আমি সমুদ্র দেখেছি
দেখেছি তার সীমাহীন প্রশস্ততা
দেখেছি আনন্দ মুখরিত জনতার কল-কল্লোল।
একটি বিকেলকে জীবন-স্মৃতি করার তরে
জনতার ভীড় দেখেছি সূর্যাস্ত দর্শনে,
সমুদ্রের মত প্রশস্তমনা হওয়ার শপথ নিতে
দেখেছি প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলে।
সৈকতের মুক্ত হাওয়ায় এলোকেশী প্রেয়সীকে দেখেছি
প্রেমাস্পদের হাত ধরে বেড়াতে।
নবযুবার হাঁটুজল অবগাহন দেখেছি
সমুদ্রের নোনা জলে।
ছোট্ট শিশুকে বলতে শুনেছি
“মা.! এ জলরাশির কি শেষ নেই!”
“না.! এর বুকখানি প্রশস্ত-দিগন্ত বিস্তৃত”!
শামুক-ঝিনুকের দোকানে ভিড় দেখেছি
প্রেমিক-প্রেমিকার উপহার কিনতে।
পতেঙ্গা ও হালি শহরে দেখেছি
জন-যান কোলাহল
মনে হলো সমুদ্র এক বিশ্বপ্রেমিকা
আর প্রেমিক-প্রবর মানুষ এসেছে মহামিলনে।
উদ্বেলিত জনতা মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করছে
তার উত্থাল, উদ্দাম নর্তন-কুর্দন;
অথচ জানা ছিল না- এ বড় ভয়াবহ, বড় নিষ্ঠুর!
একদিন ২৯ শে এপ্রিল রাতে
সে ফুলে-ফেঁপে হবে একাকার
লণ্ড-ভণ্ড করে দেবে নাগরিক জীবন
ছিনিয়ে নেবে অজস্র প্রাণ
বিপন্ন আর নিরন্ন করবে হাজারও মানুষ
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হবে
স্বজনহারার আর্ত-চিৎকারে
ধ্বংস করে দেবে গোটা জনপদ
বিবস্ত্র সীমাহীন লাশ সৎকারের অভাবে
দুর্গন্ধ ছড়াবে -
তাহলে কি এভাবেই ঘটবে সমুদ্রের প্রেমলীলা!
যে লীলায় আত্মাহুতি দেবে দেদার প্রাণ!
না..! প্রশস্ত সমুদ্র কেনো দেবে এ সংকীর্ণতার পরিচয়,
কেনো নিভিয়ে দেবে সে অজস্র জীবন প্রদীপ!
[হিতাশী, ঢাকা: ১লা মে ১৯৯১]