একদা পথ হাঁটতাম আমি, কোনো এক পাড়াগাঁয়ে,
সবুজ বাংলার ধান ক্ষেতের আঁকাবাঁকা আ’ল বেয়ে;
অন্য শিশুরাও ছুটতো একই পথে এক ঘরের পানে,
স্রোতস্বিনী খোয়াই যেথা বহে আজোও কলতানে।
প্যাঁক-কাদা-জল মাড়াতে আমার লাগতো যে ভয়,
সহযাত্রীরা কাঁধে করে করতো ‘ভাঙ্গা’ পার নির্ভয়।
পাঁচ বছর পর হাঁটি আমি, বড়ো সড়ক ধরে,
শহরের ঘ্রাণ আসে যেথা মোটর গাড়িতে করে,
বগলে বইয়ের গাদা, মাথার 'পরে ছাতা,
ছুটতাম চেপে কখনো সাইকেলের হাতা;
ঝড়-তুফান আর বাদলের পিচ্ছিল পথে,
আছাড় খেয়ে, ভিজিয়ে বই, ফিরতাম বাড়িতে।
এরই পাঁচ-ছ’ বছর পর হাঁটি আমি, জেলা শহর পানে,
বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে উচ্ছ্বল তারুণ্যের কলগানে;
হয় পরিচয় মিছিল-মিটিং আর নানা মত ও পথের সাথে,
ভীতু স্বভাব আমার পালায় যেন অচেনা কোন জগতে।
দু’বছর পর হাঁটি আমি, সুদীর্ঘ পথ ধরে,
কখনো বাসে, ট্রেনে কিংবা রিক্সায় করে,
ক্রমেই হয়ে উঠি আমি রাজধানীর কীট,
যাত্রা শুরু হয়, অভিমুখে সুউচ্চ বিদ্যাপীঠ;
ভাষার নূতন মাত্রিকতায় হই আমি যুক্ত,
সর্বোচ্চ গণ্ডি পেরিয়ে সে পথচলাও হয় সমাপ্ত।
এরপর নূতন করে পথ হাঁটি তারুণ্যের স্মৃতিমাঠে,
যেখানে বসতাম একদিন আমি মঞ্চের বিপরীতে;
সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে উচ্চারি আমি কথার মালা,
সারি সারি তারুণ্য পাতে যেথা বরণ ডালা।
রচিত হয় গুরু-শিষ্যে, গুরুর-গুরুতে সুমিষ্ট বন্ধন,
পুরনো আর নূতন বন্ধুদের মাঝে মধুর সম্মিলন।
তারপর কোন সে ঘুর্ণিপাঁকে পড়ে হই আমি দেশান্তর,
তাই পথ হাঁটি আমি অচেনা পাশ্চাত্যের দ্বিতীয় নগর,
নানা জাতের, নানা বর্ণের মানুষের একমাত্র ভাষায়,
রক্তচক্ষুতে নিত্যদিন কেবল আমায় শাসায়;
ভুলে যেতে বলে আপন বচন, আপন গীত,
পঁয়ত্রিশ বছরের স্মৃতিমগ্ন গৌরবময় অতীত,
যা করেছিলো অন্তর আমার তিলে তিলে খাসা,
যা দিয়েছিলো প্রিয়জনের অমলিন ভালবাসা।
সব পেরিয়ে এখন আমি -
নিয়তির খেয়ালে পথ হাঁটি প্রতিদিন প্রজন্মের হাত চেপে,
সেই গন্তব্যে, হাঁটতাম যেথা একদিন ক্ষেতের আ’ল মেপে।
তবে ভিন দেশে, ভিন বেশে, স্বপ্নীল প্রত্যাশায় বেঁধে বুক;
আমারই প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দর্শনে যেথা উন্মুখ।
[১২/১২/২০১৩; ভোররাত ২:০০ টা]