধ্যে লেখালেখি করি কিন্তু এই আসরের মতো নিয়মিত নয়।
আমি এই আসরে লিখতে বেশী সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মাননীয় এডমিনসহ আসরের সব কবিকেই আমার খুব আন্তরিক মনে হয়। আর এই কারণেই অন্যান্য সাইটের থেকে এই সাইটটি আমার প্রিয়। হয়তো আমার মতো অনেকেই আছেন তাই এই সাইটটি এতো বেশী জনপ্রিয়।
৯. এই আসরে প্রকাশিত একটি প্রিয় কবিতা বলুন(এখানে প্রকাশ করুন)। কবিতাটির লেখার পটভূমি জানতে চাইবো। একই সঙ্গে আপনার কাছে কবিতাটির ব্যাখ্যা চাই আপনার মতো করে।
***কবি শ.ম.শহীদঃ
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবময় ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। কেউ কেউ তো জানার চেষ্টাও করেন না, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন। বিষয়টা আমি মানতে পারিনা। আমি চাই আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার কথা আমার দেশের প্রতিটি মানুষ ভালোভাবে জানুক। তাতে স্বাধীনতার মূল্যবোধটা বাড়বে এবং তা রক্ষার চেতনা বৃদ্ধি পাবে। গত ২৬ মার্চে লেখা এবং আসরে প্রকাশিত “স্বাধীনতার ইতিকথা” আমার স্বরচিত প্রিয় কবিতার একটি। কবিতাটি তুলে দিলাম-
স্বাধীনতার ইতিকথা
স্বাধীনতা__মুখের কথা, চাইতে পারে সবে! এমনি এমনি স্বাধীনতা কে পেয়েছেন কবে? রক্ত-সাগর পাড়ি দিয়েই স্বাধীন হলাম। তবে- শেখ মজিবর জন্ম যদি না নিতেন এই দেশে; স্বাধীনতার সূর্য বলুন উঠতো কি আর হেসে? বাঙালীরা থেকেই যেতো কাঙালীদের বেশে! তাকাই যদি পিছন ফিরে_সাতচল্লিশ সালে- ভারতবর্ষ দু-ভাগ হলো__ দুর্গতি কপালে- বাঙালীরা হেরে গেলো জিন্নাহ্ সা’বের চালে! জাতি স্বত্তা আলুর ভর্তা__খাবেন মুসলমান! পূর্ব এবং পশ্চিমেতে দু-দিক__পাকিস্তান! এপার ওপার দুই পাড়েতে উর্দূতে গাও গান! মাতৃভাষা বাঙলা যদি উর্দূ কেনো গা’বেন- ভার্সিটিতে তরুণ কিছু এসব নিয়ে ভাবেন! ন্যায্য দাবী রাষ্ট্র-ভাষা বাঙলা শুধু চা’বেন! এটুক চাওয়া বৈরী হাওয়ায়, স্বৈরী নেচে ওঠে কার্ফু দিলেন। ছাত্র সমাজ মানলোনা তা মোটে বাহান্নতে তাইতো পথে__রক্ত পলাশ ফোটে! প্রাণ হারালো রফিক-শফিক পেতে মায়ের ভাষা, কেউ জানেনা__তাঁরাই প্রথম স্বাধীনতার চাষা! সুপ্ত মনে গুপ্ত ভাবে___করলো রোপন আশা! আশায় জ্বলে আন্দোলনের আগুন ধিকি ধিকি সুযোগ পেলে দামাল ছেলে উঠবে জেগে ঠিকই হাত বাড়িয়ে ছোঁবে তখন একচোখাদের টিকি! এক-দুই-তিন কাটছিলো দিন, অশান্ত হয় মন; দেখতে দেখতে পয়ষট্টির___এলো নির্বাচন! স্বাধীনতা___কয় না কথা বুকের মানিক ধন! আর কতো কাল সহ্য করা স্বৈরাচারের শাসন; নৌকা বেয়ে সত্তুর এলে__নিরঙ্কুশ হয় আসন; সব ছাড়ালো একাত্তরে__শেখ মজিবের ভাষণ! ভাষণ শুনে বাঙালীদের__রক্ত ওঠে তেঁতে; এদেশ থেকে বর্গী তাড়াও স্বাধীনতা পেতে; স্বৈরী শাসক উঠলো তখন রক্ত খেলায় মেতে। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ__আঁধার কালো রাতে- মরলো কতো নারী-পুরুষ পাক-সেনাদের হাতে; ঘরের আগুন পরের চালে লাগলো যেনো তাতে! ছাব্বিশ মার্চ মুজিব দিলেন স্বাধীনতার ডাক; ঘুমিয়ে থাকা সূর্য-সেনা জাগরে তোরা জাগ্; এদেশ মোদের এখানে নয় আর কারো সূঁচভাগ!
গদ্যে খুব সহজে ইতিহাস তুলে আনা যায়, পদ্যের অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়না। আর যদি সেটা অন্ত্যমিলের কোন ছকে ফেলে রচনা করার চেষ্টা হয়, তখন বিষয়টা আরো কঠিন হয়ে যায়। এখানে ১৯৪৭ অর্থাৎ দেশ ভাগের সময় থেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ইতিহাসের সেরা ঘটনাগুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছি। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কবিতাটির বাকি অংশের রচনাটা সময়ের অভাবে ঝুলে আছে।
১০. বর্তমানে আমাদের আসরে কিছু কিছু কবিতা দেখা যায়, যেখানে বেশ কঠিক কঠিন শব্দ ব্যবহৃত হয়,যা সাধারণ পাঠকের মাথার উপর দিয়ে যায়। সঠিক ভাবে বুঝতে পারা যায় না। কঠিন শব্দ কী কবিতাকে ভারী করে তোলে? আপনি কি মনে করেন?
***কবি শ.ম.শহীদঃ
কঠিন এবং র্দূবোধ্য শব্দ প্রয়োগ করলে কবিতা ভারী হয় বা কবিতার মান বৃদ্ধি পায় বা কবির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়-এই ধারনা অমূলক। অন্ততঃ আমি তাই মনে করি। আমার ধারনা- সহজ-সরল ও বোধগম্য শব্দ প্রয়োগ করে বিষয়বস্তুর পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনই একজন কবি ও কবিতার মান বৃদ্ধি করতে পারে।
বন্ধুরা, আজ এই পর্যন্ত। এবার আপনারা আপনার মূল্যবান প্রশ্নটি করুন আপনার প্রিয় কবিকে। আমাদের কবি শ.ম.শহীদ তার যথাযথ উত্তর দেবেন এবং আমাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন। আর হ্যা এই আলাপন কেমন লাগল বলতে ভুলিবেন না কিন্তু...