ধোঁয়াশা মেঘ,
লাঞ্ছিত সন্ধ্যায় শূন্যতার জ্যোৎস্নায় এখনো তোমার ছায়ায় নক্ষত্র ভ্রমণ করি। রোজ কতো শত কবিতার জন্ম হয় তোমার অবহেলার প্রতিচ্ছবির ছায়ায়। নীল চুড়ি হাতে কপালে লাল টিপে তোমার প্রিয় রঙের শাড়িতে জড়িয়ে প্রতি জ্যোৎস্নায় এখনো অপেক্ষায় থাকি। তুমি আসবে আলতো ছোঁয়ায়, ফিসফিস বলে যাবে "ভালোবাসি"
বেদনা স্মৃতি বুকে কতোটা পথ হেঁটে আসা যায়! কখনো শুনতে পাওনা এ বুকের আর্তনাদের চাপা চিৎকারের প্রকাশ্য শব্দ। দহনের তেজ কুঁড়ে কুঁড়ে নিঃস্ব করে আমাদের ক্ষণ গুলোকে।
আকাশকে সঙ্গী করে ভোরের আলোয় কুয়াশার চাঁদর হয়ে মকমলি ভালোবাসার জড়োয়া দুঃখ হওয়ার এতো কি তাড়া ছিলো তোমার! সোহাগের আয়না ধোঁয়ার আবরণে আচ্ছাদিত।
মনে পড়ে, উঠোন জুড়ে শিউলি ফুলের ছড়াছড়ি, থমকে থেমে তোমার হাতে ফুলের মালা জড়িয়ে গলায় বলে ফেলা- "তোমার জন্য" । নিভে আসা নয়ন জোড়া লাজুক থেকে আরো লাজুক, পালিয়ে যাওয়ার বাহানায় বাহুডোরে চিবুক স্পর্শ।
কতোটা কাছের পুরুষ, অন্তরালেই বসত গড়ে হৃদয়পুরে। বলার ছলে হয়নি বলা-" এই আমি যে তোমাতে ডুবে"। পেরিয়ে সকাল শঙ্খ বাজে, শাঁখার মাঝে কষ্ট দোলে, সিঁদুর কেমন সত্য এখন, এ চিহ্ন তো তোমার নয়!
সেদিন খুব কেঁদে ছিলাম, অনেক করে বুঝিয়ে ছিলাম, ফিরবো ঘরে এই ভেবে তো পা বাড়াইনি, এসে ছিলাম তোমার হতে গভীর রাতে সাহস বুকে, সাহসটুকু মিথ্যে হলো তোমার ভয়ই সত্য হলো।
ফিরিয়ে দিলে মধ্যরাতে, হারিয়ে গেলে অমাবস্যায় এক টুকরো মেঘ হয়ে। ভোরের আলো ফুটলো যখন ঘরের দুয়ার বন্ধ তখন। পাশের বাড়ির নিম গাছেতে অচেনা এক পাখির ক্রন্দন।
তোমাকে লিখতে গিয়ে অজান্তেই দুঃখ ছুঁয়ে যাই। জানা হয়না তোমার কুশল। শুনেছি তোমার ওখানে কখনো রাত হয়না, কোনো জোৎস্নার মিষ্টি আলো চুপিসারে আলোকিত করেনা তোমার আকাশ, কুয়াশার মিষ্টি ভোরের বুকে হয়না খালি পায়ে হেঁটে চলা। খুব স্বার্থপর তুমি!! একাই থাকছো নিজের সঙ্গী হয়ে।
আচ্ছা, তুমি কি এখনো ক্লান্তি সরাতে আমার শাড়ির আঁচল খোঁজো, এখনো দীঘির পাড়ে অপেক্ষায় কবিতা লিখো, এখনো বুক পকেটে একটা প্রেমের চিঠি ভাঁজের পরে যত্ন করে আগলে রাখো!!
একা একা হেলাল হাফিজ বা রুদ্র পড়ো? অভিমানের খেয়ায় ভাসবে বলেই বুঝি একলাই ছোট্ট ভেলায় ভেসে গেলে, কতো খুঁজেছি, কতো রাত অপেক্ষায় থেকেছি- তোমার ফেরার আশায়, যদি ফিরে এসে দেখো আমি নেই, এই ভেবে দু'চোখের পাতা এক করিনি।
হয়নি তোমার ফেরা হয়নি, তোমার যে ফেরা হয় না। তুমি তো এখন সপ্তর্ষির উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কতো বছর পর আজ লিখছি তোমায়, এ পত্র কোন ঠিকানায় পাঠাবো, ঠিকানা দেবে আমায়! অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি হৃদয় নামক ডায়রিতে। শুধু একটা ঠিকানা চাই, দেবে আমায়- তোমার ঐ আকাশের ঠিকানা!!
খুব ভালোবাসে লিখবো, চোখের জলের কালি দিয়ে শব্দ সাজাবো, হৃদয় হবে আস্ত দলিল, থাকবে না, কোন না পাওয়ার কথা, সবটা জুড়ে প্রিয়তমার আঁকা শব্দের বৃষ্টি হবে-কথা দিলাম।
মেঘ, তুমি শুনতে পারছো, উত্তর দাও শুনতে পারছো তো, তোমার তো খুব সহজে শুনতে পাবার কথা, ইচ্ছে মতো যেখানে সেখানে উড়তে পারো তুমি। শুধু পারো না আমার চোখের জল হয়ে আমার সাথে মিশে যেতে, নিঃশ্বাস হয়ে আবার জীবন্ত হতে, অস্তিত্ব হয়ে আমার হতে!!!
আকাশকে ঠিকানা করে পত্রখানি পাঠিয়ে দিলাম বুকের খামে। উত্তরের অপেক্ষায় আবার বেঁচে থাকা, তোমার না ফেরার পথে আমার ফেরার পথটা মিলিয়ে দেয়া.....
ইতি
তুমিহীন বেঁচে থাকা
তোমার "শূন্যতা"