চোখ বুজলেই দেখি আমার বৃন্দাবন
সাধের বৃন্দাবন, স্মৃতির বৃন্দাবন;
যে তাড়া করে ফিরিয়ে নেয় বার বার
তার স্বাপ্নিক পাদপীঠে আমায়।
শিক্ষার্থীর কল-কাকলীতে, দর্শনের পাঠদানে
১, ৬, কিংবা ১৬ নং কক্ষ-ভর্তি উচ্ছল নীরবতায়।
বিভাগীয় দপ্তরের কর্মব্যস্ততা
কিংবা অধ্যাপক ক্লাবের কর্মচঞ্চলতায়।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাসম প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের অনুগমন
স্বকক্ষে মিনি পাঠদান সভায়।
কোনো ‘ট্যালেন্ট শো’র বিচারকের আসনে
কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে বক্তৃতাদানে
রাষ্ট্রীয় কোনো সভায়-
‘সৈয়দ ইকবাল প্রতিনিধিত্ব করবেন’
অধ্যক্ষের কলমী ফরমান
পরীক্ষা হলে নৈতিক দায়িত্বপালন
কখনোবা বিব্রতকর পরিস্থিতির আস্ফালন।
আমার সম্মুখে এখন সহকর্মীদের প্রিয়মুখ
আমির, হাকিম, জালাল, নজমুল,
বাসার, চন্দন, চিত্ত, বিভূতি, জাকির প্রমুখ।
দুই ‘রা’ কেটে চার ‘না’ করা দলে আমি
জাহানা, শাহানা, কল্পনা, রেহানা - প্রসন্ন সহকর্মী
আর ‘নাটের গুরু’ মুকতাদির স্যার
আড্ডা কিংবা সঙ্গীতাসর না জমে উপায় কী আর!
শতায়ূ অঙ্গন’এর প্রাত্যুষিক প্রহর
কুয়াশা ভেদ করা প্রভাতে হবিগঞ্জ শহর
সুলতান-মামদপুর থেকে রিচি অভিমুখ
রিজিকের সন্ধানে গ্রাম্যজনের শহরাভিমুখ।
আদালত পুকুরের স্বাগতিক হৃদ্যতা
দেহ-মনে জাগায় অনাবিল সজীবতা।
উমেদনগর খোয়াই ব্রীজে বৈকালিক গোল
মানুষ আর যানের ব্যস্ততম শোরগোল।
মাছুলিয়ায় খোয়াইপাড়ের কাব্যিক নির্জনতা
কাছে টানে খোয়াইয়ের নিরাবেগ বহতা।
‘বানিয়াচং সফর’ জমে উঠেছে বেশ
বাক্যবাণ আর রসিকতায় জমেছে আড্ডার পরিবেশ;
মুহাম্মদ আলী স্যার > মোর্তুজা স্যার > ইকবাল স্যার
এ হিসেবে আমি ‘নাতি প্রফেসার’
মুহাম্মদ আলী স্যার > মাজহার স্যার > মুকতাদির স্যার > ইকবাল স্যার
এ হিসেবে আমি ‘পতি প্রফেসার’-
এ নিয়ে হাস্যরোলে মশগুল এগারো প্রফেসার।
অতপর!
চোখ মেলে দেখি, ভুল, সবই ভুল -
আমি ছিলাম স্বপ্নের ঘোরে
আসলে দাঁড়ানো আমি এক অচেনা নগরে
যেখানে আমার প্রজন্মরা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন গড়ে
অথচ আমার সেই অতীতের মোড়ে
আজোও আনমনা সময় ফুরে।
[বৃন্দাবন = সরকারী বৃন্দাবন কলেজ, হবিগঞ্জ।
সুলতান-মামদপুর, রিচি, উমেদনগর, মাছুলিয়া = বিভিন্ন গ্রামের নাম।
বানিয়াচং = এশিয়ার সর্ববৃহৎ গ্রাম।
পতি প্রফেসার = পতি আঞ্চলিক শব্দ যার অর্থ প্রপৌত্র (প্রপৌত্র অধ্যাপক) ]
[বার্মিংহাম, ইউকে; ২৩ জানুয়ারী ২০১০]