বইয়ের নামঃ পথে দেখা বিদেশীনি
লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন
প্রকাশকঃ মুনা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারী ২০১২
মূল্যঃ ৮০ (আশি) টাকা মাত্র
Price: £5.00 (GBP)
যুক্তরাজ্য পরিবেশকঃ সঙ্গীতা লিঃ, ব্রিকলেন, লন্ডন।
১৮ জুন ২০১৩, বার্মিংহাম সাহিত্য পরিষদের ৭৫তম সাহিত্য আড্ডায় অগ্রজ প্রতিম ডঃ দেলোয়ার হোসেন আমার হাতে একটি বই তুলে দিয়ে বললেন - সমালোচনা করতে। বইটির নাম ‘পথে দেখা বিদেশীনি’। নামটি থেকেই বুঝা যায়, জীবন চলার পথে দেখা হয়েছে কোথাও কোন বিদেশিনীর সাথে। হয়তোবা এমনও হতে পারে যে, সে ছিলো লেখকের বা গল্পের পাত্রের ভ্রমণসঙ্গী; এবং বইটি পড়ে ঠিক তা-ই বুঝাও গেলো ।
মনের অজান্তে জেগে উঠা প্রেম কী করে যে দানা বাঁধতে থাকে দু’টি অপরিচিত সত্তায় - এমনই এক তরুণ প্রেমের কাহিনী এটি। উপন্যাসের আঙ্গিকে লেখা একটি চমৎকার গল্প। গল্পের মূল চরিত্র বিদেশী এক নারী। নাম তার ‘ফিওনা’। বাবা ‘জন’ এর সফরসঙ্গী হয়ে বেড়াতে বের হয়েছে নিজ দেশ আমেরিকা থেকে দেশান্তরে। বাবা নামকরা ‘আঁকিয়ে’ বা ‘আর্টিস্ট’। মেয়ে মাঝে মাঝে বাবার কাজে সাহায্য করে, কিংবা লোকেশন পছন্দ করে দেয়, আর বাবা এঁকে যান চমৎকার সব ছবি। আর পাত্র হচ্ছে বাংলাদেশী ছেলে ‘রিকি’। নামটি শুনতেই একটু হোঁচট খেতে হয় - এ আবার কেমন বাঙালি নাম? হয়তবা বাঙালি কোনো নাম ব্যবহার করলেই পাঠকের ভালো লাগতো। তবে লেখক অন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে তা চিন্তা করে এমন নাম দিয়ে থাকতে পারেন। বইটি পড়তে পড়তে এক সময় হারিয়ে যাওয়া যায় জীবনের স্মৃতি-বিস্মৃতির অতলান্তে। কখনো এর সাথে মিল খুঁজতে কিংবা এমনতর পরিস্থিতি হলে আমি কী করতাম - এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবেন পাঠক, এমনটাই স্বাভাবিক।
গল্পের পাত্র লণ্ডনে লেখাপড়া শেষ করে স্থলপথে যাচ্ছেন বাংলাদেশে, পথিমধ্যে বেড়িয়ে যাবেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। ট্রেন চড়ে যাচ্ছেন আর ঐ ট্রেনেই ফিওনার বাবার মাধ্যমে তার সাথে পরিচয়। এরপর নানা ঘটনা ঘটতে থাকে, একের পর এক। উভয়ের ঘটনা মোড় নিতে থাকে প্রেমের দিকে। বাকিটুকু না হয় পাঠকই আবিষ্কার করুন! প্রেম ছাড়াও গল্পটিতে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থানের নৈসর্গিক বর্ণনা, ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য নানা প্রেক্ষাপট। গল্পটি পড়তে পড়তে নিজের মনেও জেগে উঠবে বাসনা - আহা আমি জানি, কবে এসব মনোরম স্থান দেখতে যেতে পারবো!
এবারে দৃষ্টি দিই ভিন্ন দিকেঃ
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটি (জনৈক তরুণীর দেহের খণ্ডাংশ) বইয়ের মান অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে বলে মনে হয়। সরাসরি কোনো ছবি ব্যবহার না করে নারীমুখের স্কেচ বা অস্পষ্ট মুখায়বয়ব হলে, একে একটা গল্প বা উপন্যাস গ্রন্থ বলে সহজে প্রতীয়মান হতো। আজকাল বাংলা বানানের যদিও তেমন বালাই নেই তবুও যারা একটা রীতিতে অভ্যস্থ কিংবা নামকরা বৈয়াকণের বিধি অনুসরণ করেন তাদের চোখ প্রচ্ছদের ‘বিদেশীনি’ শব্দটি এড়াবে না; বলবেন বানানটি ‘বিদেশিনী’ হলে বরং ভালো হতো। এছাড়াও বইয়ের ভেতরে অনেক বানান ভুল লক্ষ্য করা যায়; যা কিনা বইটি পড়তে যেয়ে ক্ষণে ক্ষণে পাঠককে থামিয়ে দেয়। অবশ্য বানানের বিষয়টি যারা গায়ে মাখেন না, তাদের কোনো বিরক্তির কারণ হবে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। অজস্র বানানের মধ্যে কয়েকটি বানান একেবারেই মেনে নেয়া যায় না, যেমনঃ ভূল, ভ্রমন, মুহুর্ত, সুভাগ্য ইত্যাদি। (শুদ্ধরূপ হচ্ছেঃ ভুল, ভ্রমণ, মুহূর্ত ও সৌভাগ্য) এসব বানান একাধিকবার ভুল হওয়ায় মনে হয়েছে বইটি প্রকাশের আগে কোনো ‘প্রুফ রিডিং' বা ভুল-ত্রুটি খুঁজে দেখার কাজটি করা হয়নি। তাছাড়া, লেখক যেহেতু বিজ্ঞানের লোক, সে হিসেবে তার উদাসীনতাও অস্বাভাবিক নয়।
নায়িকার বর্ণনায় ‘ডানা কাটা পরী, বাঁধন হারা হরিণী’ ইত্যাদি উপমা ও কিছু প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার গল্পকে শ্রুতিমধুর করেছে। নায়িকার বয়স বার বার উল্লেখিত হলেও রহস্যজনকভাবে নায়কের বয়স হয়েছে লুকানো। আলোচ্য বস্তু, স্থান ও বিষয় বুঝাতে ‘উক্ত’ শব্দটির বারবার ব্যবহার - পাঠে ছন্দপতন ঘটিয়েছে। ‘চতুর’ ও ‘বিব্রত’ কথাগুলো সচরাচর নঞর্থক অর্থে ব্যবহৃত হলেও অজ্ঞাত কারণে লেখক এগুলোকে সদর্থক অর্থে ব্যবহার করেছেন।
নায়িকা যতই নায়কের কাছাকাছি আসতে চেয়েছে নায়ক ততই দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, ফলে মেয়েটির প্রতি পাঠকের মমতা উতরে পড়ার সম্ভাবনাই বেশী। একসাথে বেশ কিছুদিন ইস্তাম্বুলে কাটাবার পর রিকি আর ফিওনার সম্পর্ক কোনদিকে গড়ালো কিংবা গল্পের পরিণতি কী হলো - তা জানতে পাঠককে বইটি পড়ে নিতে হবে খুবই মনযোগের সাথে।
পরিশেষে বলবো, তারুণ্যের মাদকতা বা অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থেকে এক অমর প্রেম রচনায় লেখকের প্রয়াস ব্যর্থ হয়নি। বইটি পাঠককে আকৃষ্ট করবে সন্দেহ নেই। বইটির বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।
সৈয়দ ইকবাল
[অধ্যাপক, কবি ও অনুবাদক]