অনেকদিন আগে বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মানুষ আমায় বলেছিলেন, 'একজন লেখক কখন লেখক হয়ে ওঠে জানো? যখন সে প্রকাশক পেতে শুরু করে....!'
আমি তখন সবেমাত্র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম বর্ষের ছাত্র। উনার কথায় এতটা ইম্প্রেসড হলাম যে, সব বাদ দিয়ে আমি
পান্ডুলিপি হাতে প্রকাশক এবং বিভিন্ন পত্রিকা অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলাম!
উদ্দেশ্য একটাই, যে করেই হোক আমার লেখা প্রকাশ করতেই হবে! কিন্তু শত চেষ্টার পরও ফলাফল শূণ্য। আমি লেখা প্রকাশ করার চক্করে এত বেশিবার জীবনে রিজেক্টেড এবং রিফিউসড হয়েছি যে, সে কথা বললে হয়তো জর্জ বার্ণাড শ সাহেবের জীবনীর মতোন ছোটখাট একটা উপন্যাস হয়ে যাবে!
তখন কেবল একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকতোনা, সেলফ কনফিডেন্স থেকে নিজের এত ভালো লেখাটা জমা দিলাম... অথচ অনেকের ছাঁইপাশ প্রকাশিত হলেও, আমার লেখা কেন প্রকাশিত হচ্ছেনা? কেন বার বার আমাকে প্রত্যাখ্যাত হতে হচ্ছে?
বই প্রকাশের ভূত চেপে বসলো আমার মাথায়! সবক'টা প্রকাশনী ঘুরলাম, অথচ কেউ আমার বইটা প্রকাশ করবেনা! তাই ভার্সিটির একটা সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে সেই টাকায় নিজেই একটা বই প্রকাশ করে ফেললাম একুশে বইমেলায়। কেমন আত্ম-ঘাতী পাগল ছিলাম আমি! সেই ২০১০ সালের কথা! বইটি প্রকাশিত হল প্রতীক পাবলিকেশন্স ও স্বরবৃত্ত প্রকাশনীর যৌথ উদ্যোগে। স্ব-প্রণোদিত হয়ে বইটির মুখবন্ধ লিখে দিলেন প্রথিতযশা কবি আল মাহমুদ। অবশেষে বেরুলো আমার কবিতার বই, আমার জীবনের প্রথম প্রকাশ! বইটার নাম ছিল-’প্রেম ও নারী’।
ভাবতে অবাক লাগে, এটা দু হাজার সতেরো সাল। সেই ২০১০ থেকে আজ সুদীর্ঘ ছয় বছর পরও আমি কোন প্রকাশক পাচ্ছিনা! তাই, এবারের বইমেলাতেও হয়তো মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াবো। কেন জানি ওখানে গেলে, এক অযাচিত কষ্ট লাগে! কী আর করা______
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে প্রখ্যাত আরিফ আর হোসেইন কিংবা প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের মতো এদেশের অনেক বড় বড় সেলিব্রেটি আছেন। তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকা স্বত্তেও কেন জানি লেখা প্রকাশের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হচ্ছেনা। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাযহার সাহেবকে নক করে করে আমি ক্লান্ত। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, উনার মত হস্তীদের কোন রিপ্লাই আশা করা যায়না। আফটার অল, উনি জানেন আমার মত হাজারো কাক উনার বিন্নি ধানের খই খাবার জন্য প্রতিনিয়ত ধর্ণা দিচ্ছেন!
তাই বলে, আমি কিন্তু মোটেও ফ্রাস্টেটেড নই। আমি প্রচন্ড আশাবাদী একটা ছেলে! কারন আমি জানি, আমি ভালো লেখার চেষ্টা করি। আমি জানি, আমি জন্ম নিয়েছি শুধুমাত্র লেখক হবার জন্য। এটা আমার আত্ম অহমিকা নয়, আমার আত্মবিশ্বাস!
যারা আমার লেখা পড়েছেন,তারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আমি আজ পর্যন্ত আমার কোন ভালো লেখা নেট বেইজড সাইটগুলো কিংবা ব্লগে দেইনি। সেখানে শুধু আমি আমার মনের কথাগুলো সবার সাথে শেয়ার করেছি মাত্র। কারন, এতদিন আমি ভাবতাম, ইন্টারনেট সাইটগুলো মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্র মাত্র, সাহিত্যচর্চার যথার্থ জায়গা নয়!
কিন্তু, আজ "বাংলা কবিতা" ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত হয়ে আমার ভ্রান্তি ভাঙলো। এখানে আমার চারপাশে আকাশ গঙ্গার মতো এই ওয়েবসাইটের সর্বত্র জুড়ে এত উজ্জ্বল প্রতিভাবান তারকারা জ্বলজ্বল করছে যে, আমি সত্যি মন্ত্র-মুগ্ধ।
এতদিন কেবল "তপুর কবিতা" নামের কবিতার পেইজটা ছিল আমার মনের আঙিনার মতো, যখন যা ইচ্ছে তাই লিখেছি। আজ থেকে "বাংলা কবিতা" কে অন্তরের অন্তঃস্থলে আপন করে নিলাম। আমি আমার সর্বোত্তম কিছু দেবার চেষ্টা করবো নিজেকে প্রকাশের এই বৈশ্বিক প্লাটফর্মে।
অধিকাংশ লেখকদের কপালে লিখে নন্দিত হওয়ার চাইতে নিন্দা বেশি জোটে! আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বলতে দ্বিধা নেই, পাহলাটে ভ্যাগাবন্ড লেখক হিসেবে আমার শহরে আমার যথেষ্ঠ পরিচতি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে গেছে! লেখালেখি করে আজ অবধি বলার মতোন তেমন কোন উল্লেখ যোগ্য পুরস্কার কপালে না জুটলেও যখন অনেক মানুষের ভালোবাসা এবং একই সাথে আবেগ ভরা মেসেজ পাই, তখন অসম্ভব ভালো লাগে_____
লগ ইন করলেই যখন কেউ চ্যাট বক্সে এসে অবিশ্বাস জড়ানো অদ্ভুত মায়ায় আমাকে প্রশ্ন করে,
"তপু ভাই, লেখাটা কী সত্য আপনি নিজে লেখসেন? নাকি কপি পেস্ট মারসেন ভায়া? লাইক এত কম পরসে ক্যান!"
তখন আমার বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে। তখন মনে হয়, লেখক হবার জন্য প্রকাশক লাগেনা, এরকম কিউট ছেলে-মেয়েদের এইটুকু ভালোবাসাই যথেষ্ট!
কারন আমার হুমায়ুন আহমেদের মত অতবড় উজ্জ্বল তারকা হবার কোন ইচ্ছা নেই______
আমি বাংলাদেশের লেখালেখির আকাশে 'তানভীর আহমেদ তপু' নামের ছোট্ট একটি ধূমকেতু হতে চাই_______
যে হঠাৎ এসে হঠাৎ করে হারিয়ে যাবে! যাকে গুটিকয়েক মানুষ মনে রাখবে ভালবাসা ভরা এই প্রত্যাশা নিয়ে,
"আবার হয়তো কোনদিন দেখা মিলবে পাগলটার______!"
পরিশেষে, আশা রাখি, এই লেখায় অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি অথবা আবেগের অতিশায়নের ব্যক্তিগত অপ্রাসঙ্গিকতা সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন___
নিরন্তর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভকামনা রইলো "বাংলা কবিতা" ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত সকল সম্মানিত এডমিন, কবি-সাহিত্যিক, পাঠক-পাঠিকা এবং শ্রোতা বৃন্দের প্রতি।
ভালো থাকবেন সবাই____