কতোদিন হয়
শুনিনি ভয়ার্ত হৃদয়ে কাল-বোশেখীর বজ্র নিনাদ
আর বিদ্যুতের ঝলকানি।
কতোদিন হয়
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপে গাছতলায় খাইনি গামছার বাতাস।
কতোদিন হয়
উপভোগ করিনি খোয়াই পাড়ের দখিনা বাতাস।
কতোদিন হয়
শুনিনি টিনের চালে আম পড়ার টাস্ টুস
বৃষ্টি কিংবা তুফানে হয়নি আম কুড়ানো।
কতোদিন হয়
গাছ থেকে পেড়ে খাইনি
আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল।
কতোদিন হয়
শুনিনি বর্ষার ভরা যৌবনে
খোয়াইয়ের শা-শা মার-মার সুর
কিংবা পাড়-ভাঙ্গার আওয়াজ
টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম
পুকুরের জলে টাপুর টুপুর
জলাধারে ঘাউরা ব্যাঙের
ঘ্যাগর, ঘ্যাগর!
কতোদিন হয়
দেখিনি বর্ষার পানিতে ‘উজাই ধরা’
কিংবা শীতের ‘পলো বাওয়া’।
কতোদিন হয়
পাইনি কদমফুলের মনভুলানো ঘ্রাণ।
কতোদিন হয়
হয়ে ওঠেনি শরতের ভোরে শিউলি কুড়ানো।
কতোদিন হয়
খাইনি তালের ডাব কিংবা তালের পিঠা।
কতোদিন হয়
ভাদ্রের হঠাৎ বৃষ্টিতে বানাইনি কলাপাতা ছিঁড়ে ছাতা।
কতোদিন হয়
দেখিনি ধান খেত, আখ খেত, ধান কিংবা আখ মাড়ানো।
কতোদিন হয়
পাইনি নূতন ধানের মৌঁ মৌঁ ঘ্রাণের আস্বাদ
উপভোগ করিনি নবান্নের উৎসব
গ্রাম্যবধুর ঢেঁকিতে ধান ভানা
কিংবা গাইল-ছিয়া’য় চিড়া কুটা।
কতোদিন হয়
খেলিনি নাড়ার খেতে ফুটবল কিংবা ব্যাটবল।
কতোদিন হয়
পোহাইনি শীতের ভোরে নাড়ার আগুণ
কুয়াশা ভেদ করা মিটেল রোদ।
কতোদিন হয়
খাইনি শীতের ভোরে খেজুরের রস
মায়ের হাতে বানানো খেজুরের গুড়
পাটিসাপটা, ভাঁপা পিঠা কিংবা চিতই পিঠা
কতোদিন হয়
দেখিনি চিপচিপে খোয়াইয়ের প্রাণহীন পথচলা
কিংবা খোয়াইয়ের পানিতে কাটিনি সাঁতার।
কতোদিন হয়
গোসল করিনি পুকুর কিংবা গাঙে গা ডুবিয়ে
ইঞ্চির পরতে শেওলা তাই লেগে আছে গায়ে।
কতোদিন হয়
শুনিনি মোরগের ঘুম ভাঙানী ক-ক-ক্ কক্
কিংবা গভীর রাতে শিয়ালের হুক্-কা-হুয়া।
কতোদিন হয়
শুঁকিনি রাত-দুপুরে ফোটা ফুলের ঘ্রাণ
দেখিনি ঝিঁ ঝিঁ পোকার মিটি-মিটি আলো।
কতোদিন হয়
দেখিনি ভারীর বোঝা কাঁধে বাজারে যাওয়া।
কতোদিন হয়
শুনিনি রিক্সার ক্রিং ক্রিং বেল।
কতোদিন হয়
বসিনি আড্ডায় কিংবা বের হইনি প্রাতঃভ্রমণে।
কতোদিন হয়
শুনিনি মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসা
‘আল্লাহু আকবার' আওয়াজ
কিংবা অযু করিনি
টিউবওয়েলের নাতি-উষ্ণ জলে।
কতোদিন হয়
মসজিদের কোনায় দাঁড়িয়ে ফুকিনি আযান
ফজরে ডাকিনি ‘ঘুম হতে নামাজ উত্তম’।
কতোদিন হয়
জিয়ারত করিনি মা-বাবা আর খেশ-করীবের কবর।
কতোদিন হয়
শুনিনি শান্তু, প্রীতম, অনীকের ‘কুটি চাচা’ ডাক
কিংবা ভাবীদের 'কুটিভাই' হাঁক
কতোদিন হয়
দেখিনি স্বজনদের প্রিয়মুখ।
কতোদিন হয়
কেউ ডাকেনি ‘ইকবাল স্যার’ কিংবা ‘ইকবাল সাব’।
কতোদিন হয়
কেউ আসেনি নিতে আমার স্বাক্ষর আর সীলমোহর।
কতোদিন হয়
রাখিনি পা চাঁনভাঙ্গা-চুনারুঘাট-হবিগঞ্জের মাটিতে।
কতোদিন হয়
ভুলে আছি তোমায় আমার সোনার স্বদেশ।
সময়ের অংকে মাত্র সাড়ে চার বছর হলেও
মনের অংকে সাড়ে চল্লিশ বছরতো হবেই!
বোধ করি - এতদিনে বুড়িয়ে গেছি
প্রবাস নামক জেলে আবদ্ধ হয়ে বন্দিত্বের শিকলে;
বিধিবিরূদ্ধ পথে পা বাড়াইনি বলে, বিত্তহীন কোনঠাসা ভবে।
[২৫ জুলাই ২০০৫; সৈয়দ প্লেইস, বার্মিংহাম, ইংল্যাণ্ড]