হাজার বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া
দ্রৌপদী তোকে , খুঁজে পেয়েছি ৷
এক অচেনা গ্রাম্য কারাগারের দেওয়ালে
ঘুঁটে দিতে দেখেছি তোকে
সেদিন প্রথম বিকাল রোদে তোর
অকালবার্ধক্যকে হাসতে দেখেছিলাম
তোর রূপের দিকে তাকিয়ে ৷৷
পাটরাণী থেকে ঘুটেকুড়ানী হয়ে যাওয়ার
ইতিহাসে আজ নিবিড় ছায়া পড়েছে
তাই প্রথমে চিনতে পারিনি রে
তোর ইচ্ছে-স্বপ্ন গুলো
চৈত্রের জ্বলন্ত রাত্রে পুড়ে আর
পৌষের কুয়াশায় ভিজে শেষ হতে
দেখেছিলাম আমি॥
নাহয় সেদিন তোর মাতৃত্বকে
বিষাদ ঘন্টা শুনিয়েছিলো অশ্বথ্থামা
নাহয় তোর স্নেহকবচ পারেনি আগলাতে
পিতার কর্তব্যের ভোগান্তি মিটিয়েছিলো
মৃত সৈনিকের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া শৈশব॥
আজও তোর ছেলেরা শৈশব পেরুলো কী?
নাকী এখনো অশ্বথ্থামারা
তাদের জীবনপথের দ্বাররক্ষী ৷
পিঠে ব্যাগের বদলে-মুখে কাঁচাসোনা
জলের বোতল ছেড়ে-পেটে পিস্তল
রেখে সীমান্ত পার হয় তারা ॥
আচ্ছা,তোর সিঁথি ঝাপসা কেন ?
মলিনবদনেও ঝলসে ওঠা সেই ,
স্ত্রীআসুলভতা আজ বিষন্ন কেন ?
তবে কী,অপদার্থ পান্ডব গেছে
অজ্ঞাতবাসে?
আর তোর পাঁচ করে গেছে পঞ্চাশ
নাকী , বৃদ্ধ দ্রৌপদীর শেষ হওয়া দেখে
দিয়ে গেছে কোনো অপেক্ষার কবর !!
আচ্ছা তুই কী আমার সেই দ্রৌপদী ??
তবে তুই মুখ খোল -
না কী তুই,সকালের ক্যানিং লোকালে
ঝুলতে ঝুলতে আসা কোনো নয়নচাঁপা
যাকে দ্রৌপদী ভেবে ভুল করছি আমি ৷
না কী তুই,সংসার চালাতে গিয়ে
নিজের সবটুকু শেষ করে দেওয়া
কোনো চামেলী বা ঝুমা দি ॥
জানি কথা ফুটবে না আর মুখে
নিজের চোখ নিজেকে শেষ হতে
দেখতে দেখতে অভ্যস্ত তুই আজ ৷
রাত নামে আজ তড়িঘড়ি তোর বুকে
ঝাঁপপড়ে সেই সাঁঝবিকালে তোর পাড়ায়
প্রতিটা সকালে আজ তুই উপোসী মা
সবকটা দুপুরে তুই হাড় ভাঙিস
সন্ধেগুলোতে বিধ্যস্ত হয়ে জল খুঁজিস ৷
আচ্ছা এতকিছুর পরেও কী করে
স্বপ্ন দেখিস ?
আর নিজেকে অপেক্ষার দাসী রেখে
চোখ বুজিস চটজলদি—
কাল আবার পাখির কূজনে ট্রেন ধরা ॥