অসাংসদীয় বক্তব্য
তানভীর হোসেন
“আসুন সকলে গোল হয়ে বসি
যারা একটু দূরে সরে আছেন
তারা তাকান আমার দিকে।
হ্যাঁ, এবার মুখ তুলে তাকান।
কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে বসুন
নারী-পুরুষ সকলে।
যে হিন্দু-মুসলিম; যে ধর্মের যারা আছেনঃ
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই বসুন,
এমনভাবে বসুন যাতে সবাই সবার মুখ দেখতে পারি।”
পরস্পর মুখ চাউনিতে উপস্থিত সকলে
নিমিষেই পরিচিত হল। কে নেই সভাতে-
পাড়ার অস্রধারী থেকে সিদেঁল চোর, শীর্ষ দুর্নীতিবাজ,
জোড়াখুনের আসামী, জনসেবক, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী।
ধর্ষক-ধর্ষীতা, আমার বাসার কাজের মেয়ে-
পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে বিখ্যাত-কুখ্যাত সবাই।
প্রথমেই সভসদগণ একটি টেবিলের প্রয়োজনীয়তা
উপলব্ধি করলেন। আশু সমস্যার সমাধানে যখন
চিন্তাবিধরা মগ্ন…………
তখন আমার সদ্য বিবাহিতা ছোট বোন বলল-
“আসুন আমরা নিজেরাই একটা টেবিল গড়ে তুলি।”
এই বলে সে শরীরের সব গয়না খুলে মাঝে রাখল।
ছোট্ট ছেলেগুলো তা দেখাদেখি তাদের প্রিয় খেলনাগুলো
রেখে দিল।এরপর আর সময় লাগলো না।
মুর্হূতেই অনেক কিছু জমা হল।
কালোটাকা, বই-খাতা, রং-পেন্সিল, তুলি-ক্লিপ, নথিপত্র,
অশ্লীল বাক্য, একটু হাসি, চোরাই মাল, ভিখারির থালা
শ্রমিকের সারাদিনের রোজগার, কয়েকটি লাল গোলাপ
যার যা ছিল সবই জমা পড়লো একে একে।
চারপাশে শক্ত করে পুঁতে দেয়া হল রাইফেলগুলো।
অবশেষে ধর্ষীতা বোন তার শাড়িঁর আচঁল বিছিয়ে
দিয়ে বললঃ “আসুন, শুরু করুন সভা।”
উপস্থিত সভাসদদের অন্তরাত্তা কেঁপে উঠল
যেন এই মাএ ভূ-কম্পে কম্পিত হল ধরনী।
ধর্ষীতা বোন, বিধবা মা, নিষ্পাপ শিশুর
হাতের উপর হাত পড়ল অগনিত-অসংখ্য
অস্ফুটেই সকলে প্রতিজ্ঞা করল-
“আর নয়।”
দু’টো শব্দের কি আশ্চর্য মিলন
কত সরলঃ অথচ কতটা মর্মভেদী।
০৮-০৩-২০১০।