খগেন নামে এক বুড়ো ছিল
আমাদেরই গাঁয়ে
সারা বছর জামা নেই
জুতো থাকে না পায়ে।
গ্রামের মধ্যে ভাঙাচোরা
একটি বিদ্যালয় আছে
খগেন বাবুর জীর্ণ ঘর
স্কুলেরই কাছে।
এক টুকরো মেঠো থান
কোমরে থাকে সদা
পাড়ার ছেলে পেছনে লাগে
খেয়ে জল আদা।
খগেন খুঁড়ো রাগে না
বলে, ‘ওরে ভাই,
বুড়ো বয়সে খাব কি
তাই টাকা জমায়’।
ব্যাঙ্কে তার অনেক টাকা
পোস্ট অফিসেও আছে
টাকা পেলেই রেখে আসে
কিছুই রাখেনা কাছে।
বড় যারা সবাই তাকে
ডাকেন খগেন খুঁড়ো
ছেলে ছোকরা বাচ্চা যারা
বলে কিপটে বুড়ো।
খগেন বাবু নাদুস-নুদুস
স্বাস্থ্য তার ভাল
ছয় ফুট লম্বা তিনি
গা-এর রং কালো।
জমিজমা ভালোই আছে
করেন চাষ আবাদ
কোন সখ নেই তার
টাকা জমানোই সাধ।
সারাটা দিন কাটে মাঠে
ফেরে সন্ধ্যে হলে
অসুখ বিশুখ ধারে ঘেষেনা
শীত বর্ষা জলে।
এমন করেই চলতো দিন
খুঁড়ো টাকা জমান
হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ
যত তিনি কামান।
অশিক্ষিত মুর্খ খুঁড়ো
মৃদুভাষী ছিলেন,
হটাৎ করে একদিন
স্বর্গে চলে গেলেন।
অসুখ নেই বিশুখ নেই
নেই কোন ভোগান্তি
টাকার মায়া ছেড়ে শেষে
পেলেন পরম শান্তি।
খগেন খুড়োর কেউ ছিলনা
কুঁড়ে ঘর ছাড়া
অন্তিম কার্যে ভীড় ভাট্টা
ভেঙ্গে পড়লো পাড়া।
গ্রামের লোকে চাঁদা তুলে
করলেন শেষ কাজ,
খুঁড়োর কেউ নেই
তালা পড়লো আজ।
কদিন পরে সবাই মিলে
গেলেন খুড়োর ঘরে
খুঁড়োর ভিটেই ক্লাব হবে
এমনই মনে করে।
কুঁড়ে ঘর ভেঙ্গে সবার
চক্ষু চড়ক গাছ
টিনের বাক্স থেকে যেন
বেড়িয়ে পড়লো বাজ।
কিপটে খগেন সারা জীবন
যতই জমান টাকা
টিনের বাক্সে কিছুই নেই
ঘরটি তার ফাঁকা।
একটি কাগজ পড়েছিল
বাক্সের এক কোণায়,
উইল করে রেখে গেছেন
লাল কাগজের ঠোঙায়।
কাগজ পড়ে সবার বুক
গর্বে উঠলো ফুলে
সব সম্পত্তি উইলে তিনি
স্কুলকে দিয়েছেন তুলে।
রচনাকালঃ ০১/০২/২০০৭