মৃত্যুর স্মৃতি
(একজন আব্দুল গোফার স্মরণে)

পাশের বাড়ীর দু’উঠান জুড়ে হৈ-হুল্লোর রব,
খেলায় মগ্ন কয়েক বাড়ীর ছেলেপুলেরা সব।
কখনও লুকোচুরি, চোর-পুলিশ, কখনও বল,
চিৎকার, চেঁচামেচিতে ব্যস্ত রয়েছি যে সকল।
সহসা শুনি পূবের ঘরে গোঙানির শব্দ কয়েক,
খেলা ফেলে দৌড়ে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ শুয়ে এক।
এ বাড়ীতে আছেন যদিও বৃদ্ধের আত্মীয়স্বজন,
অসুস্থ লোকটির খবর রাখেননি কেউ একজন।
জিজ্ঞাসিলাম তারে, ‘কী হয়েছে ভাই তোমার’?
অস্ফুট স্বরে বললেন শুধু ‘চাচী, চাচী’ দু’বার।
তৎক্ষণাৎ দৌড়ে যাই আমি আমাদের বাড়ী,
পৌঁছাতে খবরটা মায়েরে আমার তাড়াতাড়ি।
শেষ বিকেলে মা খাচ্ছিলেন দুপুরের খাবার,
খাবার ফেলেই দৌড়ে এলেন দেখতে এবার।

মা জিজ্ঞাসিলেন, ‘কী হয়েছে বাবা তোমার শুনি’?
বহু কষ্টে বললেন কেবল, ‘চাচী - পানি, পানি’।
পানি আনতে মা পাঠালেন তখন আমায় ওঘরে,
পড়তে লাগলেন কলেমা-কালাম বসে শিয়রে।
বৃদ্ধ বললেন মা'রে, ‘মাফ কইরইন চাচী মাফ’,
মাও বললেন একই কথা তাঁরে করে অনুতাপ!
মা দিচ্ছেন একটু একটু করে পানি তাঁর মুখে,
শ্বাস-প্রশ্বাস তাঁর ক্রমেই যে ভারী হতে থাকে।
চোখের পাতা আস্তে আস্তে বুঁজে আসল যখন,
মা বুঝলেন, অবসান হল যে তাঁর ইহজীবন।
ভাইয়ের পরিবার দেখল না তাঁর সে মরণ-ক্ষণ,
আমি আর আম্মা, রইলাম সাক্ষী, শুধুই দু’জন।

এ ছিল আমার জীবনের দ্বিতীয় মৃত্যুর স্মৃতি,
মাঝে-মধ্যে জাগে মনে সেই কষ্টের অনুভূতি।

(১১/০৩/২০২৫)